১৫০ বছরে চট্টগ্রাম কলেজ


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2019-01-03 11:49:50 BdST | Updated: 2024-05-15 13:09:37 BdST

দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজ ১৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকার কলেজ রোডে প্রায় ২০ একর জমির ওপর এটি অবস্থিত। গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য নিয়ে ১৫০ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠান মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পেয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চারবার দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ কলেজের খেতাব। এ কলেজ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে এর পরিধি আরও বেড়েছে। ১৫০ বছরের লালিত চট্টলার এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সর্বত্র জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের কলেজ রোডের পাশে প্যারেড গ্রাউন্ডের এক কোণে একটি পর্তুগিজ আমলের স্থাপনায় এ কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিখ্যাত চট্টগ্রাম কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৩৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা স্কুল হিসেবে। তার ৩৩ বছর পর ১৮৬৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। সেই থেকে এর নামকরণ করা হয় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ। পরে তা চট্টগ্রাম কলেজ হিসেবেই বেশি পরিচিতি লাভ করে।

একটি পর্তুগিজ আমলের স্থাপনায় এ কলেজের কার্যক্রম শুরু হলেও কলেজে উন্নীত হওয়ার পরে জেসি বোসের প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯০৯ সাল কলা বিভাগের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়। ১৯১০ সালে এ কলেজটি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণির ডিগ্রি কলেজের স্বীকৃতি লাভ করে। গণিত, রসায়ন বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ের পাঠদান শুরু হলেও ১৯১৯ সাল থেকে স্নাতক শ্রেণির বিষয়গুলোয় ইংরেজি এবং সম্পূরক শ্রেণিতে দর্শন এবং অর্থনীতি যোগ করা হয়।

১৯৫৫ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে কলেজের ব্যাপক হারে অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে এর বিজ্ঞান গবেষণাগারের উন্নয়ন সাধন, নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান অনুষদের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত হয়। ১৯২৪ সালে এ কলেজে প্রথম মুসলিম অধ্যক্ষ হয়েছিলেন শামসুল ওলামা কামাল উদ্দিন। তার পরিচালনার সময়ে চট্টগ্রাম কলেজ দ্রুত উন্নতি লাভ করে। তিনি ওই সময়ে কলেজ ম্যাগাজিন প্রকাশ করার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং ১৯২৬ সালে কলেজের প্রথম ছাত্রাবাস শেরেবাংলা একে ফজলুল হক মুসলিম হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে ১৯৫৫ সালে স্নাতক শ্রেণির সব বিষয় প্রত্যাহার করা হলেও ১৯৬০ সাল থেকে আবার ইংরেজি, বাংলা, অর্থনীতি, পদার্থ, রসায়ন এবং গণিতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির বিষয়গুলো চালু করা হয়।

১৯৬২ সাল থেকে প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা এবং পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণি চালু করা হয়। এখানে মানবিক এবং বিজ্ঞান বিষয়ে ২০টি বিভাগ রয়েছে অধ্যয়ন করার জন্য। বর্তমানে এটি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিক সনদের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, গণিত, পরিসংখ্যান, ভূগোল, ইতিহাস, রাজনীতি বিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান এবং সনদ প্রদান করে থাকে।

প্রতিদিন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং স্বনামধন্য এ চট্টগ্রাম কলেজ। প্রায় ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী, ১৭টি অনার্স, ১৮টি মাস্টার্স বিষয়সহ ডিগ্রি (পাস) ও উচ্চমাধ্যমিক কোর্সে অধ্যয়নরত। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ কলেজের ১৫৭ শিক্ষক নিরলস পরিশ্রম করে নিজের সন্তানের মতো ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করছেন। এছাড়া দেড় শতাধিক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কাজ করে চলেছেন এ কলেজে। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ স্বপ্নের কলেজে লেখাপড়ার করা জন্য।

কলেজের অভ্যন্তরেই আছে বিশালাকৃতির ঐতিহাসিক প্যারেড মাঠ। মাঠের এক কোণে আছে একটি জিমনেসিয়াম, শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে আছে তিনটি ছাত্রাবাস এবং দুটি ছাত্রীনিবাস। এগুলো হলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস, শের এ বাংলা ছাত্রাবাস, ড. আবদুস সবুর ছাত্রাবাস, হজরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.) ছাত্রীনিবাস এবং নতুন একটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হয়েছে, যার নামকরণ করা হবে ‘শেখ হাসিনা’ ছাত্রীনিবাস। বর্তমানে প্রশাসন সব আবাসিক হোস্টেল বন্ধ রেখেছে। চট্টগ্রাম কলেজ স্বনামধন্য গ্রন্থাগারটিও ঐতিহ্য বহন করে। এ গ্রন্থাগারে সংগৃহীত বানিয়ানের পিলগ্রম প্রগ্রেসের এক কপি বই থেকেই পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এ গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক।

,

চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান বলেন, আমি নিজেই চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ছিলাম। এ কলেজের ছাত্র হয়ে আমি নিজেই গর্ববোধ করি। এ কলেজে অধ্যয়ন করেছে আমাদের পরিবারের চার প্রজন্ম। এ কলেজে আমি পড়েছি, আমার মেয়ে পড়েছে, আমার বাবা এবং দাদাও পড়েছিল। এ কলেজে অধ্যয়ন করে ছাত্রছাত্রীরা দেশে এবং দেশের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কলেজের নবীন-প্রবীণদের নিয়ে একটি মিলনমেলার আয়োজন করার প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। ১৫০ বছরের স্মৃতি নিয়ে ম্যাগাজিনের কাজ শেষ পর্যায়ে।

চট্টগ্রাম কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মিরাজ উদ্দিন বলেন, ১৫০ বছরে পদার্পণ করছে আমাদের চট্টগ্রাম কলেজ। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই কলেজে। একই বর্ষের কাজী আজহারুল ইসলাম শুভ বলেন, মাস্টার্স শেষ হলেই এ কলেজের মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে গর্ববোধ করি- আমি ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কলেজে অধ্যয়ন করেছি।