ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিটেন্স সরবরাহ


জাহিদুল ইসলাম | Published: 2017-08-19 01:15:56 BdST | Updated: 2024-05-17 22:31:42 BdST

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স বাড়ানোর নানামুখী পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেও পরিসংখ্যানে তার বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সরবরাহ সরবরাহ কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাসেই(জুলাই) কমেছে প্রবাসী আয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রবাসীরা দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১১১ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত মাসের তুলনায় ৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় ও নীতিনির্ধারন বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জনশক্তি রফতানিতে ভাটা, অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানি, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার দর পতন, কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস, বিদেশের মাটিতে প্রবাসীদের অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া, অনেকগুলো দেশে অভিবাসন বিরোধী নীতি-কৌশল অনুসরণ, দেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাকে অর্থনীতিবিদরা প্রবাসী আয় কমার প্রধান কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধুমাত্র অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর কারনেই সরকার প্রচুর পরিমান রেমিটেন্স হারাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রচুর টাকা যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রবাসীরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, লেবানন, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিকাশের সাইনবোর্ড লাগিয়ে অনেকেই বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর ব্যবসা শুরু করেছেন। তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মূদ্রা নিয়ে বাংলাদেশে তাদের এজেন্টকে নির্দিষ্ট বিকাশ নাম্বারে টাকা দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ওই বিদেশি মূদ্রা বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে ঢুকছে না, যে কারণে রেমিটেন্স হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

আবুল কালাম আজাদ নামের সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন প্রবাসী বাংলাদেশী ক্যাম্পাস টাইমসকে জানান, ‘এখানে বাংলাদেশের বিকাশ নাম্বার দিলে অনেক লোক আছে যারা টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আমি কখনো বিকাশে টাকা পাঠাইনি।’

বিকাশের মাধ্যমে লেনদেনের ফলে দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ কমে যাচ্ছে, বাংলাদেশ প্রচুর পরিমান রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে, জুন ও জুলাইয়ে ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে। মে মাসে রেমিটেন্স ছিল ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। জুন মাসে রেমিটেন্স কমে ১২১ কোটি ৪৬ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে তা আরো কমে দাঁড়ায় ১১১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। সর্বশেষ জুলাই মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১১১ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার। যা আগের মাস জুনের চেয়ে ৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ কম। জুন মাসের রেমিটেন্সের পরিমাণ ১২১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, যা মে মাসের তুলনায় ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই মাসে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৮১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলার, বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৮ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, রেমিটেন্স সংগ্রহে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক আছে প্রথম অবস্থানে। শীর্ষস্থানীয় এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ২১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। রেমিটেন্স সংগ্রহে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ১০ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার ও জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৩ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তার আগের অর্থ বছরের তুলনায় ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার বা ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ কম প্রবাসী আয় আসে। সমাপ্ত অর্থ বছরের পুরো সময়ে রেমিটেন্স আসে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১২ লাখ ডলার।

জেএস/ ১৮ আগস্ট ২০১৭