প্রচলিত নিয়মেই হবে বইমেলা


Dhaka | Published: 2020-12-16 01:15:39 BdST | Updated: 2024-05-16 23:00:31 BdST

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালকবাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালকপ্রকাশকেরা চাইছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা হোক। আজ প্রস্তাব বাংলা একাডেমিকে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে ২০২১ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ভার্চ্যুয়াল বা অনলাইনে করার জল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, চিরায়ত নিয়মে ফেব্রুয়ারি মাসেই হচ্ছে মেলা। তবে এবার ১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে না। প্রকাশকেরা চাইছেন, সামনের বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা হোক। আজ সোমবার সেই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে।

এর আগে গত শুক্রবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানিয়েছিলেন করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হবে না। পাঠকদের মধ্যে বইমেলা নিয়ে যেন কোনো সংশয় তৈরি না হয়, সে কারণে বিকল্প হিসেবে ভার্চ্যুয়াল আয়োজনের কথা তাঁরা ভাবছেন। গত বৃহস্পতিবার একাডেমির কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তে সমালোচনা করছেন লেখক ও প্রকাশকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, বাংলাদেশে শপিং মল, কলকারখানা এবং গণপরিবহন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে; সিনেমা হল খুলে দেওয়া হয়েছে, নাটক–সিনেমার শুটিং হচ্ছে, নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক হচ্ছে নিয়মিত। সে ক্ষেত্রে কেন বইমেলা বন্ধ রাখা হবে?

একুশে বইমেলা শুধু বেচাকেনার বিষয় নয়, এটি চেতনার সঙ্গেও জড়িত।একুশে বইমেলা শুধু বেচাকেনার বিষয় নয়, এটি চেতনার সঙ্গেও জড়িত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে বেশ জোরালো সমালোচনা হতে দেখা গেছে। লেখক, প্রকাশক, পাঠকেরা বলছেন, বইমেলার প্রকৃত আবহ ভার্চ্যুয়াল বইমেলার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। এটা লেখক ও পাঠকের মধ্যে যোগাযোগেরও জায়গা, এখানে আড্ডা হয়, গল্প হয়। তা ছাড়া একুশে বইমেলা শুধু বেচাকেনার বিষয় নয়, এটি চেতনার সঙ্গেও জড়িত।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক বলেন, প্রতিবছর বইমেলার জন্য পাঠকেরা যেমন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, তেমনি লেখক এবং প্রকাশকেরা বইমেলাকে ঘিরে তাঁদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ জন্য নতুন প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম মনে করেন, ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট বা পৃথিবীর অন্য দেশের বইমেলার সঙ্গে একুশে বইমেলাকে মেলালে হবে না। সেগুলো সাধারণ পাঠকের মেলা না, বই বিক্রি হয় না সেখানে। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে গিয়ে একুশে বইমেলার বিকল্প কিছু হতে পারে না।’ স্বাস্থ্যবিধির মানার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে বইমেলা আয়োজনে কোনো সমস্যা দেখছেন না এই প্রকাশক।

গতকাল বাংলা একাডেমির বইমেলার বিকল্প আয়োজনের প্রস্তাব সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা ছিল। তার আগেই শনিবার বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় প্রকাশকদের দুটি সমিতি। দুই সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ও ফরিদ আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ একতরফা সভায় ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২১’ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল সকালে প্রকাশক সমিতির নেতারা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে দেখা করেন। দেশের প্রায় আড়াই শ প্রকাশক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নেতারা কথা বলেন একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সেখানে ঠিক হয়, একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে ২০২১ সালে স্বাভাবিক বইমেলার আয়োজন করা হবে। তার আগে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রকাশকেরা একটি তারিখ উল্লেখ করে লিখিতভাবে দেবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকাশকেরা স্টল বরাদ্দের টাকা জমা দেওয়ার পর আমাদের দুই মাসের সময় দিলে আমরা মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি নেব।’

প্রতিবছর বইমেলার জন্য পাঠকেরা যেমন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, তেমনি লেখক এবং প্রকাশকেরা বইমেলাকে ঘিরে তাঁদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

লেখক, প্রকাশক, পাঠকেরা বলছেন, বইমেলার প্রকৃত আবহ ভার্চ্যুয়াল বইমেলার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।
রোববার রাতে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুটি সমিতি মিলে ঠিক করেছে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ মেলা আয়োজনের কথা ভাবছেন তাঁরা। এমনই প্রস্তাব দেওয়া হবে আজ। তখন শীতের প্রকোপ কমবে, আশা করা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতিও ভালো হবে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমি বইমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। স্টল বরাদ্দের আবেদনের বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। ৭ ডিসেম্বর ছিল স্টল বরাদ্দ চেয়ে আবেদনের শেষ সময়। কিন্তু প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আবেদন করেনি। বাংলাদেশে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা দেশের প্রকাশকদের অবস্থা ভালো নেই। তা ছাড়া অতীতে মূলত জানুয়ারি মাসে আমরা আবেদন করতাম, ভাড়ার টাকা জমা দিতাম। এবার আমরা আবেদনের সময় বাড়ানো, স্টল বা প্যাভিলিয়নের ভাড়া কমানো এবং প্রণোদনা চেয়েছিলাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে। তিনি মৌখিকভাবে সম্মতিও জানিয়েছিলেন। পরে এ বিষয়ে আর অগ্রগতি হয়নি।’