আজ টম অ্যান্ড জেরির ৮০তম জন্মবার্ষিকী


Dhaka | Published: 2020-02-11 02:38:47 BdST | Updated: 2024-05-05 23:01:46 BdST

জেরি ইঁদুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বিড়াল টম। দুষ্টু জেরিকে শায়েস্তা করতে একদিন ইঁদুরধরা যন্ত্রের ভেতর পনির দিয়ে ফাঁদ পাতল সে। জেরি তো আর অত বোকা নয়। টম চলে ডালে ডালে, জেরি চলে পাতায় পাতায়। ফাঁদে পা না দিয়ে ঠিকই সে চেটেপুটে খেয়ে নিল সেই পনির। এভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। টমকে নাস্তানাবুদ করেই ছাড়ছে জেরি। দশকের পর দশক সেসব দেখে হেসে লুটোপুটি খেয়ে যাচ্ছে শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধরা। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি টম ও জেরির ৮০তম জন্মদিন আজ।

৮০ বছর ধরে পৃথিবীর মানুষকে নিষ্ঠার সঙ্গে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই কার্টুন চরিত্র। ১৯৪০ সালের এই দিনে উইলিয়াম হানা ও জোসেফ বারবেরা প্রথম দর্শকের সামনে আনেন টম ও জেরিকে। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তাঁরা নির্মাণ করেছিলেন কার্টুনটির ১১৪টি পর্ব। আর তা এই ১৮ বছরে একাডেমি পুরস্কারে স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র বিভাগে সাতবার জিতে নিয়েছিল সেরার পুরস্কার।


‘টম অ্যান্ড জেরি’র প্রথম পর্ব পুসি গেটস দ্য বুট থিয়েটারে দেখানো হয় ১০ ফেব্রুয়ারি। নির্মাতা হানা ও বারবেরা দুজনের বয়সই তখন ৩০-এর নিচে। শুরুতে টমের নাম ছিল জাসপার আর জেরির জিঙ্কস। প্রথম পর্বের শুরুতে টম জেরির লেজ নিয়ে খেলা করত, জেরিকে বল বানিয়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলত। প্রথম পর্বটিই জিতে নেয় অস্কার এবং কোটি কোটি মানুষের হৃদয়। অসংখ্য মানুষ চিঠি লিখে জানায়, তারা টম ও জেরিকে আরও চায়।টম অ্যান্ড 


বড় পর্দায় চার্লি চ্যাপলিনকে দেখে বারবেরা শিখেছিলেন, সংলাপ ছাড়াই কেবল চরিত্র দিয়েই তৈরি হতে পারে দুর্দান্ত কমেডি। সেটাই করেছিলেন তিনি। প্রতিটি পর্ব তৈরি করতে তখন খরচ পড়ত সাড়ে চার লাখ টাকা। তাই বছরে ছয় থেকে সাতটির বেশি পর্ব তৈরি করা সম্ভব হতো না। কার্টুন বিশেষজ্ঞ জেরি বেক বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আপনি ছোটবেলায় যে টম অ্যান্ড জেরি দেখেছেন, আর এখন যেগুলো দেখেন, কোনটা কবে বানানো সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাবেন না। অ্যানিমেশনের মজাটাই এখানে। এটি চিরসবুজ। কখনো পুরোনো না হয়ে আবেদন ধরে রাখে। অনেকটা শিল্পীদের আঁকা ছবির মতো। সেটা যদি ১৭ বা ১৮ শতকেও আঁকা হয়, আজকের দিনেও সেটা নতুনের মতো কথা বলবে। টম অ্যান্ড জেরির ক্ষেত্রে সেটা আর একটু বেশি সত্য।’

অবশ্য ১৯৫৭ সালের পর ১৯৬১-৬২ সালে জিন ডাইচ যখন টম অ্যান্ড জেরি পরিচালনার দায়িত্ব নেন, তখন নিয়মিত বিরতিতে এই কার্টুনের ১৩টি পর্ব ‘সবচেয়ে বাজে কার্টুন’ তকমা পায়। মার্কিন-চেক এই পরিচালক নিজেও স্বীকার করেছেন, টম অ্যান্ড জেরির ব্র্যান্ডকে তিনি ডুবিয়েছেন। মূল নির্মাতাদের বানানো কার্টুনগুলো না দেখেই তিনি সেটা বানিয়েছিলেন। কারণ, সেগুলো তখনো প্রাগে পৌঁছায়নি। একই সময়ে প্রাগে নিজের স্টুডিওতে বসে চুপিচুপি তিনি পাপাই কার্টুন বানাচ্ছিলেন। তিনিই জানিয়েছেন, ‘বাজে টম অ্যান্ড জেরি’ বানানোর জন্য ভক্তদের কাছ থেকে মৃত্যুর পরোয়ানা পর্যন্ত পেয়েছেন তিনি। এরপর ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অসংখ্য নির্মাতা মিলে পুনরুজ্জীবিত করেছেন এই চরিত্র দুটিকে।

কার্টুনে আটকে রাখা যায়নি টম ও জেরিকে। ১৯৭৫ সালে একই নামে শুরু হয় টেলিভিশন সিরিজ। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চলেছে টম অ্যান্ড জেরি কমেডি শো। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত চলেছে আরেকটি সিরিজ, নাম টম অ্যান্ড জেরি কিডস। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলেছে টম অ্যান্ড জেরি টেলস। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলছে দ্য টম অ্যান্ড জেরি শো।

জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত টম অ্যান্ড জেরি: দ্য মুভি মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে। তাদের নিয়ে আরও একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে এ বছর।

এখনো, আশিতেও শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাইকে হাসানোর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে টম অ্যান্ড জেরি। উইলিয়াম হানা চলে গেছেন ২০০১ সালে, ৯০ বছর বয়সে। এর পাঁচ বছর পর ২০০৬ সালে ৯৫ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়েছেন এই কার্টুনের আরেক জনক জোসেফ বারবেরা। টম আর জেরি মিলে শৈশব রাঙিয়ে যাচ্ছে বহু মানুষের—সঙ্গী হয়েছে অবসর, একাকিত্ব এবং মন খারাপের।