ভেঙে যাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, সম্মেলনের ডাক একাংশের


Dhaka | Published: 2021-01-14 11:39:29 BdST | Updated: 2024-04-30 12:45:08 BdST

প্রায় ছয় দশক পর আবার ভাঙছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনের ঘোষিত কমিটিকে মেনে না নিয়ে আলাদা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাংশ।

ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলনে একচেটিয়া কমিটি করার অভিযোগ তুলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই অংশটি।

বুধবার বেলা ১২ টা থেকে সন্ধ্যা অবধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে প্রতিনিধি সভা শেষে জানানো হয়, তারা নতুন নেতৃত্ব গঠনে জাতীয় সম্মেলন করবেন। তবে তারিখ জানানো হবে এক সপ্তাহ পর।

এই প্রতিনিধি সভায় ৩০টি সাংগঠনিক জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

প্রতিনিধি সভার আয়োজকদের অন্যতম একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিখা পেরেগু।

তিনি বলেন, “প্রতিনিধি সভা থেকে নতুন করে ৪১তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ১৫ সদস্যের ‘সম্মেলন প্রস্তুতি সমন্বয় পরিষদ’ করা হয়েছে।”

প্রতিনিধি সভা নিয়ে বিস্তারিত এখন প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না জানিয়ে মিখা পেরেগু বলেন, “আগামী এক সপ্তাহ পরে আমাদের গঠন করা ‘সম্মেলন প্রস্তুতি সমন্বয় পরিষদ’ প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনের তারিখ ও অন্যান্য বিষয় জানিয়ে দেবে।”

তবে গত ১৯ নভেম্বর ৪০ তম সম্মেলন শেষে ঘোষণা করা কমিটির সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ এই উদ্যোগকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না কে করেছে। এটার সঙ্গে সংগঠনের যদি কেউ যুক্ত থাকে তাহলে সংগঠনের ধারা গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবগত না করে কেউ যদি এইটা করে থাকে তাহলে সেটা ছাত্র ইউনিয়নের না। কে বা কারা এই সম্মেলনে তারিখ নির্ধারণ করল সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি অবগত না।’

বিরোধ যা নিয়ে

গত বছরের ১৯ নভেম্বর ৪০তম জাতীয় সম্মেলনে ফয়েজ উল্লাহকে সভাপতি ও দীপক শীলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র ইউনিয়নের ৪১ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়।

তবে সংগঠনের এক অংশের দাবি, ওই সম্মেলনে একাধিক গঠনতান্ত্রিক ব্যত্যয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা বিনষ্ট করা হয়েছে।

এরপর ঢাকা মহানগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩০ টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধিরা নতুন করে সম্মেলন করতে অনুষ্ঠানের পক্ষে সই করেন।

সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুসারে কাউন্সিলরদের এক তৃতীয়াংশ সই করলে ২১ দিনের মধ্যে নতুন করে সম্মেলনের আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি জয় রায় বলেন, ‘আমাদের দাবির পক্ষে গত জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেয়া ২২৬ জন প্রতিনিধির মধ্যে ১১৩ জন সই করেছেন। এই সংখ্যা গঠনতন্ত্রের ধারা ১৫ অনুযায়ী এক চতুর্থাংশের বেশি।

‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই দাবি উত্থাপনের পর ২১ দিনের মধ্যে রিকুইজিশন জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করতে সভাপতি বাধ্য। তবে সভাপতি দাবি উপেক্ষা করেছেন ও ২১ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও রিকুইজিশন জাতীয় সম্মেলন আহ্বান না করে গঠনতন্ত্রকে লঙ্ঘন করেছেন।’

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে প্রতিনিধি সভা বসে।

জয় রায়ের সই করা প্রতিনিধি সভা আহ্বানের চিঠির অনুলিপিতে বলা হয়েছে, ‘সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সংসদের দায়িত্ব যেখানে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও ঐক্যকে সমুন্নত রাখা, সেখানে সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সংসদের অন্যান্য সদস্যরা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে সংগঠনকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এমতবস্থায় গঠনতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা ও সংগঠনের ঐক্যের স্বার্থে রিকুজিশন জাতীয় সম্মেলন অপরিহার্য।’

ছাত্র ইউনিয়নে এর আগে ভাঙন দেখা দেয় পাকিস্তান আমলে। সে সময়ের সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই ভাগ হয় ছাত্র ইউনিয়ন।

রাশিয়া না চীন- এই বিরোধে ভাঙনের পর মেননের নেতৃত্বাধীন অংশ পরিচিতি পায় চীনপন্থি আর মতিয়ার নেতৃত্বাধীন অংশ পরিচিতি পায় রুশপন্থি হিসেবে।