অক্সফোর্ড কেমব্রিজের আগেও বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল?


মৌলভিবজর | Published: 2020-07-21 17:56:41 BdST | Updated: 2024-05-17 15:46:06 BdST

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ধারণা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার এই জায়গায় ছিল চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়।মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় প্রাচীন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নসম্পদের খোঁজে জুড়ীতে আসছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকায় প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নসম্পদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আলোচনা হওয়ায় তা নজরে এসেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরেরও। শ্রীহট্টের চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও এখানকার পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে নামে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগটি। গত ১৫ জুলাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আমিরুজ্জামান (প্রত্নসম্পদ ও সংরক্ষণ) এক চিঠিতে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালককে এ নির্দেশ দেন। আগামী ২২ ও ২৩ জুলাই সরেজমিনে প্রত্নসম্পদের অনুসন্ধান করে অধিদপ্তরে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

কথিত আছে তৎকালীন শ্রীহট্টের মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা শ্রীচন্দ্র চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এমনটি দাবি করেছেন কোনো কোনো ইতিহাসবিদ। সে হিসেবে এটি অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজের আগের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে। আর ১২০৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।


যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তবে বিভিন্ন লেখার সূত্র দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, আনুমানিক ৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীহট্টে একটি উচ্চতর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। চন্দ্রবংশীয় বৌদ্ধ রাজা শ্রীচন্দ্র এই চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সম্পূর্ণ রাজকীয় অনুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষকতায় বিশাল এই বিদ্যাপীঠটি তখন গড়ে উঠেছিল। প্রতিষ্ঠাতা শ্রীচন্দ্র প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ কল্পে ৪০০ পাটক জমি (১ পাঠক=৫০ একর বা ১৫০ বিঘা) বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ করেছিলেন। প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কমলাকান্ত গুপ্ত চৌধুরী তার বিখ্যাত ‘Copper plates of Sylhet’ গ্রন্থে পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এবং তাম্রশাসন সর্ম্পকিত তার রচিত কিছু প্রবন্ধে জুড়ীতে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো বলে উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া লেখক সুজিত চৌধুরী তার ‘শ্রীহট্ট কাছাড়ের প্রাচীন ইতিহাস’ এবং নীহার রঞ্জন রায় তার ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস (আদিপর্ব)’ গ্রন্থে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু তথ্য সংযোজন করেছেন।

এছাড়াও মো. জহিরুল হক ও বায়োজিত আলম প্রাচীন সিলেটের চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় একটি ইতিহাসভিত্তিক পর্যালোচনা শিরোনামে একটি গবেষনা প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

এসব লেখার সূত্রে জানা যায়, খ্রিস্টীয় দশ শতকের প্রথম ভাগে উত্তরে কুশিয়ারা নদী, দক্ষিণ ও পশ্চিমে মনু নদী এবং পূর্বে ইন্দেশ্বরের পাহাড়ি অঞ্চল বা পাথরিয়া অঞ্চল এই সীমানার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল। এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কোনো এককালে এখানে বড় শিক্ষাঙ্গন ছিল বলে জনশ্রুতিও রয়েছে। এছাড়াও দীঘিরপাড় এলাকায় মাটির নিচে এখনো প্রাচীনকালের পয়সা, মাটির বাসন ও বাসনের ভাঙা টুকরো পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সাগরনাল গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মো. ইমরানুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে এখানে রাজাদের বসবাস ছিল। দীঘিরপাড়ে যে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এমনটা কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। দীঘির চারদিকের পাড়কে স্থানীয় বাসিন্দারা এখন কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করেন। কবর খুঁড়তে গিয়ে বা আশপাশে কুপ খনন করতে গিয়ে মাটির নিচে প্রায়ই পুরোনো মাটির বাসন ও বাসনের ভাঙা টুকরো পাওয়া যায়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অনুসন্ধান করে যদি এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নসম্পদের খোঁজ পায়, তা হলে এটি এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হবে।

এ ব্যাপারে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, এখনো অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি।