ফরিদপুরে ৫৮টি স্কুল প্লাবিত


Dhaka | Published: 2020-07-22 02:51:12 BdST | Updated: 2024-05-17 13:06:13 BdST

ফরিদপুরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলা সদর উপজেলা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৪টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি দাখিল মাদরাসা প্লাবিত হয়েছে। ২০টি বিদ্যালয়ে পানি ছুই ছুই অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে জেলা সদর থেকে চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার সড়কটির ৫০ মিটার ধসে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।এছাড়া ওই সড়কের কয়েকটি স্থান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে এবং বিভিন্ন অংশে ফাটলও দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ফরিদপুর শহরের বর্ধিত পৌরসভার ২৫নং ওয়ার্ডের একটি পাকা সড়ক পানির চাপে ধসে গেছে।

ফরিদপুরে বন্যা কবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। গত কয়েকদিন যাবৎ জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ নানা সহায়তা করে আসছেন।

এবার জেলা প্রশাসক অতুল সরকার নিজেই বন্যা কবলিতদের মাঝে হাজির হয়ে তাদের হাতে তুলে দেন খাদ্য সামগ্রী। এ দুর্যোগকালীন সময়ে জেলা প্রশাসকের হাত থেকে ত্রাণ পেয়ে খুশি দুর্গত এলাকার মানুষ।

সোমবার (২০ জুলাই) সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীর চর গ্রামে ৫ শতাধিক বন্যার্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, পানি রাখার ক্যান ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবেলট বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।

করোনা ও বন্যার সংকট ধৈর্য নিয়ে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, এ দুর্যোগকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।বন্যায় কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না, পানিবন্দি সকল মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যা কবলিতদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা রাতদিন দুর্গত মানুষের পাশে থেকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমেও পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সব সময় দুর্গত মানুষের পাশে রয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা জানান, ডিসি স্যার নিজে উপস্থিত থেকে নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীর চর গ্রামে ৫ শতাধিক বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার, পানি রাখার ক্যান ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবেলট বিতরণ করেন।

তিনি আরও জানান, এছাড়া আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত ৫ শতাধিক মানুষকে খিচুরি রান্না করে খাওয়ানো হয়। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, জেলা সদর থেকে চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় যাওয়ার সড়কটির ৫০ মিটার ধসে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। চলাচলের উপযোগী করতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আহাদ মিয়া জানান, সদর উপজেলার ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আরও ১১টি বিদ্যালয়ে পানি ছুই ছুই অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টে ফাটল দেখা দেয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে।

পানি বৃদ্ধির ফলে সদরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে উপজেলার চরনাছিরপুর, দিয়ারা নারিকেল বাড়ীয়া, চরমানাইর ও আকোটেরচর, ঢেউখালীর আংশিক এলাকা প্লাবিত রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে নৌকায়, কলার ভেলাসহ ঘরের মাঝে বাঁশ দিয়ে চৌকি উঁচু করে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। শত শত গ্রাম এখন বানের পানিতে ভাসছে। গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িতে কোথাও হাঁটু সমান কোথাও বুক সমান পানি। এ অবস্থায় ঘরে চৌকি উঁচু করে, মাচা পেতে কেউবা নৌকায় বসবাস করছেন। সেইসঙ্গে পানির তোড়ে বাড়ি-ঘর ভেসে যাওয়ার সংশয়ের পাশাপাশি খাদ্য আর বিশুদ্ধ পানির সমস্যা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় থাকতে না পেরে অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।

অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে রাস্তা-ঘাট ভেঙে উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বানভাসি মানুষের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলায় পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। আবারও তারা নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।

সদরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মালেক মিয়া জানান, পানিতে প্লাবিত রয়েছে ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে করোনাকালিন সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সদরপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ এর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. বোরহান উদ্দিন জানান, পল্লী বিদ্যুতায়িত এলাকাগুলো সংযোগ এখনও বন্ধ না হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রয়েছে।

দিয়ারা নারিকেল বাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন সরদার জানান, ইউনিয়নের প্রায় সকল পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এদের মধ্যে ২৩৩টি অসহায় পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

চরনাছিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো আক্কাছ আলী জানান, ইউনিয়নের প্রায় পরিবারগুলো পানিতে বন্দি রয়েছে। আমি প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর রাখাসহ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করছি। এ পর্যন্ত ২৫৫টি পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।

সদরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার পূরবী গোলদার জানান, সরকারিভাবে ২৯ মেট্রিক টন চাল ও ৮০ হাজার টাকা ও ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার রয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে এসব খাদ্রসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

অপরদিকে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। চরাঞ্চলের প্রায় বসতবাড়ির ঘরের মধ্যে পানিতে সয়লাব হয়ে রয়েছে এবং চরাঞ্চলে প্রায় সব রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন হাট বাজার প্লাবিত হয়ে বন্যার্ত পরিবারের দুর্ভোগ তীব্র আকার ধারণ করেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন সুলতানা জানান, উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত সাড়ে ৫শ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিয়নের বন্যা কবলিত মানুষের মাঝেও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

flood

এছাড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির ফলে গাজীরটেক ইউনিয়নের প্রায় ৬৫ কি.মি. কাঁচা ও ইটের রাস্তা, চরহরিরামপুর ইউনিয়নের ১১০ কি.মি. ও চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের ৫৫ কি.মি. রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।

গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী জানান, বাজারের প্রতিটি দোকানে লাখ লাখ টাকার মালামাল রক্ষিত আছে। তাই বন্যার পানি আরও বৃদ্ধি পেলে ব্যবসায়ীদের দোকান ও গোডাউন পানিতে প্লাবিত হয়ে মালামালের বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।

চরভদ্রাসন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম বাহাউদ্দিন জানান, উপজেলার ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৪টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি দাখিল মাদরাসা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান জানান, এবারের বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামজুড়ে মধুমতি নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ তাদের ভূসম্পত্তি হারাচ্ছে।

সরকারিভাবে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে তবে তা খুব একটা কাজে আসছে না। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, স্থায়ীবাঁধ দেয়া ছাড়া ভাঙন রোধ করা যাবে না।