বই মানুষের সময় কাটানোর অন্যতম উপায়। মানুষকে আনন্দ দেয় বই আর তাই অবসর সময়ে যাদের বই পড়ার মতো চমৎকার অভ্যাস আছে, তারাই হচ্ছে প্রকৃত ভাগ্যবান। তো বন্ধুরা দেখে নেই বইগুলো।
১.তালিকার প্রথমেই আছে মিগেল দে থের্ভান্তেস সাভেদ্রা এর লেখা ডন কুইক্সোট। বইটি প্রকাশিত হয় 1605 খ্রিস্টাব্দে। এখন পর্যন্ত বইটির 500 মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। বইটি স্প্যানিশ ভাষায় লেখা। ডন কুইক্সোট উপন্যাসটিকে বলা যায় স্পেন সাহিত্যের সবচাইতে বিখ্যাত উপন্যাস হিসাবে। কিছুটা কমিক কিছুটা ট্র্যজিডিধর্মী এই উপন্যাসটি ১৭ শতাব্দীর স্পেনীয় সমাজের চিত্র তুলে ধরেছে।
মুল চরিত্রটি একজন বর্ষীয়ান আদর্শবাদী নাইটের যিনি তার পুরানো ঘোড়া আর তার সঙ্গি সানচো পাঞ্জাকে নিয়ে বের হন এডভেনচারে।
মুলতবর্ষীয়ান এই গ্রাম্য ভদ্রলোক চিভারলি বইগুলো পড়তে পড়তে বইগুলোতে ঘটে যাওয়া অসম্ভব ঘটনাগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করেন। বইগুলোর প্রতিটি শব্দ তার কাছে মনে হতে লাগল সত্য । নিদ্রাহীনতা, ক্ষুদা আর বেশি পড়াশুনায় একসময় ভদ্রলোকের মতিবিভ্রম ঘটে। একসময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন নাইট হিসাবে এডভেনচারে খোজে বেরিয়ে পড়ার।ডন কুইক্সোট তার নিজস্ব এই কল্পনার জগত গড়ে তুলেছিলেন অতি নিষ্ঠা আর যত্নের সাথে।
নিজের গ্রাম লা মনচাতে একসময় ফিরে যান এই নায়ক। মানসিকভাবে সুস্থ্য হওয়ার পর চিভারলির সাথে তার সব সম্পর্কের অবসান ঘটান। এবং একমাত্র তার মৃত্যুশয্যায় তার অতীত এডভেনচারের নিরবুদ্ধিতার কথা আর নিজের পাগলামীর কথাস্বীকার করেন।
২.তালিকার দুই নাম্বারে যে বইটি রয়েছে সেটি হলো A Tale of two cities। বইটি লিখেছিলেন charles dickens। ইংরেজিতে লেখা এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1859 সালে। বইটি এখন পর্যন্ত 200 মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছে।আ টেইল অব টু সিটিজ চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত ঐতিহাসিক উপন্যাস।ফরাসি বিপ্লব পূর্ব নৃশংসতা ও বিপ্লব পরবর্তী সামাজিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে রচিত এর পটভূমি।ফরাসি বিপ্লব পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ,সম্প্রসারণবাদ,শোষণ ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়।
পুরো উপন্যাসটি জুড়ে ফরাসী বিপ্লবের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা ব্যাপ্ত হয়ে আছে যেখানে মূল গল্প ডা.ম্যানেট,লুসি,চারলস ডারনে ও সিডনি কার্টনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে।পটভূমির প্রতি দৃষ্টি দিলে আমরা শুধু মাত্র বিশৃঙ্খলার আঁচ পাবো কিন্তু এই আঁচের মাঝেও ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে গেছে মূল চরিত্রগুলো।শৈল্পিক ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী যার যবনিকা ঘটেছে লন্ডন এবং প্যারিসে।
৩.তালিকার পরের অবস্থানেই রয়েছে যে বইটি তার নাম দ্য লর্ড অব দ্য রিংস। বইটির লেখকের নাম যে আর আর talking। ইংরেজি ভাষায় লেখা এই বইটি বের হয় 1955 সালে। এই বইটি এখন পর্যন্ত 150 মিলিয়নেরও বেশি বিক্রয়ের রেকর্ড করেছে।
ইংরেজ কবি টলকিন ব্যাক্তিগত জীবনে একজন ভাষাতাত্ত্বিক ছিলেন; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করেন বহুবছর। মূলত এ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষা নিয়ে কাজ করেন তিনি এবং পরে ইংরেজি লিটারেচার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেন। শখের বসে লেখালেখি; তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি তার "হবিট" উপন্যাসের জন্যে। ভাবতে অবাক লাগে যে মানুষ এত কল্পনা মিশিয়ে গল্প লিখতেন তিনি'ই কি না প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ আর্মির পক্ষে অস্ত্র হাতে তুলে নেন। ২০০৮ সালে 'টাইম' ম্যাগাজিন সেরা ৫০ ইংরেজি লেখকদের মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রাখে