শিক্ষার্থীদের জীবনের নেতিবাচক সময়কে নিয়ে বেশি চিন্তা না করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, জীবনের নেতিবাচক সময়কে নিয়ে বেশি চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। সময় পরিবর্তন হলে সমস্যার সমাধানও হয়।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র-উপদেষ্টাদের নিয়ে আয়োজিত ‘মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিং’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্যকালে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোজন ক্ষমতা ও সহপাঠীদের প্রতি দায়িত্ববোধের ভূয়সী প্রশংসা করে অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এর মাধ্যমে পরিবার থেকে দূরে থেকেও তারা অসহায়ত্ববোধ করেন না। তাই শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের পারস্পরিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে খারাপ সময় অতিক্রম করার শক্তি জোগাবে।
এ সময় সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেছে, তা থেকে উত্তরণের ওপর এমন কর্মশালা সকলের জন্য কার্যকরী বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেই সঙ্গে সমাজে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে অনুষদভিত্তিক শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিন্তার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। এছাড়া কর্মশালাটি পরিচালনা করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ড. সিফাত-ই সাইয়েদ।
কীভাবে ভালো থাকা যায়, মনের যত্ন কীভাবে নেওয়া যায়- এসব বিষয় ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে মনের যত্ন এবং তরুণদের মনের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটি নিয়ে বক্তারা কর্মশালায় বিস্তর আলোচনা করেন। প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ছাত্র-উপদেষ্টাগণের উপস্থিতিতে ওই কর্মশালাটি সম্পন্ন হয়।
কর্মশালায় বক্তব্যকালে ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ মানসিক চাপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার পাশাপাশি কীভাবে মানসিক চাপকে যথাযথভাবে শনাক্তকরণের মাধ্যমে সেগুলো মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি সমাজে মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে উদাসীনতা রয়েছে, সেগুলো দূর করার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ড. সিফাত-ই সাইয়েদ। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আশপাশের বন্ধুদের যাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজন আছে, তাদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে পিতামাতার সাথে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেন।
এছাড়া কর্মশালার সভাপতির বক্তব্যে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী ও ছাত্র-উপদেষ্টাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা আয়োজনের জন্য সকলকে স্বাগত জানান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।
তিনি বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বহুমাত্রিক বিভাগ রয়েছে এবং বিশ্বায়নের যুগে বাজার অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী চলতে গিয়ে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নানাবিধ মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়ছে বা উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমতাবস্থায়, এরকম কর্মশালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শত ব্যস্ততার মাঝেও কর্মশালাটির উদ্বোধনে উপস্থিত হওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
