বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ রক্তঝরা ইতিহাস। এক সাগর রক্ত ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা।
বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা দিবস নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী । তাদের কথাগুলো তুলে ধরেছেন—রিশাদ হোসেন।
স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক
আব্দুল হামিদ
শিক্ষার্থী, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং
আমরা স্বাধীনতার ৫৩তম বছরে পদার্পণ করেছি। স্বাধীনতার এতোগুলা বছর খুব সহজেই অতিবাহিত হয়নি। অনেক বাধা-বিপত্তি ও দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমরা নানা সূচকে অগ্রগামী হলেও সর্বস্তরের দোরগোড়ায় স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল কতটুকু পৌঁছেছে এটি একটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।
প্রশাসনে অধিকতর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনা, দুর্নীতি নির্মূলে সরকারি নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন, অর্থপাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং সর্বত্র বৈষম্য দূর করে জনবান্ধব নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক, এমনটাই প্রত্যাশা।
স্বাধীনতা দিবস আমাদের শোককে শক্তিতে রুপান্তর করতে শেখায়
মোঃ ফারুক
শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ
কথায় আছে সোনা পুড়ে খাঁটি হয়। যার ব্যাতিক্রম ঘটেনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য নেতৃত্বে ১৯৭১ এর দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি রয়েছে মায়ের বুক খালি করার বেদনা, রয়েছে মাতৃ হারা পিতৃ হারার বেদনা। নির্যাতিত হয়েছে আমাদের অসংখ্য মা-বোনেরা, স্বীয় বাড়ি ছেড়ে রয়েছে দূরদূরান্ত।এই সকল শোক-দুঃখ আমাদের হৃদয়কে ভেঙে দিয়েছিল।কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আমরা আমাদের শোককে শক্তিতে রুপান্তর করেছি।
আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছি। আর এই শোক-রুপান্তর শক্তিই আমাদের যুগিয়েছে মুক্তির প্রেরণা, এনে দিয়েছে অসাধ্যকে সাধন করার শক্তি, অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা।
তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে শোককে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে আমরা সকলের জন্য ন্যায়বিচার ও সমতার সমাজ গড়ে তুলব।
শহীদের রক্তকে অর্থবহ করার দায়িত্ব আমাদের
রেহেনুমা সেহেলী কবির
শিক্ষার্থী,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ।
'স্বাধীনতা'-শব্দটি যতটা শ্রুতিমধুর ততটাই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর।পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করা জাতিই জানে স্বাধীনতার কি মর্ম!তবে এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও বেশি কঠিন।তাই স্বাধীনতা রক্ষার পাশাপাশি এই পবিত্র মাতৃভূমিকে ভালোবেসে জীবন বিসর্জন দেওয়া শহীদের রক্তকে স্বার্থক করতে হলে ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।ধর্ম,বর্ণ ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য কিংবা নিরাপত্তা হীনতায়, এই স্বাধীন দেশটি যেনো কারো স্বাদ-হীন বোধ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর এই জন্য আমাদের তরুণ প্রজন্মকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।আমরা যে যার অবস্থান থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলেই আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির উন্নয়ন করা সম্ভব,এই মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন
রুবাইত তাহসিন
শিক্ষার্থী, ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগ
২৬ শে মার্চ শুধুমাত্র একটি দিন না, ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে পাওয়া একটি পরিচয়।
শুধুমাত্র এই দিনটি পালন করলেই হবে না এই দিনের মাহাত্ম্য বুঝে আমাদের দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে। আমাদের মাথায় রাখতে হবে,
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।
সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ও দেশকে স্বাধীন করার জন্য তরুণ সমাজ যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তেমনি বর্তমান তরুণ সমাজের উচিত দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসির জন্য, দেশের উন্নতির জন্য সবসময় কাজ করে যাওয়া এবং বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।