এ মাসেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি


Dhaka | Published: 2020-02-16 06:50:41 BdST | Updated: 2024-05-12 09:35:19 BdST

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতই সকল ইউনিটের কমিটি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটিও দ্রুত দেয়া হবে।’ কবে দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ মাসেই আমরা কমিটি ঘোষণা করব।’ তবে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করেননি তিনি।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বর্ণিল ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬২- এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬- এর ছয় দফা, ’৬৯- এর গণ-অভ্যুত্থান; প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য।

জাতীয় যেকোনো সংকটকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবদান কম নয়। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ও সুপার ইউনিট হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে এটি। এতকিছুর পরও স্বমহিমায় উজ্জ্বল হতে পারেনি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই শাখা সংগঠনটি।

অভিযোগ উঠেছে, যৌবনের লালিত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে চলছেন এই ইউনিটের নেতাকর্মীরা। গত সাত বছরেও মেলেনি কর্মীদের কোনো পদ-পদবি, স্বীকৃতি বা পরিচয়। অনেক বিভাগের সক্রিয় কর্মীদের অনার্স ও মাস্টার্স শেষ হয়ে গেলেও কোনো পদ-পদবি পাননি। অনেকে শুধু রাজনীতির জন্য সেমিস্টার ড্রপ দিচ্ছেন কিন্তু তবুও মিলেছ না কাঙ্ক্ষিত পরিচয়। এভাবে হতাশ হয়ে ছাত্র-রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন অনেকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেই কোনো কর্মসূচি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক শরীফ-সিরাজ কমিটি ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর এক বছরের জন্য অনুমোদন পায়। কিন্তু তারা কাটিয়ে দেন চার বছর। সর্বশেষ কমিটি ঘোষিত হয় ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর। মো. তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর থেকেই বহিষ্কারের হিড়িক পড়ে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরাগভাজন নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়!

সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকেও সংগঠন থেকেই বহিষ্কার করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তঃকোন্দল বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রেমঘটিত কারণে দিনভর সংঘর্ষের জেরে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এই শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত বছরের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়, ফের উজ্জীবিত হন তারা। কিন্তু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার ছয় মাসেও কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সংগঠন-পরিপন্থী কাজের অভিযোগে পদত্যাগ করলেও সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা শোভন-রাব্বানীর জবি শাখা কমিটি দিতে ব্যর্থ হন।

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, ২০১২ সালে সপ্তম ব্যাচে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করেছেন যারা, তারা বঞ্চিত হয়েছেন। ২০১২ সালের পর অর্থাৎ অষ্টম থেকে ১৫তম ব্যাচে ভর্তি হয়ে যারা সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন, তারাও পরিচয় ছাড়া রাজনীতি করে চলেছেন। সপ্তম থেকে ১১তম ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। আবার অনেকে পদ-পদবি অর্থাৎ পরিচয় পাবার আশায় এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে নবম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে ভার্সিটি জীবনের প্রথম থেকে সক্রিয় রাজনীতি করে এখনও পরিচয়হীন আছি। এর চেয়ে লজ্জার কী আছে! আশায় আছি, নতুন কমিটি ঘোষণা হলে পদ পাব। এজন্য এক বছর গ্যাপও দিয়েছি। কিন্তু কবে কমিটি হবে তা জানি না।

দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করা বিজ্ঞান অনুষদের এক নেতা বলেন, সাড়ে তিন বছরেও নিজের পরিচয় মেলেনি। আশা করি, এবার বর্ধিত কমিটিতে ভালো পদ পাব।

তবে এবার পদ না পেলে আর রাজনীতি করবেন না বলেও জানান তিনি।

পাঁচ বছর রাজনীতি করা সাদমান হোসেন জানান, প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ এবং তৃতীয় বর্ষের কিছুদিন সক্রিয় রাজনীতি করে বুঝেছি, এখানে ত্যাগী কর্মীদের স্থান নেই। তারা কোনো পদ-পদবি পাবেন না। তাই এখন একাডেমিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করেছি। এখানে লবিং না থাকলে সারাজীবন কর্মীই থেকে যেতে হবে।

‘নতুন যারা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন তাদের জন্য কোনো সুদিন আসবে বলে মনে হয় না; যদি না কেন্দ্রে লবিং থাকে কিংবা বড় ভাই না থাকেন। দিন যত যাচ্ছে ততই অনেক সক্রিয় কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন।’

পদ-পদবির জন্য জবি শাখার যেসব ছাত্রনেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করছেন তারাও কমিটি নিয়ে কথা বলতে চান না। তারাও চাচ্ছেন, দ্রুত কমিটি হোক।