সাংবাদিক নাজমুলের বই 'জালিয়াতি' তদন্ত করবে সংসদীয় কমিটি


Dhaka | Published: 2020-08-27 16:06:11 BdST | Updated: 2024-05-18 16:02:26 BdST

সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এর জন্য বই কেনা ঘিরে জালিয়াতি ও অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করবে সংসদীয় কমিটি।

বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ওই ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে আহ্বায়ক করে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উপ-কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আলী আজম, শিরীন আখতার ও মো. মোশাররফ হোসেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বই কেনার বিষয়ে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়ে তদন্তে উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রদিবেদন দেওয়া হবে জানতে চাইলে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, “কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে আমরা দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব।”

সম্প্রতি গণমাধ্যমে আসা খবরে বলা হয়, ৬৫ হাজার ৭০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারে’ দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৩৯টি বই কেনার অনুমতি দেওয়া হয়। এজন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৩০ কোটি টাকা। সেখান থেকে আপাতত ২৭ কোটি টাকায় আটটি বই কেনা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই বই সরবরাহের নামে ১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রকাশনা সংস্থা জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড। এছাড়া স্বাধীকা পাবলিশার্স নামের একটি প্রকাশনা হাতিয়ে নিচ্ছে আরও ৩ কোটি ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা।

এই দুটি প্রকাশনা সংস্থাই নাজমুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির, যিনি যমুনা টেলিভিশনে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের এক খবরে বলা হয়, প্রকল্পের মোট ২৮ কোটি ৭৮ লাখ ১২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ২০ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে পাচ্ছেন নাজমুল হোসেন।

দুই প্রকাশনা সংস্থার নামে তিনটি বই সরবরাহ করা হচ্ছে, যার সবগুলো নিয়েই অভিযোগ উঠেছে।

জার্নি মাল্টিমিডিয়ার নামে সরবরাহ করা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং বঙ্গবন্ধুর সমগ্র কারাজীবন নিয়ে ‘৩০৫৩ দিন’ নামের বই দুটি। আর স্বাধীকা পাবলিশার্স থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ‘অমর শেখ রাসেল’ বইটি।

এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটি প্রথম প্রকাশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর ‘৩০৫৩ দিন’ প্রকাশ করেছিল কারা অধিদপ্তর। সেই বই এখন জার্নি মাল্টিমিডিয়ার নামে প্রকাশ করে ১৭ কোটি টাকার বেশি পাচ্ছেন নাজমুল হোসেন।

আর ‘অমর শেখ রাসেল’ বইটি স্বাধীকা পাবলিশার্স প্রথম প্রকাশ করলেও এর সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য নাসরীন আহমেদকে না জানিয়েই তা প্রকাশ এবং বঙ্গবন্ধু কর্নারে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইয়ের সম্পাদক অমিতাভ দেউরীও তাকে না জানিয়ে বইয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ এবং বইয়ের ক্রেডিট লাইনে পরিবর্তন আনার অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, “যে অসাধু চক্র সম্পাদককে না জানিয়ে বইয়ের একাধিক সংস্করণ বের করতে পারে এবং মূল সংস্করণের সম্পাদনা পর্ষদের নাম ওলট-পালট করতে পারে তারা ৩২৪ পৃষ্ঠার এই বইয়ে আরও কী কী করেছে আমি জানি না।

“প্রাথমিকের লক্ষ লক্ষ শিশুর কাছে বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র নিয়ে যে বইটি যাবে সেখানে আমি এ ধরনের মিথ্যাচার হতে দিব না। এই বই করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনকাল অর্থাৎ ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল এই ৫৫ বছরকে ১০টি কালপর্বে ভাগ করে। বিস্তৃত গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা কাজটি করেছিলাম। সেখানে নাজমুল হোসেন ক্রেডিট লাইন পাল্টে প্রধান গবেষক সেজেছেন, তিনি সম্পাদনা পর্ষদে যে সব খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নাম ছিল সেখানেও ওলট-পালট করেছেন।”

‘অমর শেখ রাসেল’ বইটি নিয়ে নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে অধ্যাপক নাসরীন আহমেদ প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছেন বলে জানান তিনি।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য নাজমুল হোসেনের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটির প্রকাশক বদল ও ক্রেডিট লাইন বারবার পাল্টানোর ঘটনায় সম্পাদক অমিতাভ দেউরী গত ৩ অগাস্ট মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২), মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং নাজমুল হোসেনের নামে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ই-প্রাইমারি, স্কুল মনিটরিং ও ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়ে বছরভিত্তিক একটি পরিসংখ্যান মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পড়াশুনার খোঁজখবর নেওয়ার এবং পড়াশোনা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে আরও সচেষ্ট থাকার জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, আলী আজম, নজরুল ইসলাম বাবু, শিরীন আখতার, ফেরদৌসী ইসলাম ও মোশারফ হোসেন অংশ নেন।