শিক্ষা ক্যাডারের স্থায়ীকরণ এবং পদোন্নতিতে জটিলতা


ঢাকা | Published: 2023-08-13 03:57:29 BdST | Updated: 2024-05-03 10:22:51 BdST

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অন্যতম বৃহত্তম ক্যাডার বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার। জাতি গঠন, দেশের শিক্ষাবিস্তার, গুণগত শিক্ষা এবং এসডিজি-০৪ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে শিক্ষা ক্যাডার। কিন্তু বিগত কয়েকমাস যাবত শিক্ষা ক্যাডারের ৩৩,৩৪,৩৫,৩৬ এবং ৩৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত মামলায় আটকে আছে।

এসব ব্যাচের কর্মকর্তারা পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং তাদের ৪ মাসব্যাপী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সফলতার সাথে সম্পূর্ণ করেছে। গতবছর ২২/১২/২০২২ খ্রিস্টাব্দ রাষ্ট্রপ্রতির একটি আদেশের মাধ্যমে ৫৯৪জন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ীকরণের আদেশ জারি হয়। যার ফলে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বহুদিনের স্বপ্নপূরণ হয়।

কিন্তু ৫৯৪জন কর্মকর্তা সকল যোগ্যতা অর্জন করার পরও প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-০১ ঢাকার এটি মামলা নং ৫৫২/২০২২, তাদের স্থায়ীকরণের উপর স্টে অর্ডার জারি করেছে। যার ফলে প্রাথমিকভাবে শিক্ষা ক্যাডারের ৫৯৪জন কর্মকর্তা পদোন্নতির লক্ষ্যে সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ২০০০ বিধিতে আত্মীকৃত ২৭জন শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-০১ এই স্টে অর্ডারের আদেশ জারি করেন। সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা-২০২৩ (ফেব্রুয়ারী) তে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-০১ এর স্টে অর্ডার থাকার কারণে আইনি জটিলতায় শিক্ষা ক্যাডারের ৫৯৪জন কর্মকর্তা ১ম পত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। পরবর্তীতে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-০১ সংশোধিত আদেশের মাধ্যমে ৫৯৪জন কর্মকর্তা ২য় এবং ৩য় পত্র পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ লাভ করেন। কিন্তু এতেও বিপত্তি স্টে অর্ডার! কারণ আদালতের স্টে অর্ডারের কারণে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন গত ২৩জুলাই সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ফলাফল স্থগিত করে রাখেন।

ফলশ্রুতিতে শিক্ষা ক্যাডারের ৫৯৪জন কর্মকর্তা নিদারুণ মানসিক কষ্টে সময় অতিবাহিত করছে। তাঁরা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে আতঙ্কিত। স্টে অর্ডার থাকার কারণে একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা চাকরি স্থায়ীকরণ, পদোন্নতিসহ নানাবিধ আইনি জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি একই আদালত ২৯৩ জন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর(মাউসি) কর্তৃক প্রণীত ফিটলিস্টে স্টে অর্ডার দিয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ২৯৩ জন কর্মকর্তা সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা শিক্ষা ক্যাডারের জুনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

ভুক্তভোগী একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেছেন "তাঁরা তাদের স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চায়। কারণ তারা পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে জয়েন করেছেন। চাকরি স্থায়ীকরণের সকল শর্ত পূরণ করেছেন।এই মামলার তাঁরা নিরপরাধ ভিক্টিম। যদি কেউ প্রাকৃতিক কারণে কিংবা অস্বাভাবিক কারণে মৃত্যুবরণ করেন তখন উক্ত কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ীকরণ হয়নি বলে বিবেচিত হবে। একইসাথে গৃহনির্মাণ ঋণসহ উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে পদোন্নতি পাবার সকল ধরনের শর্ত পূরণ করার পরও শিক্ষা ক্যাডারের ৩১,৩২,৩৩,৩৪,৩৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা গ্রেড -৬ /পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তাই অনতিবিলম্বে এই মামলা নিষ্পত্তি এবং পদোন্নতির জটিলতা নিরসনকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগ চান এসব শিক্ষকরা।