কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শূন্যপদ পূরণ নিয়ে তালবাহানা


Dhaka | Published: 2020-12-19 21:05:37 BdST | Updated: 2024-05-16 02:01:52 BdST

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শূন্যপদ পূরণ নিয়ে নানান ধরণের তালবাহানা শুরু হয়েছে। 'শীঘ্রই পূরণ করা হবে' এরকম কথা বলে দিনের পর দিন ঘুরানো হচ্ছেপদপ্রত্যাশী নেতাদের। এতে হতাশ হয়ে পরছেন তারা। আবার অনেকে হয়েছেন ক্ষুব্ধ। ফলে শিগগিরই ছাত্রলীগের ভেতরে দেখা দিতে পারে বিদ্রোহ। ভেঙে পড়তে পারে শৃঙ্খলা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দায়িত্ব নেওয়ার পর আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য ২০১৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর বিবাহিত, অনুপ্রেবেশকারী, হত্যামামলার আসামী, মাদক মামলার আসামী, মাদকসেবন সহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩২ জন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তীতে শূন্য পদগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করার কথা জানান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু বছর পার হলেও এখনও শূন্য পদগুলো পূরণ করতে পারেনি।

সে সময় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানায়, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে শূন্য পদগুলো পূরণ করবে। সভাপতি, সাধারন সম্পাদক আরও বলেন, পদ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তদের নামে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ ছিলো, তদন্তের মাধ্যমে তাদের অভিযোগ প্রমাণ পাওয়ার তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে যোগ্যতার ভিত্তিতে এই শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে।

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯ তম সম্মেলনের আড়াই মাস পর রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানী কে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই কমিটি পূর্ণগঠনের দাবি তোলেন ছাত্রলীগের পদবঙ্চিত ও কাঙ্খিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। তার পর থেকে টানা ৩৩ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে তারা। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় বিক্ষুদ্ধরা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ৯৭ জনকে বিতর্কিত দাবি করে তালিকা প্রকাশ করে। তাদের অভিযোগ ছিলো, পদপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে বিবাহিত, চাকুরিজীবী, মাদক মামলার আসামি, মাদকসেবী, কারো বয়স পেরিয়ে গেছে, কেউ বা ছাত্রদল শিবির থেকে আসা। তাই তাদেরকে বহিষ্কার করে যোগ্যদের মূল্যায়নের দাবি জানায়।

বছর পার হলেও কমিটি দিতে না পারায় এটাকে ব্যার্থতা হিসাবে দেখছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।অনেকে এটাকে ২ নেতার অবহেলা বলছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জয়- লেখক শোভন রাব্বানীর দেখানো পথেই হাঁটছেন। যখনই তাদের কমিটির বিষয়ে বলা হয় তখনি তারা বলে কমিটি প্রস্তুত আছে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে কমিটি দিবো। কিন্তু আদৌ কমিটি হবে কিনা এটাই ভাবার বিষয়।

শূন্য পদগুলোর স্থলে যোগ্যদের পদায়ন করার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক উপ দপ্তর সম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বার বার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার অজুহাত দেখিয়ে কমিটি নিয়ে গড়িমসি করছে।

তিনি বলেন, এখন ছাত্রলীগ শুধু প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই কমিটি করছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যেখানেই কমিটি করা হবে সেখানে যেন সম্মেলন করে করা হয় এবং যোগ্যরা যেন কোন ভাবেই বঞ্চিত না হয়। তিনি আরও বলেন শূন্য পদগুলো পূরণ না করার কারণে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্বও বণ্টন করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, যদি কমিটি নাই করা হয়, তবে আমরা অচিরেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসুচি ঘোষণা করবো, কোনভাবেই বিতর্কিতদের কমিটিতে থাকতে দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোঃ আরিফ হোসেন লিখেছেন, ছাত্রলীগের আদর্শিক নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনে বলেছিলেন, এখন থেকে নিয়মিত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব বের করে নিয়ে আসতে হবে।

যদি একটু পিছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখবেন, ২৯তম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের যে অংশটি আন্দোলন করেছিল, তাদের চাওয়া ছিল একটাই- নিয়মিত সম্মেলন। বয়সের গ্যাঁড়াকলে পরে যেন কোন যোগ্য ক্যান্ডিডেট, কর্মী হারিয়ে না যায়। ডাকসুর নির্বাচনও একই উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছিল, যাতে যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্ব উঠে আসে।

আজকে ছাত্রলীগের তৃণমূলের কমিটি কতটা বেহাল অবস্থায় আছে, সেটা বিভিন্ন ইউনিটের ৮/১০ বছরেও সম্মেলন না হওয়াটাই বলে দিচ্ছে। অথচ এরাই ছাত্রলীগের প্রাণ, এরা সরাসরি যে কোন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। দীর্ঘ দিন ছাত্রলীগের রাজনীতির করে বয়সের গ্যাঁড়াকলে পরে অনেকেরই ছাত্র রাজনীতি করার ববয়সটুকুও শেষ হয়ে যাচ্ছে।

গত একবছরে শূন্যপদ পূরণ করতে না পারা, পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করতে না পারা, নির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা আহবান করতে না পারা, জাতির পিতার সমাধিসৌধে ফুল দিতে না পারা কিংবা ঢাকার ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট গুলোর সম্মেলনের পরে প্রায় দেড় বছর পার হলেও কমিটি করতে না পারা। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে নতুন গতিশীল যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প কোন পথ খোলা নাই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে গত এক মাসে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, কাজে এগিয়ে এনেছি, তালিকা হচ্ছে, শীঘ্র্র্র্রই ঘোষণা করা হবে এরকম বিভিন্ন ধরনের কথা বলে তারা সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাাব দিয়েছেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন হলের কমিটি না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন বিভিন্ন হলের পদপ্রার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পদপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, হল কমিটি করা নিয়ে কেন্দ্রীয় দুই নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তালবাহানা করছেন। তারা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছেন না। হলে প্রার্থীদের বয়স চলে যাচ্ছে, তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট হচ্ছে। এদিকে তারা দু'জন ভ্রুক্ষেপই করছেন না।