মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ রাবি শিক্ষার্থীরা, ফগার মেশিন থেকেও অকেজো


Abu Saleh Shoeb | Published: 2024-05-05 14:17:26 BdST | Updated: 2024-05-18 19:33:08 BdST

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মশার উপদ্রব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। মশক নিধনের অভিযান না করা এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের ড্রেন, নর্দমা, পরিত্যক্ত জায়গাগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় বেড়েছে মশার প্রজনন। দিনের বেলা কম মশা হলেও সন্ধ্যা নামলেই বাড়ে মশার উৎপাত। এতে ডেঙ্গুসহ নানা মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস ও হলের আশপাশের ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশা এমন আকার ধারণ করেছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

মশক নিধনের অভিযান পরিচালনা না করার ফলে মশার প্রকোপ বাড়ছে। এতে দিনে ও রাতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে বিশ্বিবদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, হলের ক্যান্টিন ও ডাইনিং, খাবারের হোটেল ও আড্ডা দেওয়ার জায়গাগুলোতে মশার প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মশার উপদ্রব প্রকট আকার ধারণ করলেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মশা নিধনের জন্য নিজস্ব দুটি ফগার মেশিন থাকলেও নেই তার ব্যবহার। ফলে মশার কামড়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসে মশার উপদ্রব কমাতে ২০২২ সালের মার্চ মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে দুটি ফগার মেশিন ক্রয় করে প্রশাসন। কিছুদিন ফগার মেশিনের ব্যবহার দৃশ্যমান থাকলেও এখন আর নেই তার কার্যক্রম। সেগুলো এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে পড়ে আছে বলে জানা গেছে। এদিকে মাত্রাতিরিক্ত মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দ আমীর আলী হল, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক হল, বঙ্গমাতা হলের পেছনের এলাকা রীতিমতো জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। রোকেয়া হলসহ রাবির বিভিন্ন আবাসিক হলের আশেপাশে ঝোঁপঝাড় অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে যততত্র অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ভবনের ড্রেন আবর্জনার স্তুপ হয়ে আছে। এতে সহজেই মশার প্রজনন হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের ড্রেন ও জলাশয়গুলোতে অতিরিক্ত আবর্জনা এবং ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল, হলের বাথরুম ও ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা। ফগার মেশিন থাকতে কেন মশার উপদ্রব কমাতে এসব ঝোপঝাড়ে নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে না, তাহলে ফগার মেশিন কেন ক্রয় করা হয়েছে?—এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।

মশার সমস্যার বিষয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জুনায়েদ বলেন, ‘আমাদের হলের পাশের ফাঁকা জায়গাগুলো পরিষ্কার না করায় তা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেনগুলোও ঠিক মতো পরিষ্কার করা হয় না। ফলে সহজেই মশা খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করেছে। এজন্য রাতে মশার জন্য রুমে থাকা দায় হয়ে যায়। সন্ধ্যা হলেই মশারি দিয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে পাড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।’

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আল ইমরান বলেন, ‘‘রাবি ক্যাম্পাসে দিনে প্রচণ্ড গরম এবং রাতে মশার কামড়ে শিক্ষার্থীরা প্রায় অতিষ্ঠ। মশার উপদ্রবে আমাদের পড়াশোনাতেও ব্যাঘাত ঘটছে। মশারি টানিয়েও আমরা অবস্থান করতে পারছি না। আগে ফগার মেশিন দিয়ে হলগুলোর আশেপাশে স্প্রে করা হলেও এখন আর স্প্রে করা হয় না। ফলে মশার উপদ্রব দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’’

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আলী বলেন, ‘‘মশার উপদ্রবে হলে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মশারি টানানো ছাড়া পড়াশোনা করা সম্ভব হচ্ছে না। দিনেও মশা কামড়ায়। তবে এ নিয়ে প্রশাসনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।"

মশার উপদ্রব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, "এ সময় ক্যাম্পাসে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। মশা নিধনের বিষয়ে আমাদের একটা কমিটি আছে। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমাদের ফগার মেশিনগুলো ঠিকঠাক আছে। কিন্তু মেশিনগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমি ইতোমধ্যে ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করতে নির্দেশনা দিয়েছি। আমি আজ আবারও কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেব।