বছরের শুরুতেই ১হাজার কোটি টাকার বই পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা


Dhaka | Published: 2019-12-30 09:08:12 BdST | Updated: 2024-05-18 14:20:00 BdST

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের (মাদ্রাসা, কারিগরিসহ) সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি সাড়ে ৩১ লাখ বই ছাপার কাজ শেষ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত চাহিদার চেয়ে বেশি চাহিদা দেওয়ায় এবার অবশ্য বই বেশি ছাপতে হয়েছে। এতে সরকারের খরচও বেশি হয়েছে। বিনা মূল্যে বই দিতে এ বছর সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দেওয়া শুরু করে সরকার। এরপর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে উৎসব করে বিনা মূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২০২০ শিক্ষাবর্ষেও বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন বই। এনসিটিবির দুজন কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে সব বই উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। আর ১ জানুয়ারি উৎসব করে সারা দেশে বই দেওয়া হবে।

এবার বই উৎসবের মূল আয়োজনটি রাজধানীর বাইরে সাভারের অধর চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে হবে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁদের মূল অনুষ্ঠান আগের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

মাঠপর্যায়ে বই পাঠানোর পর সেগুলোর মান ঠিক আছে কি না এবং চাহিদা অনুযায়ী সব বই গেছে কি না, তা দেখার জন্য এনসিটিবি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পৃথক পরিদর্শক দল পাঠিয়েছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, নতুন বইয়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত চাহিদা পাঠায়। এটা বন্ধে আগামী বছর থেকে আলাদা সফটওয়্যার তৈরি করে অনলাইনে চাহিদা নিয়ে আগেই যাচাই করা হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকেও বলা হয়েছে, তারা যেন একটি আদেশ জারি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়, প্রকৃত চাহিদার চেয়ে বেশি দিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিদর্শনের সময়ও দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রকৃত চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বই চাচ্ছে। পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোর পরিদর্শন শেষে পরিদর্শক দল এনসিটিবিতে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে অতিরিক্ত চাহিদা দেওয়ার তথ্য রয়েছে। ঈশ্বরদী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সপ্তম শ্রেণির জন্য চাহিদা দেয় ৩৫০ জনের। কিন্তু হাজিরা খাতা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ওই শ্রেণির শিক্ষার্থী ২৩৯ জন। একইভাবে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে যথাক্রমে ১০ ও ৫০ জনের বেশি চাহিদা দেওয়া হয়েছে। নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য যথাক্রমে ৩০, ২৩ ও ২১ জনের অতিরিক্ত চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

কোন স্তরে কত বই

আসন্ন শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ শিক্ষার্থীর জন্য ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৮ কপি বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ করেছে এনসিটিবি। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) বই ৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ৪৮০টি। প্রাক্‌-প্রাথমিক স্তরের বই ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৬টি। মাধ্যমিকের (বাংলা ভার্সন) বই ১৮ কোটি ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৯টি। বাকি বই মাদ্রাসা ও কারিগরি এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য নিজেদের ভাষায় (পাঁচটি ভাষায়) লেখা বই দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৭৫০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ৯ হাজার ৫০৪টি বই ছাপা হয়েছে।

এবার নতুন বইয়ের বিষয়বস্তুতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলে জানান এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম।