স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে জলবায়ু সচেতনতায় জলবায়ু ক্লাব


Dhaka | Published: 2023-08-16 14:55:45 BdST | Updated: 2024-05-03 13:29:47 BdST

পৃথিবীর পরিবেশ নিরবে-নিভৃতে বিলাপ করছে। মানুষের নির্বিচার আচরণে পরিবেশ হয়ে পড়েছে রুগ্ন-ভগ্ন কোনো বৃদ্ধের মতো, যেন তাকে দেখার কেউ নেই। ভগ্ন শরীরে সে আর কতোটা পথ আগাবে একাকি!  রুগ্ন পরিবেশের প্রভাব এসে পড়ছে মানুষের নিত্য জীবনযাত্রায়। পরিবেশের প্রতি মানুষের অযাচিত আচরণের ফলে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু। পৃথিবী হয়ে উঠছে উত্তপ্ত, বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা। বিশ্বে ভয়াবহভাবে এগিয়ে আসছে বন্যা-খরা সহ নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ।  

বাংলাদেশে একটি আর্দ্র, উষ্ণ জলবায়ু রয়েছে যা প্রাক-বর্ষা, বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী সঞ্চালন দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং প্রায়শই ভারীবৃষ্টিপাত এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতি বছর বাংলাদেশেদুর্যোগ আঘাত হানে। এছাড়াও, সাম্প্রতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড এবং কোভিড মহামারীও পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর একটি ফল।

যদিও দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে, তবুও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে এবং সরকারের একার পক্ষে সম্পূর্ণ নিরশন করা কঠিন। এর জন্য সমাজের সকল স্তরের লোকেদের এগিয়ে আসা উচিত এবং অংশগ্রহণ করা উচিত, স্থানীয় সম্প্রদায়ের শিক্ষা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে যা সবাইকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ যুবক (যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর)। যদি তরুণ প্রজন্মকে জলবায়ু শিক্ষা এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধার কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তবে তারা ভবিষ্যতে দেশ যে অনিবার্য সংকটের মুখোমুখি হবে তা মোকাবেলা করার জন্য ভালোভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

পরিবেশের এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত মানুষ। মানুষ সচেতন হলে এবং পরিবেশের সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় না। এই সচেতনতা তৈরি হওয়া দরকার গোড়া থেকেই। তাই প্রয়োজন বিদ্যালয় বা স্কুল থেকেই সচেতনতার সূচনা করা। সেই লক্ষ্য থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং (Global Center for Innovation and Learning (GCFIL), USA) বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য জলবায়ু সচেতনতা কর্মসূচি শুরু করেছে। আর এই কর্মসূচির চূড়ান্ত রূপ হিসেবে  স্কুলে স্কুলে তৈরি করে দিচ্ছে জলবায়ু ক্লাব। 

জলবায়ু ক্লাব হলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের একটি দল, যারা তাদের অর্জিত দক্ষতার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, বৃক্ষ রোপণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্কুল এবং তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অধিক দায়িত্বশীল হবে। এটি মূলত অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম, যাতে তারা পরিবেশগত ঝুঁকি হ্রাসের জন্য স্ব-প্রণোদিত হয়ে ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি কিশোর এবং তরুণদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং যুব নেতৃত্বের বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কিশোর ও তরুণদের দ্বারা গঠিত এবং পরিচালিত। ক্লাবের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বের বিকাশ, দলগত দক্ষতা, ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা, চিন্তা-চেতনার বিকাশ, সচেতনতা সৃষ্টি, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনযাত্রার মান বিকাশ করে। বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার মাধ্যমে তারা পরবর্তীতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়  এবং কর্মজীবন জলবায়ু ও পরিবেশন সচেতন নাগরিক হিসেবে তৈরি হবে। 
জলবায়ু ক্লাবের উদ্দেশ্য হলো, পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি করা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা, শিক্ষার্থীদের তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে আরো জানার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং স্কুল এবং সম্প্রদায়ের পরিবেশগত কার্যকলাপে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, পরিবেশগত সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক এবং জীবন দক্ষতার উন্নয়নসহ সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো,শিক্ষার্থীদের পরিবেশগত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং অসংগতি পরিবর্তনে ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে, শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত হওয়ার সুযোগ প্রদান করা,পরিবেশগত সচেতনতা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি সুষ্ঠু পরিবেশগত নীতি গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং কাজ করার জন্য নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো এই ক্লাবের ও কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। 

জলবায়ু ক্লাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থেকে নেতৃত্ব চর্চা করছে। প্রত্যেকে তারা ক্লাইমেট লিডার বা জলবায়ু নেতা হিসেবে প্রস্তুত হবে, যারা ভবিষ্যত বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে টেকসই ও পরিবেশ সম্মত ও সুবজ দেশ হিসেবে। এই শিক্ষার্থীরা জলবায়ু নিয়ে পাঠচর্চা করে, উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক আয়োজন, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, সভা-সেমিনার, জলবায়ু সামিট সহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে নিজেদের বৈশ্বিক পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে। 

মিরপুর ল্যাবরেটরী গার্লস ইনস্টিটিউট জলাবয়ু ক্লাব গঠনের মধ্যদিয়ে প্রথম এই যাত্রার সূচনা হয়। পরবর্তীতে যাত্রা করেছে শের-এ বাংলানগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় জলবায়ু ক্লাব এবং গত ১৪ আগস্ট যাত্রা শুরু করেছে তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় জলবায়ু ক্লাব।

এভাবে ক্রমান্বয়ে ঢাকার প্রায় সকল স্কুল এবং তারই ধারাবাহিকতায় দেশের সকল স্কুলে জলবায়ু ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে জলবায়ু প্রতিরোধে বিস্তৃত কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং(জিসিএফআইএল)। প্রতিষ্ঠানটির এমন সময়োপযোগী উদ্যোগকে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকা সাধুবাদ জানিয়ে এই ক্লাবকে তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জলবায়ু ও পরিবেশ সচেতন করতে দায়িত্ব গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবেশ সচেতনতায় এমন একটি ক্লাবের অংশ হতে পেরে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তারা ভবিষ্যতকে পরিবেশসম্মত ও সুন্দর করে তুলতে চায়। এই ক্লাব পরিচালনার মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে জলবায়ু নেতা হিসেবে তৈরি করতে চায়। 

জলবায়ু ক্লাব গঠনে এগিয়ে আসতে চাইলে গ্লোবাল সেন্টার  ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং এর ওয়েবসাইট (gcfil.us) কিংবা অফিসিয়াল মেইল [email protected] এ যোগাযোগের জন্য আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এটি মূলত অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ ও উন্নয়ন কার্যক্রম, যেখানে সকল শ্রেণির প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এই উদ্যোগের সহযোগি হতে পারেন।