কোটি টাকার প্রতারণা করে আটক ঢাবির সাবেক ছাত্রী তূর্ণা


Dhaka | Published: 2020-07-25 00:44:04 BdST | Updated: 2024-05-02 21:07:34 BdST

প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সিআইডির কাছে আটক হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তূর্ণা আহসান। সিআইডির হাতে আটক ঢাবির ওই প্রাক্তন ছাত্রীর নাম রাহাত আরা খানম ওরফে তুর্ণা। তিনি তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১১-২০১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্রনেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজ এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

তুর্ণা হাসান যে গ্রুপের সাথে কাজ করতেন সে গ্রুপ কে সঙ্গে নিয়ে গত দুই মাসে এই চক্রটি প্রায় ৫-৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগটির সাবেক এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী কিংবা শিক্ষক; তুর্ণা সব সময় নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিত। তার সাথে সব মহলের সখ্যতা রয়েছে। ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ। এমনকি পুলিশেরও অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা ছিল তুর্ণার। তার বাবা বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী তুর্ণাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে সিআইডি কার্যালয়ে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল হায়দার।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা ফেসবুকে বন্ধুত্বের নামে অনেক লোকের কাছ থেকে দামি উপহারের লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি এই চক্র বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত নাইজেরিয়ার নাগরিকরা হলেন- নন্দিকা কেনেন্ট, ক্লেটাস আছুনা, ওইউকুলভ টিমটি, একিন উইসডোম, চিগোজি, ইভুন্ডে গ্যাব্রিল ওবিনা, স্যালেস্টাইন প্যাট্রিক, মর্দি ন্যামডি, ওরদু চুকওরদু সাম্মি, ডুবুওকন সোমায়ইনা, জেয়েরেম প্রেসিয়াস একমি, ওক উইসডম।

এ ছাড়া, রাহাত আরা খানম (২৭) নামের এক বাংলাদেশি নারীকেও গ্রেপ্তার করে সিআইডি। ওই নারী নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে জানায় সিআইডি।

.

সূত্র জানায়, ঢাবির সাবেক ছাত্রী তুর্ণা মূলত ভুক্তভোগীদের কাছে নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পার্সেলের শুল্ক বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যাংকে জমা দিতে বলতেন তিনি। গিফট গ্রহণ করা না হলে আইনি জটিলতারও ভয় দেখাতেন তুর্ণা।

মূলত প্রতারণার শেষ ধাপে কাজ করতেন রাহাত আরা খানম ওরফে তুর্ণা। চক্রটি প্রথমে বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করতেন। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে একটি ম্যাসেঞ্জার আইডি থেকে পার্সেল গিফট করার প্রস্তাব দেওয়া হত। পরে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমেই এই পার্সেল বুক করার এয়ারলাইন্স বুকিং ডকুমেন্টও পাঠাতো প্রতারকরা।

এসব গিফট বক্সে বহুমূল্য সামগ্রী রয়েছে, এমনকি কখনো কখনো উপহারের বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীকে জানানো হয়। তারা ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টম গুদাম থেকে সেগুলো রিসিভ করতে বলেন।

এরপরের কাজটিই করেন তুর্ণা। তিনি নিজেকে কাস্টমস কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের পার্সেল গ্রহণের শুল্ক পরিশোধের কথা বলতেন। টাকা না দিলে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলায় পড়ারও ভয় দেখাতেন ঢাবির এই প্রাক্তন ছাত্রী। এভাবে গত দুই মাসে এই চক্রটি প্রায় ৫-৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।