‘আব্বুর মতো সৎ অফিসার হয়ে মানুষের উপকার করতে চাই’


Desk report | Published: 2023-06-13 23:06:51 BdST | Updated: 2024-05-03 03:49:12 BdST

‘আমি আমার আব্বুর মতো বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারে যোগ দিতে চাই। আমি আব্বুকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি মানুষের উপকার করতে। ফিল্ডে মানুষের উপকার করেন। আমি আব্বুর মতো সৎ অফিসার হওয়ার মাধ্যমে মানুষের উপকার করতে চাই।’

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করা সিয়াম আহমেদ। তিনি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের ছেলে।

সিয়াম আহমেদ বলেন, আমার শিক্ষাজীবন একটু বহুমুখী। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করা হয়েছে। শিক্ষাজীবনের শুরুটা নানা বাড়িতে। সেখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে ক্লাস থ্রি (তৃতীয়) পর্যন্ত পড়েছি। পরে বাবার (শামীম আহমেদ) পোস্টিংয়ের কারণে রাজশাহীর মোহনপুরে আসতে হয়। এই উপজেলার বাকশিমুইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি। তবে এই স্কুলে ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভের (পঞ্চম) মাঝখান পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তারপর আব্বুর বদলির কারণে গেলাম শাহাজাদপুরে। সেখানে মডেল পাইলট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাস ফাইভের সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন করি।

তিনি আরও বলেন, সেখানকার কিছু ক্লাসমেট ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ক্যাডেট কোচিংয়ে ভর্তি হই। ক্লাস সিক্সসে (ষষ্ঠ শ্রেণি) চলে যাই টাঙ্গাইলের শহিদ ক্যাডেট একাডেমিতে। সেখানে আবাসিকে ছিলাম এক বছর। সেখান থেকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেই। সেখানে আমার পড়াশোনার বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। ক্যাডেট কলেজে অ্যাডমিশনের জন্য যে বিষয়গুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলো আবার অ্যাডমিশন টেস্টে আসে। একই সিলিবাস। বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের যে বেসিকটা ক্লাস সিক্সে (ষষ্ঠ) তৈরি হয়েছিল। সেটা পরিবর্তীতে অ্যাডমিশন টেস্টে সাহায্য করেছে। কোচিং সম্পন্ন করার পরে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেই, আল্লাহর রহমতে সেখানে চান্স পাই। তারপর ক্লাস সেভেন (সপ্তম) থেকে টুয়েলভ (দ্বাদশ) পর্যন্ত ছিলাম কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে। আমার জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এই তিন পরীক্ষা কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ এ বছর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছি।

লেখাপড়ায় সফলতার বিষয়ে সিয়াম আহমেদ বলেন, আমার পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এই চার পরীক্ষায় আল্লাহর রহমতে বৃত্তি আছে। পিইসিতে ট্যালেন্টপুল। জেএসসি ও এসএসসিতে সাধারণ এবং এইচএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। আমি এসএসসি ও এইচএইসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। এছাড়া অ্যাডমিশনের কথা বলতে গেলে এইচএসসির পরে বেশি সময় থাকে না। মাত্র তিন থেকে চার মাস গড়ে সময় পাওয়া যায়। আমি যেহেতু মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী, সেহেতু আমার অ্যাডমিশন টেস্টের বিষয় ছিল বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা ও ভর্তির সুবাদে এই বিষয়গুলো আমার পড়া ছিল। অ্যাডমিশনের তিন-চার মাসে ওই বিষয়গুলো আমি রিভাইজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আরও অনেক নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। ওই বিষয়গুলো প্রতিদিন পড়ার মাধ্যমে ব্রেনে গেঁথে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। একটা জিনিস একদিন পরে আর দুই মাস পড়লাম না; বিষয়টা এমন না। একটা জিনিস আজ পড়লাম। তিন দিন পরেও সেই পড়াটা আবার পড়লে অনেক দিন মনে থাকে। এই কৌশল অবলম্বন করে আমি চলেছি। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন সম্পন্ন করেছি। রিভিশন দিয়েছি। এই কারণে মনে হয় আমার অ্যাডমিশন প্রস্তুতিটা অনেক ভালো ছিল।

তিনি বলেন, পড়ালেখা নিজের, তাই নিজেকে তেমন চাপ দিতে হয়নি। কারণ ক্যাডেট কলেজে ছিলাম। সেখানে সিস্টেমটাই এমন- যে সবাই পড়ছে। আমাকেও পড়তে হবে। ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার একটা সিস্টেম আছে। যে প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সবাইকে এক সঙ্গে ক্লাসরুমে গিয়ে পড়তে হবে। শিক্ষকরা এসে গার্ড দেন। সেখানেই আমাদের প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনই সম্পন্ন হয়ে যেত। তাই পড়ালেখা নিয়ে আমার তেমন কষ্ট করতে হয়নি। বাসায় ছুটিতে আসলে তেমন পড়ালেখা করতাম না। কলেজের পড়া কলেজেই সম্পন্ন হয়ে যেত। রেগুলারেটি মেইনটেন করার কারণে আমার তেমন কোথাও গ্যাপ পড়েনি।

