পাসপোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2020-08-21 21:16:42 BdST | Updated: 2024-05-05 19:45:08 BdST

করোনা মহামারির কারণে গত পাঁচ মাস যাবৎ পাসপোর্টের কার্যক্রম বন্ধ। এই সময়ের মধ্যে ৩ লাখের মতো নতুন পাসপোর্ট আবেদনের স্তূপ জমে গেছে। গত ২৩ মার্চ থেকে পাসপোর্ট রিইস্যু কার্যক্রম ধীরগতিতে চললেও ডেলিভারির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময়ের দ্বিগুণ-তিনগুণ সময় পার হলেও অনেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি পায়নি। এ সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় প্রবাসীদের।

এই অবস্থায় আগামী রোববার থেকে পাসপোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের পরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন) মো. সাঈদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক সীমিত পরিসরে এমআরপি ও ই-পাসপোর্টের এনরোলমেন্ট (নতুন ও রিইস্যু) কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে আগের জারি করা সব আদেশ বাতিল করা হয়েছে। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে রিইস্যু, বিশেষ করে হারানো পাসপোর্ট, মেয়াদ শেষ ও ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হলেও পাসপোর্ট তৈরি ও বিতরণে অনেকটা ধীরগতি চলে আসে। এর আগে ই-পাসপোর্ট চালু হলেও করোনার কারণে সেটিও বন্ধ রয়েছে। এমনকি যারা করোনার আগে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন, তাদের বেশির ভাগই পাসপোর্ট হাতে পাননি। তারাও অপেক্ষায় আছেন। অবশ্য দেশের বাইরে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর সুপারিশ অনুযায়ী প্রবাসী কর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে কোনো কোনো দেশে জরুরি কিছু পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের যেসব আবেদন বিভিন্ন দূতাবাস হয়ে অধিদপ্তরে এসেছে, সেসব পাসপোর্ট সীমিত আকারে ছাপা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের মতে, নতুন পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আবেদনকারীর ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার যাদের ছবি ও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে, তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়নি। এসব কারণে পাসপোর্ট তৈরির কাজ আটকে আছে। সে জন্যই নতুন পাসপোর্টের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে লাখ লাখ আবেদনকারীকে।

পাসপোর্ট অফিসের পাসপোর্ট ও পরিকল্পনা শাখার উপপরিচালক মো. শাহাদাত্ হোসেন জানান, করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট, এমআরপি পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ, তৈরি ও বিতরণ বন্ধ আছে। বর্তমানে শুধু পাসপোর্ট নবায়নের কাজ চালু রয়েছে। আগামী রবিবার থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, ফেসবুকে পাসপোর্ট-সংক্রান্ত বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপে প্রতিদিন শত শত মানুষ জানতে চাইছেন, নতুন আবেদন জমা নেওয়া হবে কবে। অনেকে এ-ও বলছেন, রিইস্যুর জন্য আবেদন জমা দিয়েও সময়মতো পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী বলেন, নতুন পাসপোর্টের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ ও খুব কাছ থেকে ছবি নিতে হয়। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের মণি ও কয়েকটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাশাপাশি দৈনিক অনেক মানুষের আঙুলের ছাপ বা চোখের মণি নিতে গিয়ে কর্মকর্তাদেরও সেই ঝুঁকিতে পড়তে হয়। এ জন্য নতুন আবেদন জমা নেওয়া বন্ধ রয়েছে। তবে এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে সারা দেশে প্রতিদিন ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার পাসপোর্টের জন্য নতুন ও রিইস্যু আবেদন জমা পড়ত। এর মধ্যে ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার আবেদন জমা নেওয়া হতো। পাঁচ মাস ধরে সেই কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বড় ধরনের জটের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন আবেদন জমা নেওয়া শুরু হলে সক্ষমতা অনুযায়ী সেই চাপ সামলানোও কঠিন হয়ে পড়বে।