জবি ছাত্রকে কটুবাক্য বলা ওসি অনুতপ্ত


Dhaka | Published: 2020-04-17 01:34:30 BdST | Updated: 2024-05-07 23:06:23 BdST

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শফিকুল ইসলামকে কটুবাক্য বলে অপদস্থকারী ওসি অনুতপ্ত বলে জানা গেছে। তিনি শিক্ষার্থীকে ফোন দিয়ে তার বলা কথার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ক্যাম্পাস টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম।

এর আগে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) স্যার না বলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

গতকাল বুধবার বিকালে কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এসময় ওই শিক্ষার্থীকে ‘ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট হলো মাইগ্যা ডিপার্টমেন্ট, এখানে তো মাইগ্যারা পড়ে’ বলে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওই শিক্ষার্থীর।

জানা গেছে, ভবানীপুর এলাকার দুই বাড়িতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে লোকজন আসায় এলাকায় ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছিলো। এরপর এলাকা লকডাউন করার জন্য এলাকার লোকজন চেয়ারম্যানসহ নাজিরবাজার এলাকায় ইউএনও’র কাছে অনুরোধ করেন। এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী ইউএনও-কে স্যার না বলায় তার উপর চড়াও হন কলমাকান্দা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম। তিনি এসময় ওই শিক্ষার্থীকে জেরা করেন। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীর বিভাগ ‘ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট হলো মাইগ্যা ডিপার্টমেন্ট, এখানে তো মাইগ্যারা পড়ে’ বলে মন্তব্য করেন ওসি।

এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর একটি স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নিচে ওই শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

“এলাকায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে লোক আসায় সবার মধ্যে ভয় কাজ করছিলো। আমি বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবহিত করি কিন্তু কোন কাজ হয় নি। এভাবে দুই দিন পার হয়ে গেলো। এরপর এলাকার সবাই মিলে ওসিকে বিষয়টি জানাই। তিনি বললেন, ওয়ার্ডের মেম্বারের মাধ্যমে তাদের নাম, ঠিকানা পাঠানোর জন্য, অবশেষে আমরা তাও করি। পরব আমাদের এলাকায় দেখলাম ইউএনও, ওসি সবাই আসলো আমাদের বাজারে। তাই আমি স্বশরীরে বিষয়টি ইউএনও জানানোর জন্য কল দেই। তিনি আমাকে বাজারে যেতে বললেন।

আমি বাজারে গিয়ে ইউএনও-কে সালাম দিয়ে বললাম, আমিই কল দিয়েছিলাম। উনি ওসিকে ডেকে বললেন শুনেন কি বলে..
ওসিঃ কি সমস্যা?
আমিঃ আমাদের এলাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে লোক আসছে।
ওসিঃ তো কি হয়েছে?
আমিঃ আমি ইউএনও সাহেবকে কল দিয়েছিলাম। ওনি এখানে আসতে বলেছে।
ওসিঃ কাকে?
আমিঃ ইউএনও সাহেবকে।
ওসিঃ কাকে?
আমিঃ ইউএনও সাহেবকে?
ওসিঃ কোথায়?
আমিঃ গ্রামের নাম?
ওসিঃ পড়াশোনা?
আমিঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ওসিঃ কিসে পড়ো?
আমিঃ অনার্সে।
ওসিঃ কোন সাবজেক্ট? কোন ইয়ার?
আমিঃ ইসলামিক স্টাডিজ, ফাইনাল ইয়ার।

ওসিঃ ইসলামিক স্টাডিজে মাগিরা পড়ে। এটা তো মাইগ্যা সাবজেক্ট। এই সাবজেক্ট তো মাইগ্যাদের সাবজেক্ট (কথাগুলো কয়েকবার বলছে)। এছাড়া অকথ্য ভাষায় ডিপার্টমেন্ট নিয়ে গালিগালাজ করে। ওসি আরও বলেন, আর বেডা একটা বিসিএস ক্যাডারের সাথে কেমনে কথা কইতে হয় জানস না?

আমিঃ সরি, বুঝতে পারি নি।
ওসিঃ তোমাদের এলাকায় লোক কত জন?
আমিঃ লোক তো অনেক আছে। সংখ্যা তো নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।
ওসিঃ কত হবে?
আমিঃ ৭০০ এর মত।
ওসিঃ ৭০০ জন কি পারেনা ওদের বিরুদ্ধে কিছু করতে। কি পার তাইলে? ইত্যাদি।
তারপর আমি কিছু না বলে চলে আসলাম।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলমাকান্দা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ও তো আমাদেরই ছোট ভাই। আমি একটু রাগ হয়ে কথা বলেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু না।

তবে পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ফোন দিয়ে অনুতাপ প্রকাশ করেন অভিযুক্ত ওসি।  এবং  ওই শিক্ষার্থীকে চা-পানের নিমন্ত্রণ জানানো।