ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিতে বিভক্তি


Dhaka | Published: 2020-12-02 05:14:53 BdST | Updated: 2024-05-10 19:30:59 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিভক্ত দুটি পক্ষ। একটি অংশ সাংগঠনিক কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি করেন। আর যাদের কমিটি ভেঙে দিতে বলা হচ্ছে তাদের দাবি, বর্তমান নেতৃত্বে ঢাবি ছাত্রদল সুন্দরভাবে চলছে। কমিটি নিয়ে বিভক্তির মাঝেও একই দাবিতে দুই পক্ষ পৃথক কর্মসূচিও আজ মঙ্গলবার পালন করেছে।

রাকিবুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও মো. আমানউল্লাহ আমানকে সদস্যসচিব করে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৯১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের করা এই কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। এই আহ্বায়ক কমিটি ইতিমধ্যে ১১ মাস পার করেছে। সংগঠনের একাংশ এই কমিটি ভেঙে দেওয়ার পক্ষে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিববাড়ী এলাকা থেকে মিছিল বের করে কমিটি ভেঙে দেওয়ার পক্ষে থাকা এক অংশ। পরে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করে এ অংশটি। তাদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করে রাকিব-আমান নেতৃত্বাধীন মূল কমিটি। পরে রাজু ভাস্কর্যে তাদের সমাবেশ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলছেন, তাঁদের কমিটি থাকবে কি থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। রাকিব বলেন, ‘দীর্ঘ বিরতির পর ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছে। এখন আমাদের নেতৃত্বে সংগঠন সুন্দরভাবে চলছে। পৃথক কর্মসূচি করাটা সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে নেতৃত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এ ধরনের কাজ থেকে সবার সরে আসা উচিত। ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির ৪৭ জন যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে ৩-৪ জন পৃথক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাই এটি নিয়ে মন্তব্য করারও কিছু নেই। সাংগঠনিক বিষয় সাংগঠনিক পর্যায়েই রাখা উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে থাকা অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন। রাকিব-আমান নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটিকে তিনি ‘অযোগ্য ও অথর্ব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি  বলেন, এই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তিন মাসের জন্য কমিটি হয়েছিল, কিন্তু ইতিমধ্যে ১১ মাস পার করেছে। সংগঠনের স্বার্থে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে এসেছি। কিন্তু এই ১১ মাসে রাকিব ও আমান সংগঠন কোনো সাধারণ সভা করেননি, জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে গেছেন। তাঁদের সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও সমন্বয়হীনতায় কেন্দ্রীয় নেতারাও বিরক্ত। তাঁদের নেতৃত্বগুণের অভাব আছে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড অবশ্যই সংগঠনের শৃঙ্খলার পরিপন্থী। আমরা অযোগ্য ও অথর্ব এ কমিটি ভেঙে দিয়ে সংগঠনের সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয় করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি চাই। এর মাধ্যমেই সংগঠনের শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে।

দুই কর্মসূচিতে যা হলো
ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মূল কমিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে রাকিবুল ইসলাম বলেন, সরকার অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক উপায়ে রাজধানীর মোগলটুলীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। নামটি পুনর্বহালের দাবি জানান তিনি।

এই কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরউদ্দীন আহমেদ, আশরাফুল ইসলাম খান, সোহেল রানা, এ বি এম এজাজুল কবির, সজীব মজুমদার, শাফি ইসলাম, সদস্য তরিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দুই শতাধিক নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন বলে দাবি করেন রাকিবুল ইসলাম।

কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে থাকা অংশ শিববাড়ী এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করে। এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন বলেন, সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে। এসব ঘৃণ্য কাজ করে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলা যাবে না। আমরা অনতিবিলম্বে ওই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম পুনর্বহালের দাবি জানাই।

এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ এম আবু জাফর, হাসানুর রহমান, সদস্য আনিসুর রহমান খন্দকারসহ ৪০ নেতা-কর্মী অংশ নেন বলে দাবি করেছেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন।