ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটে প্রথম গোপালগঞ্জের জিলহাজ


Desk report | Published: 2023-06-10 15:17:37 BdST | Updated: 2024-05-03 01:14:40 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন গোপালগঞ্জ শহরের লাল মিয়া সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মো. জিলহাজ শেখ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৯.২৫। এছাড়া মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএর ভিত্তিতে প্রাপ্ত নম্বরসহ মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯৮.৯১ পেয়ে তিনি মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

জিলহাজের প্রথম হওয়ার সংবাদটি জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তার শিক্ষক, বন্ধু ও সহপাঠীসহ পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জিলহাজকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অনেকে। এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফল ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, প্রথম স্থান অর্জন করা জিলহাজ গোপালগঞ্জ শহরের পুরান মানিকদাহ এলাকার ব্যবসায়ী মো. শহর আলী ও শিরিন আক্তার দম্পতির ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে জিলহাজ তৃতীয়। ছোটবেলা থেকেই জিলহাজ ছিলেন মেধাবী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়ও পেয়েছিলেন বৃত্তি। এরপর শহরের নামকরা এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ৪.৮৩ নম্বর পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে শহরের হাজী লালমিয়া সিটি কলেজ ভর্তি হয়ে মানবিক শাখায় জিপিএ -৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য জেলা শহরের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানের বিভিন্ন গাইড লাইন নিয়ে চলে ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটের মানবিক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণ করে জিলহাজ। গত বৃহস্পতিবার সি ইউনিটের ফল ঘোষণা করা হয়। এসময় মানবিক বিভাগের ৯৮.৯১ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে সে।

জিলহাজের বড় ভাই মিনহাজ শেখ বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা সবসময় ওর পাশে থেকেছি। আমার ভাইয়ের এতো বড় অর্জনে আমরা সত্যি খুব আনন্দিত। আমার ভাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের হয়ে কাজ করবে এটাই আমাদের চাওয়া।

জিলহাজের মা শিরিন আক্তার বলেন, আমি আমার ছেলেকে কখনো পড়াশোনার জন্য প্রেসার দেইনি। ওর ভর্তি পরীক্ষার আগেই আমি ওকে বলছিলাম যে তুই ভর্তি পরীক্ষায় পাস করবি। সেখানে আমার ছেলে প্রথম স্থান অর্জন করে এসেছে। এর চেয়ে খুশির আর কী হতে পারে।

এই ছাত্রের বাবা শহর আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলের পড়ালেখা নিয়ে কখনোই আমাদের চিন্তা করতে হয়নি। বছর শেষে দেখতাম সেরা হয়ে বাসায় এসেছে। আমার ছেলে এবারও তাই করেছে। প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ছেলের এতো বড় অর্জনে বাবা হিসেবে আমি খুশি। আমার ছেলের জন্য অনেক দোয়া থাকবে ও যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারে।

জিলহাজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার পড়াশোনার প্রতি প্রচুর আগ্রহ ছিল। প্রাথমিকে বৃত্তি পেয়েছিলাম। এসএসসিতে এসে রেজাল্ট একটু খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। শহরের সেরা কলেজ হাজি লাল মিয়া সিটি কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করি এবং সেখানে ভর্তিও হয়। সেখান থেকে জিপিএ -৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করি।

এরপর আমার মনোবল আরও বেড়ে যায়। চিন্তা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করি। আমার অনেক বন্ধুবান্ধব তখন ঢাকায় গিয়ে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমার মন কখনও চাইনি ঢাকায় গিয়ে কোচিং করি। পরে আমি এখানের একটি স্থানীয় কোচিং সেন্টারে ভর্তির প্রস্তুতি নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার এ অর্জনের সকল কতৃত্ব আমি আমার পরিবার, শিক্ষকসহ যারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য সাহস যুগিয়েছে তাদের দিতে চাই। সকলে কাছে দোয়া চাই আমি যেন পড়ালেখা শেষ করে দেশের জন্য কাজ করতে পারি।

হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজের অধ্যক্ষ পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, কলেজে পড়ার সময় ওর মেধা, ইচ্ছা শক্তি ছিল প্রবল। আমরা শিক্ষকরা ওকে সব সময় গাইড করেছি। পরীক্ষায় সে ভালো ফলাফল করেছে। ওর এই ফলাফলে আমরা শিক্ষকরা খুবই আনন্দিত এবং আমাদের কলেজ গর্বিত। জিলহাজের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো। ও যেন পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য কাজ করতে পারে।