ডিআইইউতে দশ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, তিন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ


Rakibul Islam | Published: 2024-04-08 15:28:33 BdST | Updated: 2024-04-30 04:00:31 BdST

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ১০ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনায় তিন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৮ এপ্রিল) ডিআইইউসাস'র সভাপতি কালাম মুহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা দেয়া হয়। এর আগে ইউজিসির সাথে বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাৎ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ সাংবাদিক নেতারা।

অভিযোগপত্রে ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৩ তারিখে এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করার দায়ে দশ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাময়িক এই বহিস্কারাদেশে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করার অভিযোগ আনেন। পরবর্তীতে আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত সময়ে এই শোকজের জবাব দেই। এবং আমাদের বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগের সত্যতা চ্যালেঞ্জ করি৷ পরবর্তীতে গত ২৪ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের প্রথম শুনানির জন্য ডাকে৷ আমরা যথাসময়ে উপস্থিত হলে আমাদের চাপ প্রয়োগ করে মুচলেকায় সই দিতে বলে৷ শুনানির আগেও আমাদের ভুক্তভোগীদের একাধিকবার সরাসরি ফোনে এবং পরিবারকে কল দিয়ে স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিলসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়৷ প্রথম শুনানিতে তারা আমাদের আবারও হেনস্তার করতে এক এক করে তদন্ত কমিটির সামনে ডাকতে চাইলে আমরা সম্মিলিতভাবে উপস্থিত হবার এবং কথা বলার লিখিত ও মৌখিক আবেদন করি৷ কিন্তু আমাদের আবেদন নাকচ করে আবারও তারা আমাদের মানসিকভাবে হেনস্তা করে৷ পরবর্তীতে গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় শুনানির জন্য আমাদেরকে আবারও উপস্থিত হতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানেও আমরা যথাসময়ে শুনানিতে উপস্থিত হই। কিন্তু তারা এক্ষেত্রে আমাদের আবারও মানসিকভাবে হেনস্তা করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা লিখিতভাবে আবেদনে আবারও সম্মিলিতভাবে জবাব দেবার অনুরোধ করি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরেক দফা বহিষ্কারাদেশ বাড়িয়ে আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করে। এতে করে আমাদের অনেকের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এছাড়া এসময় আমাদের অভিভাবকদেরকে ফোন দিয়ে নানাভাবে হয়রানি ও স্থায়ী বহিষ্কারের হুমকি দিতে থাকে এবং নানা চাপ প্রয়োগ করে৷

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ইউজিসিকেও জানানো হয়েছে। ইউজিসিও বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ঘটনায় শোকজ দেয়৷ কিন্তু শোকজের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হবার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা ইউজিসি কোন সুরাহা করেনি বরং ঘটনাকে আরও বিলম্ব করছে৷ ফলে আমরা মানসিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হই৷ এছাড়া কোন অপরাধ প্রমানিত না হলেও সাময়িক বহিস্কার হওয়া এসব শিক্ষার্থীদের দুইজনকে মাস্টার্সে ভর্তি করানো হবেনা বলেও বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ এদিকে সাংবাদিকতায় জড়িত এসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যে প্রনোদিত বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে আমাদের সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয় করে৷

আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়কে সাংবাদিকতাশুন্য করা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চায় বাঁধাসহ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করায় উদ্দেশ্যেপ্রনোদিতভাবে এসব শিক্ষার্থীদের বাক-স্বাধীনতা হরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উঠে পড়ে লেগেছে। টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজিপিএ বিক্রি, নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, দুর্নীতি অনিয়মসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জেরেই তারা ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা নিষিদ্ধ করার এ পাঁয়তারা করছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন ও রেজিস্ট্রার (ইনচার্জ) মো. আবু তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত দশ শিক্ষার্থীকে সাময়িক এ বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা। এতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় দেশের প্রায় অর্ধশত সংগঠন।