ঢাবির ৪৫ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেনা: ছাত্র ইউনিয়ন


ঢাবি টাইমস | Published: 2020-07-23 18:19:02 BdST | Updated: 2024-04-29 15:25:03 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া অনলাইন ক্লাস নিয়ে নিজেদের একটি জরিপ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন৷ একেকটি বিভাগের ৪০-৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে কোনােভাবেই অংশ নিতে পারছেন না- এমন তথ্য জানিয়ে সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছে৷

গত মঙ্গলবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের করা জরিপের এই ফল প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন৷ সংগঠনটির নেতাদের অভিযোগ, করােনা মহামারির মুখে দাঁড়িয়ে অনলাইন ক্লাসের ধারণাটি যুগোপযোগী হলেও শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে ধারণাটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামােতে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম৷ বক্তব্যে বলা হয়, ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর ওপর একটি প্রাথমিক জরিপ চালিয়েছে৷ সংখ্যাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মােট শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে ক্ষুদ্র হলেও বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চালানাে এই জরিপে এতটুকু স্পষ্ট যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে অপারগ। চারটি অনুষদ ও একটি ইনস্টিটিউট মিলিয়ে মােট সাত বিভাগের এই দুই হাজার শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ক্লাস করতে পারছেন না। ৩৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁদের বসবাস যথাযথ নেটওয়ার্ক কভারেজের বাইরে৷ ২৭.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, অনলাইন ক্লাসের ডেটা খরচ তাদের ওপর যে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে, তা মেটাতে তাদের সরাসরি সাহায্য প্রয়ােজন৷ জরিপে এও দেখা গেছে যে ক্লাস করার উপযুক্ত ডিভাইসই প্রায় ১২ ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে নেই৷ অন্যদিকে অন্তত ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নানাবিধ কারণে মানসিক সমসার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন৷

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিজ্ঞান অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, ফার্মেসি অনুষদ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এই জরিপ চালিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন৷ এর মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষে ২০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে ১৫০ জন, অর্থাৎ ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন, যা একটি আশাপ্রদ সংখ্যা৷ অথচ এই একই বর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ক্লাস করছেন ১৪৪ জনের মধ্যে ৪১ জন, বাদ পড়ে যাচ্ছেন ১০০ জনেরও বেশি, যা মােট শিক্ষার্থীর ৭২ শতাংশ৷ এই পরিস্থিতিতে বিভাগটিতে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা শুধু অযৌক্তিক নয়, একইসঙ্গে অমানবিক৷ আইন অনুষদের প্রথম বর্ষের চিত্রটি আরাে ভয়ঙ্কর৷ ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ জন, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ ক্লাস করছেন, ডিভাইস নেই ১৮ জনের৷ বিস্ময়কর দৃশ্যটি হচ্ছে যে ৮৩ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারছেন না, তাদের ৩৮ জনের পরিবারের কেউ না কেউ করােনায় আক্রান্ত৷ কোনাে বিভাগের একটি বর্ষের এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীকে যদি এই দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তাহলে সেই বর্ষের অনলাইন ক্লাস বিপুল উদ্যম ও শূন্য ফলাফলের মধ্য দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনাে মানে থাকবে না৷

এসব তথ্য তুলে ধরে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা-কার্যক্রম যে বিশেষ অবস্থাতেই পরিচালনা করুক না কেনা, তাকে সেখানে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ আগেই নিশ্চিত করতে হবে৷ কোনাে শিক্ষার্থী তাঁর এলাকায় ফোনের নেটওয়ার্ক নেই বলে, তাঁর একটি ভালাে মােবাইল ফোন কেনার অর্থ নেই বলে বা তাঁর এলাকায় চরম বন্যা পরিস্থিতির জন্য ক্লাস করতে পারবেন না, এমন বৈষম্যমূলক চিত্র আমাদের কাম্য ছিল না৷ ডুবে যাওয়া শরীয়তপুর, নীলফামারী, মুন্সিগঞ্জ বা সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থীরা কেমন আছেন বা পাহাড়ে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা কোনাে নেটওয়ার্কের ভেতরে বাস করছেন কি না, এ নিয়ে এসি রুমে বসে থাকা প্রশাসনের কোনাে দুশ্চিন্তা দেখা যাচ্ছে না৷

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা জয় রায় ও মীম আরাফাত মানব উপস্থিত ছিলেন৷