অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর, মামলা


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2018-06-30 16:21:19 BdST | Updated: 2024-05-02 16:20:56 BdST

পাবনায় ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খানকে মারধর ও কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ জুন) আবদুস সবুর খান বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

ওই মামলায় ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি, সাধারণ সম্পাদক সুমন দাস এবং কলেজ শাখার সভাপতি খন্দকার আরমান ও সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হাসানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে গত ২৭ জুন থেকে এইএসসি ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগ নেতারাসহ ৩০ থেকে ৪০ জন প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে প্রসপেক্টাসের জন্য আদায় করে দিতে বলেন। তাঁদের দাবি না মানায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাকিবুল হাসান রনি, সুমন দাস, খন্দকার আরমান ও সাব্বির হাসানসহ তাঁদের ক্যাডার বাহিনী অধ্যক্ষের কক্ষে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় সিসি টিভি, টেবিলের কাঁচ, দরজা-জানালাসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। অধ্যক্ষসহ উপস্থিত শিক্ষকদের মারপিট ও অধ্যক্ষকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুরালী মোহন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি মূলত ভর্তির দায়িত্বে থাকার কারণে মারপিটের সময় ছিলাম না। তবে পরে এসে দেখি অধ্যক্ষ স্যারের রুমে ভাঙচুর ও তাণ্ডব।’

কলেজের উপাধাক্ষ্য আবদুল জলিল এই ঘটনার নিন্দা ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এর বিচার হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আবদুল জলিল আরো বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্যার একজন ডক্টরেট করা মানুষ তাঁর গায়ে হাত তুলতে নিষেধ করায় আমার গলা ধরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে এখানে আছি। আমরা কারো কিছু বলতেও পারছি না, সহ্যও করতে পারছি না।’

অভিযোগ অস্বীকার করে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার আরমান বলেন, স্যাররা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি করেন। সম্প্রতি ভর্তি ও ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছিলেন। আমরা এর প্রতিবাদ করলে শিক্ষকরা আমাদের উপর চড়াও হয় এবং সামান্য কথাকাটাকাটি হয় মাত্র। এখানে চাঁদা দাবির তো কোনো প্রশ্নই আসে না।

ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডার কথা স্বীকার করলেও মারপিটের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে কথা বলার সময় স্যারদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। শিক্ষকরা যদি এই ধরনের অপকর্ম করতেই থাকে তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে যাব বলেও জানান তিনি।

ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবদুস সবুর খান বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধাদান, জীবনের নিরাপত্তা, চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আমি ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি। আমি কোনো প্রকার অন্যায় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নেই।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সবুর খান বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

গত বছরের ২৯ নভেম্বর পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ভূমিমন্ত্রীপুত্র তমালের এই ক্যাডার বাহিনীর হামলার শিকার হয় পাবনার চার সাংবাদিক। তাঁরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ছাত্রলীগ নেতারাও তাঁর অনুসারী বলে জানা গেছে।

এসএম/ ৩০ জুন ২০১৮