বন্যায় স্কুল-কলেজে ১২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি


Dhaka | Published: 2020-08-18 23:57:54 BdST | Updated: 2024-05-11 18:57:53 BdST

দেশজুড়ে বন্যায় সাত হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের ২৫ জেলায় অবস্থিত। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু স্থানে পানি নামতে শুরু করেছে, অনেক স্থানে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) আলাদা বন্যা সেল করে প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক আবার কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট গেছে। অনেক স্থানে স্কুলের মেঝে ডুবে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে স্কুলে ঢোকার পথের রাস্তাও।

ডিপিই সূত্র জানায়, বন্যায় সারাদেশের ছয়টি বিভাগে মোট তিন হাজার ৯০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে কোনোটি পানিবন্দি অবস্থায়, কোনোটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কোনোটি আবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৪৬০টি, রাজশাহী বিভাগে ৭৫০টি, রংপুর বিভাগের ৬৬৫টি, সিলেট বিভাগে ৫৮২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬৮টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৫০০টি। এবার প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান বন্যার কবলে পড়ল।

ডিপিই’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, প্রাথমিকভাবে সারাদেশে বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৯০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে কোনো কোনো জেলার বন্যাকবলিত স্কুল থেকে পানি নেমে যাচ্ছে, অনেক স্থানে এখনো পানিবন্দি অবস্থা, কিছু প্রতিষ্ঠান আবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, অধিদফতরের তরফ থেকে একটি সেল তৈরি করে সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন যে জেলা থেকে তথ্য আসছে সেগুলো আপডেট করা হচ্ছে।

নুরুল আমিন আরও বলেন, দেশের যে জেলার পানি নেমে যাবে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। যেসব স্থানে নদীগর্ভে বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে সেখানে সুবিধামতো স্থানে নতুনভাবে বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

ডিপিই’র এক কর্মকর্তা জানান, উল্লিখিত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান মেরামত, সংস্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষে নতুন ভবন নির্মাণে অন্তত ৮০ কোটি টাকা লাগতে পারে। এটা প্রাথমিক হিসাব। পরিপূর্ণ হিসাব তৈরি করতে আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যায় একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোনো ছাত্র-ছাত্রীর বইপত্র নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাকে নতুন বই দেয়া হবে। জেলায় বাফার স্টকে চাহিদার ৫ শতাংশ বই সংরক্ষিত আছে। যদি কোনো জেলায় তাতেও চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী জেলা বা ঢাকা থেকে ব্যবস্থা করা হবে।

বন্যায় আলাদা করে লেখাপড়ার কোনো ক্ষতি হয়নি উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার পরিস্থিতি রিকভারি প্ল্যানের সঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে।

অন্যদিকে মাউশির উপ-পরিচালক রুহুল মোমিন জানান, সোমবার পর্যন্ত শুধু গাইবান্ধা জেলায় ৩০টির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য তারা পেয়েছেন। আর্থিক ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা যায়নি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) সূত্র জানায়, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ইতোমধ্যে এসেছে সেগুলো মেরামত, সংস্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষে নতুন ভবন নির্মাণসহ অন্তত ৪০ কোটি টাকা লাগতে পারে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো তৈরি করা যায়নি।

সূত্র আরও জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব মাঠপর্যায় থেকে ডিপিই এবং ইইডিতে পাঠানো হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা পাওয়া গেলেও মাউশির অধীনে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল-কলেজের সংখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এবার অধিক বন্যা ও তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২০ কোটি টাকা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা দিয়েছেন।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা আমরা এখনো তেমন একটা পাইনি। তালিকা চাওয়া হয়েছে। শিগগির হয়তো পাওয়া যাবে। তবে আমাদের বড় ক্ষতি হয়েছে মাদারীপুর আর চাঁদপুরের হাইমচরে। দুটি ভবন নদীগর্ভে চলে গেছে।

দেশের ভেতরে ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলের কারণে গত ২৬ জুন থেকে বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এখনো নাটোর ও ঢাকা জেলা বন্যাকবলিত। এবারের বন্যায় ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩ জেলার ১৬২ উপজেলার ৫০ লাখ ২৮ হাজার ৬৪৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব জেলা-উপজেলাকে ধরা হলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।