সিয়াম আহমেদ আরও বলেন, ভালো ফলাফল করতে সবচেয়ে বড় বিষয় ডিসট্রাকশন (মনোযোগ নষ্ট করে এমন জিনিস) থেকে দূরে থাকা। এই যুগে সবচেয়ে বড় ডিসট্রাকশন হচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে এইগুলো থেকে যে আমি একদমই দূরে ছিলাম তা কিন্তু না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার থাকা অ্যাকাউন্টগুলো লগইন করেছি আপডেট পাওয়ার জন্য। তবে প্রতিদিন না। অ্যাডমিশনের সময়ে আমার স্মার্ট ফোন ব্যবহার কিছুদিনের জন্য বন্ধ রেখে ছিলাম। এ সময় একটা সাধারণ ফোন ব্যবহার করেছি। তবে আমি অনলাইনে পড়াশোনার সুবাদে ল্যাপটপে ক্লাস করেছি। আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লগইন করার সুযোগ ছিল, যেহেতু ফোন ছিল না, তাই একটু কঠিন হয়েছিল আমার জন্য। নিজের জন্য বিষয়টা কঠিন করে নেওয়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকা সহজ হয়েছে আমার জন্য।

পছন্দের বিষয়ে তিনি বলেন, জীবনের বেশির ভাগ সময় যেহেতু ক্যাডেট কলেজে কেটেছে- সেহেতু আমার পছন্দ-অপছন্দ ক্যাডেট কলেজকে ঘিরে। কলেজের সিডিউলের একটা অন্যতম পার্ট ছিল গেমস টাইম। প্রতিদিন যেমন পড়ালেখা মাস্ট ছিল। তেমনি খেলাধুলাও মাস্ট ছিল। খেলাধুলার সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে বাস্কেট বল খেলতাম। এই খেলাটা আমার ভালো লাগে। আমার মনে হয় খেলাধুলার একটা প্রভাব রয়েছে আমার পড়াশোনার ওপর। কারণ খেলাধুলা করলে মন ফ্রেস থাকে, শরীর সুস্থ থাকে এবং পড়ালেখায় ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া যায়। এতে করে অল্প সময় পড়ে বেশি মনে রাখা যায়। বেশি পড়া কভার করা যায়। আমার পছন্দের খেলা হচ্ছে বাস্কেট বল। আর পছন্দের খাবারের মধ্যে ক্যাডেট কলেজে যে সিডিউল ছিল। তার মধ্যে প্রতি বৃহস্পতিবার একটা স্পেশাল ডিনার দেওয়া হতো পোলাও, মাংস, চাইনিজ, ভেজিটেবল। সেটা সকল ক্যাডেটেরই প্রিয় খাবার। এটা আমারও প্রিয় খাবার ছিল।

নিজের স্বপ্নের বিষয়ে সিয়াম আহমেদ বলেন, আব্বু (শামীম আহমেদ) সরকারি চাকরিতে থাকায় তার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং হয়েছে। আব্বুর সঙ্গে আমারও বিভিন্ন জায়গায় মুভ করতে হয়েছে। অনেকেই বিষয়টা নেগেটিভলি নেয়, মানিয়ে নেওয়া কঠিন মনে করেন। তবে আমার কাছে বিষয়টা পজেটিভ মনে হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নতুন নতুন বন্ধু পেয়েছি। আমার নেটুওয়ার্কটা খবুই বড় হয়েছে। আমি বিষয়গুলো উপভোগ করেছি। আসলে স্বপ্ন বা জীবনের লক্ষ্য বলতে যেটা বোঝায়, সেটা মানুষ একটা পেশাকে নির্দিষ্ট করে ফেলেছে। তবে আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা আমি একটু অন্যভাবে ভাবতে পছন্দ করি। আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে জীবনে একটা ভালো মানুষ হওয়া এবং মানুষের উপকার করা। আমি যেই প্রফেশনে (কাজে) থাকি না কেন আমি যেন মানুষের উপকার করতে পারি।

সিয়ামের বাবা রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, সে (সিয়াম) লেখাপড়ায় ভালো। তার মানুষের উপকার করার মনমানসিকতা রয়েছে। সে একজন মানবিক মানুষ হোক। সে যেন মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারে এমন প্রত্যাশা করি। এছাড়াও সে আমার চেয়েও বড় অফিসার হোক এই প্রত্যাশা করি।