টলকিন কে। তিনি একজন নাইট উপাধি প্রাপ্ত লেখক; যদিও স্যার বলে ডাকা তিনি মোটেও পছন্দ করেন নি। “লর্ড অব দ্য রিংগস” মূলত "হবিট" এর সিক্যুয়েল। উপন্যাস না বলে মিথ বা মহাকাব্য বলা ভালো। সম্পূর্ণ উপন্যাস ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে লেখা, একটু একটু করে অনেক বিশাল আকৃতি পায়। মুভির মত উপন্যাস'ও কিন্তু তিন খন্ডে প্রকাশিত হবার কথা ছিলো। যদিও প্রথমে তিনি চেয়েছিলেন একখন্ডে সমাপ্ত করতে, কিন্তু মধ্য যুগ তাকে এমন নেশাতে নিয়ে যায় যে আলাদা একটা জগৎ সৃষ্টি করে ফেলেন তিনি। লেখা শেষ হবার পরে আরেক যন্ত্রনা; যুদ্ধের ফলে কাগজের অভাব। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয় এক সাথে তিনখন্ড। সৃজনশীলতা আর কল্পনা শক্তির বিস্ময়কর মিশেল “লর্ড অব দ্য রিংগস”।
৪.এরপরে যে বইটির কথা আমরা বলব এই বইটির নাম হচ্ছে The little prince বইটির লেখক আন্তোইন দি সেইন্ট জুঁপেরী । ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা এই বইটি 1943 সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এ পর্যন্ত 140 মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে।
ধারনা করা হয়, এই বই হচ্ছে ফ্রেঞ্চ ভাষার সবচেয়ে বেশি পঠিত ও অনুদিত বই। ফ্রান্সে ভোটের মাধ্যমে বিংশ শতাব্দির সবচেয়ে সেরা বই নির্বাচিত হয়েছিল এটি। এ পর্যন্ত ২৫০ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং মোট বিক্রির পরিমান প্রায় ১৪০ মিলিয়ন কপি!
ডিসেম্বর ৩০, ১৯৩৫ সালে আন্তোইন দি সেইন্ট জুঁপেরী অর্থাৎ এই বইয়ের লেখক তার বিমান নিয়ে সাহারা মরুভূমিতে দূর্ঘটনায় পড়েন। তার সাথে ছিলেন আন্দ্রে রিভট। তারা রেইড নামে একটা রেসে ছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল পূর্বের একটা স্পিড রেকর্ড ভাঙ্গা এবং ১৫০০০০ ফ্রাংক পুরস্কার জেতা। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সেটা সম্ভব হয় নি। প্লেন ক্র্যাশ করে এবং সৌভাগ্যজনকভাবে তারা বেঁচে যান।
কিন্তু বেঁচে গিয়ে পড়লেন আরো বিপদে। জনশূন্য মরুভূমিতে খাদ্য এবং পানিবিহীন। প্রচন্ড সূর্যতাপে পানিশুন্যতা দেখা দিল। তাদের বিভিন্ন ধরনের হ্যালোসিনেশন শুরু হল। সৌভাগ্যক্রমে চতুর্থ দিনে একদল যাযাবর বেদুঈনের কাফেলা তাদের দেখা পায় এবং সেই বিশাল নিষ্ঠুর মরুভূমি থেকে উদ্ধার করে।
এই ছোট উপন্যাসের মূল কাহিনী একজন বৈমানিক যিনি প্লেন ক্র্যাশ করে সাহারা মরুভূমিতে গিয়ে পড়েন। তা মূলত জুঁপেরীর নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে।
৫.তালিকার পাঁচ নম্বরে থাকা বইটি হচ্ছে জনপ্রিয় লেখিকা জে কে রাওলিং এর দুনিয়া সাড়া জাগানো বই harry porter and the philosopher's stone। বইটি 1997 সালে বের হয়ে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করেছে 120 মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি রেকর্ড।
ভাবতে অবাক লাগে একসময় জে.কে. রাউলিং এই হ্যারি পটার গল্পটিকে নিয়েই প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কেউ তার গল্পটিকে ছাপাতে চায় নি। অথচ সেই ‘হ্যারি পটার’ই জয় করলো পুরো বিশ্ব।
হ্যারি পটার হলো জে কে রাউলিং এর তৈরী একটি কাল্পনিক চরিত্র। এখানে হ্যারি একজন জাদুকর। কাহিনীর পটভূমি হচ্ছে হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচক্র্যাফট এন্ড উইজার্ডরি যেখানে হ্যারি তার কাছের বন্ধু রন ওয়েজলি ও হারমায়োনি গ্রেঞ্জারের সাথে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নেয়। তার চেহারা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে তার কপালে বিদ্যুত চমকের মত কাটা দাগ, যা স্কার নামে পরিচিত। লর্ড ভোলডেমর্ট যখন হ্যারিকে মারতে আভাডা কেডাভ্রা নামক অভিশাপ দিয়েছিল তখন হ্যারির কপালে এই দাগ সৃষ্টি হয়েছে। ভোলডেমর্ট হ্যারির বাবা-মাকে হত্যা করেছে। যা বিশ্বে হ্যারিই একমাত্র ব্যক্তি যে আভাডা কেডাভ্রা নামক মৃত্যু অভিশাপ থেকে বেঁচে গেছে। এর ফলে লর্ড ভোলডেমর্টের পতন হয়েছে।