গাজা পার্টিতে তরুণীকে ধর্ষণ: ঘটনার বর্ণনা দিলেন ভুক্তভোগী


Dhaka | Published: 2020-09-02 21:36:51 BdST | Updated: 2024-05-18 10:17:49 BdST

মৌলভীবাজারে গাঁজা খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করার পর ওই রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন সেই তরুণী। স্থানীয় সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খানের বাসায় ওই রাতের ঘটনা নিয়ে একজন ফেসবুকে পোস্ট করার পর গত সোমবার রাতে তিনি দু’টি মামলা করেন।

মামলার প্রধান আসামি বড়হাট এলাকার সজীব তুষার (২৩)। তার সহযোগী রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মারজিয়া প্রভা ও মৌলভীবাজারের কলিমাবাদের রায়হান আনছারীকে আসামি করা হয়েছে। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্য মামলার আসামি শহরের কাজীর গাঁও এলাকার মোস্তফা কামাল খান (২৪)।

আসামি তুষার ছিলেন ছাত্রফ্রন্টের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহর শাখার সভাপতি। ওই অভিযোগ ওঠায় তাকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা বাসদের বর্ধিত ফোরামের সদস্য রায়হানকেও ‘সাময়িক অব্যাহতি’ দেওয়া হয়েছে। আর মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খানকে অব্যাহতি দিয়েছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বলেন, ওই তরুণী ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। এছাড়া ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ ছবি পোস্ট করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপর মামলাটি দায়ের করেছেন।

ঘটনার বিবরণে ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘আমার পূর্বপরিচিত তুষারের সাথে ডিনার পার্টিতে গিয়েছিলাম। সেখানে সে আমাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেছিল, জানতাম না। প্রথমে গাঁজা খেতে চাইনি, কিন্তু প্রভা ও রায়হান ভাই বলায় খেয়েছিলাম। অল্প খেয়েই শরীর খারাপ লাগছিল। সাধারণ সিগারেটের কথা বলে তুষার আমাকে গাঁজা খাইয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘টেবিলে খেতে বসে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং ঘুমাতে চাই। তখন তুষার আমাকে বেডরুম দেখিয়ে দেওয়ার কথা বলে রুমে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।’ ‘দুর্বল হয়ে পড়ায়’ প্রতিরোধ করতে পারেননি বলেও জানান তিনি। পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

এত পরে মামলার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সম্মানহানির কথা ভেবে মামলা করতে চাইনি। পরে তারা ধর্ষণ নয় বলে বক্তব্য দেয়। আমি ধর্ষণের শিকার হব, আর স্বাভাবিক সেক্স বলে মিসট্রিট করা হবে, কতক্ষণ মেনে নেওয়া যায়? এসব মেনে নিতে না পেরে পরিবারের বাধা সত্ত্বেও মামলা করি।’

সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খান বলেন, ‘আমার বাসায় প্রভাকে গেস্ট করেছিলাম। সে ডিনার পার্টি করতে চাওয়ায় সম্মতি দিই। তুষার মেয়ে নিয়ে আসবে, গাঁজা নিয়ে আসবে, এসবের কিছুই প্রভা আমাকে জানায়নি।’

মামলার আসামি নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরামের (নাসাসু) সমন্বয়ক মারজিয়া প্রভা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার পর্যবেক্ষণ, বোঝাপড়া কোনটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছি না। যেহেতু পুরোটাই আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে! অভিযোগ ঘটনার দুদিন পরে প্রথম জানতে পারি, তখন থেকেই আমি আইনি প্রক্রিয়ার পক্ষে ছিলাম।’

প্রভা লিখেছেন, ‘প্রথমেই আমি মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানাবো। আমার ক্ষুদ্র ২৮ বছরের জীবনে যতটুকু নীতি নৈতিকতা নিয়ে কাজ করেছি, সেই জায়গা থেকে নারীবাদী হিসেবে মেয়েটির সাহসিকতাকে স্যালুট জানাই, হতে পারে তিনি আইনে আমার প্রতিপক্ষ।’

আর প্রধান আসামি তুষার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মামলা হয়েছে, ওয়ারেন্ট এসেছে। আত্মসমর্পণ করে আইনের কাছে নিজেকে সোপর্দ করবো। যদি আমি অপরাধী হই তবে ক্ষমা নয়, সর্বোচ্চ বিচারই চাইবো নিজের জন্য। কিন্তু যদি নির্দোষ প্রমাণিত হই, তবে যারা এই ঘৃণ্য অপরাধ করলেন, সবাইকে নিঃশর্তে ক্ষমা করে গেলাম।’