মুজিবনগর দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি


Dhaka | Published: 2022-04-18 05:57:54 BdST | Updated: 2024-05-18 22:36:25 BdST

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ সমগ্র দেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনসহ সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আজ ১৭ এপ্রিল রবিবার বিকাল ৩টায় শাহবাগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ডকুমেন্টারী প্রদর্শন কর্মসূচীতে এই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি নূর আলম সরদার। আলোচনা সভায় আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিমসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভা ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ডকুমেন্টারী প্রদর্শন কর্মসূচী শুরু করা হয়। আলোচনা সভা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা সভার বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে মুজিবনগর সরকার' নামে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তান কারাগারে বন্দী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাঁকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন এই সরকারের দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি লাভ করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। এরই মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বারবার দাবি করা সত্ত্বেও ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্প্রতি শুধুমাত্র মেহেরপুর জেলায় ১৭ এপ্রিলকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সরকারের নিকট এধরণের সিদ্ধান্ত কখনোই কাম্য নয়। সমগ্র দেশে ১৭ এপ্রিলকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকগুলোতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ভূমিকা ও অবদান গুরুত্বসহকারে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মকে জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জাতীয় চারনেতা ও মুজিবনগর সরকার নিয়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ব্যবস্থা করতে হবে।"

বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, "১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ষোষিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এইদিন থেকে এই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে।"

বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের লক্ষে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।"

ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন,
"১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বে-আইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়-নীতি বর্হিভূত এবং বিশ্বাস ঘাতকতামূলক যুদ্ধ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুজিবনগর সরকার বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন।"

সভার সভাপতি নূর আলম সরদার বলেন, "১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, "তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা হয়। নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম বলেন, "মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।"