দেশের স্বার্থেই বুয়েটসহ সকল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকা অপরিহার্য


Desk report | Published: 2024-04-02 21:57:24 BdST | Updated: 2024-04-30 00:11:22 BdST

বর্তমানে দেশের সবথেকে আলোচিত ইস্যু বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে। এই ইস্যুটিকে কেউ কেউ আরো ব্যাপ্তি দিয়ে সকল ক্যাম্পাসেই ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকার প্রশ্ন তুলছে।ছাত্ররাজনীতির নানা খারাপ দিক ঢালাওভাবে প্রচার করে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে। এই অংশটির বড় একটি অংশ ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করার সুযোগ নিতে চায়। কারণ ক্যাম্পাসগুলোতে যেহেতু বর্তমানে শিবির বা ছাত্রদলের প্রকাশ্য অবস্থান নেই, তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করার নামান্তর মাত্র। এই সূক্ষ্ম বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে হলেও নিরপেক্ষতার মুখোশ পরে যারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বুলি ছড়াচ্ছে তাদের বেশিরভাগেরই প্রকৃত উদ্দেশ্য কী সেটা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এই অংশটি কী আসলেই বুয়েটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চায়? নাকি ছাত্রলীগকে ব্যাকফুটে ফেলতে তাদের এই অবস্থান?

ছাত্ররাজনীতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন কিনা সে প্রশ্নের উত্তর অতীতে বারংবার দিয়েছে বাংলার ছাত্রসমাজ। ৫২ তে ভাষা আন্দোলন থেকে ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন ৬৬'র ছয় দফা কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধ! ছাত্ররাজনীতি আশীর্বাদ হয়ে দেশকে বা দেশের মানুষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে দ্বায়িত্ব নিয়েই। যে গোষ্ঠী পান থেকে চুন খসলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে সে গোষ্ঠীও অবলিলায় এসব বিষয় স্বীকার করেন। তবে এখন যেহেতু সে কঠিন বাস্তবতা নেই তাহলে এখন থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমি এই বিশেষ গোষ্ঠীকে পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই, কঠিন সময় নেই, কিন্তু আসতে কতক্ষণ? তখন চর্চা না থাকলে আলু পটলের মত ছাত্ররাজনীতি কিনে আনতে পারবেন নিমিষেই? মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কী দেশে কঠিন সময় আসেনি? এদেশের ছাত্রসমাজকে কী স্বৈরাচার মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হয় নি? রাজাকারদের যৌক্তিক ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে রাজপথে নামতে হয়নি? করোনাকালীন সময়ে মানবিক প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামতে হয়নি?

দ্বিতীয়ত, দেশপ্রেম হলো একটি চর্চার বিষয়। দেশ নিয়ে, দেশের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা, দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো যেমন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, মহান বিজয় দিবস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, জাতীয় শোক দিবস প্রভৃতি যথাযথাভাবে পালন করা, এসব দিবসের তাৎপর্য জানা, দেশের সমস্যা সংকট চিহ্নিতকরণ ও নিরসন এসবই দেশপ্রেমের চর্চা।

দেশের ক্যাম্পাস গুলোতে এখন দেশপ্রমের চর্চা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছাত্রসংগঠন ছাড়া আর কারো মাথাব্যাথা কী পরিলক্ষিত হয়? পালিত হলো কী হলো না, যথাযোগ্য মর্যাদায় হলো কিনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিচ্ছে কিনা এসবের পাহারাদারের ভুমিকায় আর কাউকে কী দেখা যায়?
অবশ্যই না! দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে যতদিন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছাত্রসংগঠনের অস্তিত্ব থাকবে ততদিনই ক্যাম্পাসগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাসের চর্চা হবে। দেশবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিতে পারবে না।

বুয়েটে চার বছরের অধিক সময় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকার ফলে তথা স্বাধীনতার সপক্ষের ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম না থাকার ফলে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখিত বিষয়গুলোকে সমর্থন করে। যেমন আমরা দেখতে পেয়েছি, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা একদিকে নিজেরা স্বপ্রণোদিত হয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে অংশ নেয় নি, অন্যদিকে যে ক'জন স্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে এসব দিবস পালনে স্বচেষ্ট হয়েছে তাদেরকেই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন করেছে। সম্প্রতি সেখানে দেশের জন্য হুমকি, ধর্ম ব্যবহার করে জঙ্গীবাদ সৃষ্টিকারী সংবেদনশীল গোষ্ঠীর তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

আর তাই বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবেই বলছি, দেশের স্বার্থেই ক্যাম্পাসগুলোতে সঠিক ধারার এবং মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে এমন সংগঠনগুলোর অবাধ রাজনৈতিক অধিকার থাকা উচিত। সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে মৌলবাদী গোষ্ঠী এটা যেন এক মূহুর্তের জন্যও আমরা ভুলে না যায়।ভাল থাকুক প্রাণের বাংলাদেশ।

লেখক
এ জেড এম বর্নী
শিক্ষার্থী, মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।