ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ লক্ষ্য যাঁদের বিবিএ


Prothom-alo.com | Published: 2017-08-14 06:01:22 BdST | Updated: 2024-05-12 04:53:32 BdST

এইচএসসির ফল বেরিয়েছে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে । এখন সব শিক্ষার্থী ব্যস্ত উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে। এই সময়টাই তাঁদের জীবন গড়ে নেওয়ার উপযুক্ত সময়। বাণিজ্য বিভাগের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ। আসন সীমিত থাকায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির জন্য লড়তে হয় গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়। এবারের যাঁরা পরীক্ষার্থী, তাঁদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য গ ইউনিটে গতবারের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী তিনজন দিলেন বেশ কিছু পরামর্শ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুখোমুখি এক আলোচনায় প্রথমেই বলতে শুরু করলেন ২০১২ সালের গ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনকারী জানে আলম। তিনি ঢাকার মিরপুর বাংলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।জানে আলম বলেন, ‘গ ইউনিটে ১২০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে মেধা তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ থেকে নেওয়া হয় আরও ৮০ নম্বর। গ ইউনিটের জন্য ইংরেজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বিষয়ে ন্যূনতম ১২ নম্বর পেতে হয়। বেশি বেশি অনুশীলনের মাধ্যমে এ বিষয়টি ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। এ ছাড়া ইংরেজি ব্যাকরণের পাশাপাশি মুখস্থ বিষয়গুলোর ওপরও জোর দিতে হবে। কারণ, ইংরেজি বাক্যের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রেও এগুলো বেশ জরুরি। ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগের জন্য এইচএসসির সিলেবাসই যথেষ্ট বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া শেয়ারবাজার, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়-সম্পর্কিত জ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে বলে জানান তিনি। হিসাববিজ্ঞান বিষয়টিতে যেহেতু অঙ্ক করতে হয়, তাই বারবার অনুশীলন করে এ বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।বাংলার জন্য পাঠ্যবইয়ের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সহায়ক বই এ বিষয়ের জন্য অনুসরণ করা যেতে পারে। ২০১২ সালের গ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী হোসাইন আলী। তিনি জামালপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে পড়ছেন।

তিনি বিশেষভাবে বললেন পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো অনুশীলনের কথা। এসব প্রশ্ন বারবার করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পাবেন, যা তাঁকে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেক সাহায্য করবে।

ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ বিষয়টি নিয়ে হোসাইন আলী জানান, এ বছরের পরীক্ষার্থীরা যেহেতু সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়েছেন, তাই তাঁদের মূল বইয়ের ওপর বেশ দখল আছে। মূল বইয়ের পাশাপাশি বাণিজ্যবিষয়ক সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কেও জ্ঞান রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে এসব বিষয় থেকে একটা-দুইটা প্রশ্ন থাকতে পারে।

জান্নাতুল ফোরাঈন ২০১২ সালের গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকারী। নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে এখন পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। কীভাবে ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য পেলেন, জানতে চাইলে সরাসরি বিষয়ভিত্তিকভাবে বলতে শুরু করলেন। অন্যদের মতো জান্নাতুলও জানান, বাংলা বিষয়টির জন্য পাঠ্যপুস্তক সবচেয়ে সহায়ক। প্রথম পত্রের জন্য বাংলা বোর্ড কর্তৃক প্রণোদিত বইটি এবং দ্বিতীয় পত্রের জন্য মুনীর চৌধুরীর নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ বইটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন। এর পাশাপাশি চাইলে কিছু সহায়ক বইয়ের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে।

ইংরেজির কথা শুরু করার আগেই জান্নাতুল বলেন, এ বিষয়টি তুলনামূলক কঠিন, তাই এর প্রস্তুতিতে নিতে হবে আলাদা সতর্কতা। ইংরেজি গ্রামারের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে হবে নির্ভুলভাবে। যেহেতু গ ইউনিটের পরীক্ষায় ভোকাবুলারি, অ্যানালোজি, ফ্রেজ ইত্যাদি বিষয়গুলো বেশ বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে, তাই এগুলো শিখতে হবে সঠিকভাবে। যেহেতু এই বিষয়গুলো মুখস্থ করতে হয়, তাই মুখস্থবিদ্যার ওপর একটু জোর দিতে হবে। ইংরেজির জন্য পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি স্যাট, টোয়েফলের বইগুলো থেকেও সাহায্য নেওয়ার কথা বললেন তিনি।

সবশেষে জান্নাতুল বললেন হিসাববিজ্ঞানের কথা। তাঁর মতে, এসএসসি ও এইচএসসির সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির পড়াশোনার কিছুটা পার্থক্য আছে। তাই পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন দেখে একটা ধারণা নিতে হবে। বাকি দুজনের পরামর্শের সঙ্গে একমত হয়ে আবারও বললেন, পাঠ্যবইয়ের কোনো বিকল্প নেই। সহায়ক যে বই-ই পড়া হোক না কেন, মূল বইয়ের ওপর আগে সম্পূর্ণ দখল থাকতে হবে।

পরিশেষে পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিবেশ সম্পর্কে হোসাইন আলী জানান, পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই কিছুটা নার্ভাস বোধ করেন। খুব বেশি চিন্তা না করে তাঁদের উচিত মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দেওয়া। এ ছাড়া কোনো প্রশ্নের ব্যাপারে একেবারে অনিশ্চিত থাকলে তা উত্তর না করাই ভালো। কারণ, প্রতিটা ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যায়।

নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য সবাই বারবার সতর্ক করে দিয়ে বললেন, যেহেতু পরীক্ষাকেন্দ্রের এক ঘণ্টা সময় একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নির্ধারণ করে দেবে। তাই ওই সময়টার উপযুক্ত ব্যবহার যে করতে পারবেন, তিনিই পারবেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে।

এমএসএল