সমুদ্রের প্রেমে পরেছি


শাহরিয়ার আমিন | Published: 2017-11-22 03:20:58 BdST | Updated: 2024-05-11 23:51:23 BdST

১৫ নভেম্বর ২০১৭। সন্ধ্যা ৬ টা । মারুফ ভাইয়ের কল.....
-শাহরিয়ার। কোথায়...?
-ভাই, হলে আছি ।
-দ্রুত অফিসে চলে আসো।
ব্যাগ গোছানোই ছিল। ছুটলাম অফিসের দিকে। ততক্ষণে সবাই চলে এসেছে। ‘সাংবাদিক সমিতি’ লিখা টি-শার্ট হাতে নিতেই ইউসুফ ভাই বলল চলো রওনা হই। জব্বারের মোড়ে খাওয়া শেষ করে অটো নিয়ে চললাম ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে।

আমরা ১১ জন। সবাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (বাকৃবিসাস) সদস্য। রাত ৮ টার ‘বিজয় এক্সপ্রেস’ ট্রেনে উঠলাম। গন্তব্য চট্টগ্রাম। ভোরেই চট্টগ্রাম স্টেশনে নামলাম সবাই। এরপর সৌদিয়া বাসে করে সরাসরি কক্সবাজার।

১৬ নভেম্বর। সকাল প্রায় ৮ টা। হোটেল আগেই বুকিং দেয়া ছিল। আমরা ‘হোটেল গ্র্যান্ড বিচে’ ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হলাম। এরপর সকালের নাস্তা করেই বের হলাম সমুদ্রপানে। দেখব পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। আমরা ১১ জন ছুটলাম লাবণী পয়েন্টে। সমুদ্রের বিশালতায় বিমোহিত হলাম। সমুদ্রও যেন আমাদের পেয়ে উচ্ছ্বাস করছে। গর্জন শুনিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে তার উদারতা। সমুদ্র তীরে দৌঁড়াদৌঁড়ি করলাম কিছুক্ষণ। এরপর শুরু হলো সমুদ্র তীরের উত্তপ্ত বালুতে ফুটবল খেলা। খেলা শেষে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সমুদ্রের বুকে। সমুদ্র পাড়েই ক্যামেরাম্যান ঠিক করা হল। আমরা সমুদ্রে গোসল, লাফালাফি আর ঢেউয়ের সাথে খেলা করছি। আর ক্যামেরাম্যান ব্যস্ত আমাদের সকল আনন্দ-উৎসবকে দৃশ্য বন্দি করে রাখতে।

ওঁরা ১১ জন, ইনানী সি বিচ

 

সমুদ্রপাড়ে অনেক মানুষ। সবাই এসেছে সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে। উল্লসিত সবাই। সি-বোট চোখে পড়তেই সিফাত ভাই ড্রাইভারের সিটে। আর আমি যাত্রীর বেশে উঠে পড়লাম। সমুদ্রে দুজন মিলে অনেকক্ষণ ঘুরলাম। প্রতিটি মুহূর্তেই নতুন অনুভূতি তৈরি হচ্ছে।

দুপুর গড়িয়ে এল। হোটেলে এসে ফ্রেশ হলাম। সামুদ্রিক মাছ দিয়েই লাঞ্চ করলাম সবাই। এরপর বিশ্রাম। বিকেলে চান্দের গাড়িতে উঠলাম। রওনা হলাম হিমছড়ী আর ইনানী বিচের দিকে। হিমছড়ী নেমেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলাম। একদিকে পাহাড়। আরেকদিকে সমুদ্র। এ যেন এক অপূর্ব জায়গা। মনে পড়ল মহান আল্লাহর অসীম নিয়ামতের কথা। পবিত্র কোরানের সুরা ‘আল হিজরের’ ১৯ তম আয়াত- “আমি ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি।”

এরপর ইনানী সি-বিচে সমুদ্রের সাথে নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠল। সাদা টি শার্ট পড়েছি সবাই। অনেক ছবি তুললাম। সমুদ্রের গর্জন শুনেছি। মিষ্টি ডাব খেয়েছি। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এলো। ফিরে এলাম চান্দের গাড়িতেই। সবাই গান ধরেছি। সাথে ঝুনঝুনির বাজনা। এ যেন অন্যরকম এক মুহূর্ত। এরপর বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটা করলাম। বাড়ির মানুষ, প্রিয়জন সবার জন্যই কেনার চেষ্টা করলাম।

পরের দিন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া খারাপ থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। তবে আনন্দ থেমে থাকেনি। সকালেই স্পীড বোটে পাড়ি জমালাম দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ ‘মহেশখালীতে’। এরপর পাহাড়ের উপরে অবস্থিত আদিনাথ মন্দির পরিদর্শন করলাম।

কেউ কেউ বলল, মহেশখালীর বিখ্যাত পান আর ডাব না খেলে কি হয়? পান আর ডাব দুটোই মিষ্টি। প্রাণভরে খেলাম। এরপর গেলাম বৌদ্ধমন্দির দেখতে। ততক্ষণে বিকেল হয়ে গেছে। স্পিডবোটে ফিরে এলাম হোটেলে। ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় ৪ জনকে ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে হলো। ‘ওরা ১১ জন’ টিমের নাম বদলে গেল। নতুন নাম ‘ওরা ৭ জন’।

পরদিন সকালে নাস্তা শেষে সুগন্ধা বিচে এলাম। এদিনে আরও মজা হয়েছে। ফুটবল খেলা, সমুদ্রে বুকে ভেসে বেড়ানো, ঢেউয়ের সাথে সঙ্খতায় সারাদিন কেটে গেল। সন্ধ্যা বেলা। সমুদ্রের পাশেই বিভিন্ন দোকান ঘুরলাম। প্রিয়জনের নাম শামুকের গায়ে লিখতে দিলাম আমরা কয়েকজন। এসময় লুকোচুরি খেলা শুরু হলো। কার নাম লিখা হবে? জানার জন্য কৌতূহলী ছিলাম সবাই।

ইনানী সি বিচে ওঁরা ১১ জন

 

রাতের সমুদ্র গর্জন করছে। গভীররাত পর্যন্ত তীরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। সবাই হাসিঠাট্টা, গল্প ও আড্ডায় মেতেছি। সেদিন রাতেই ময়মনসিংহের উদ্দেশ্য রওনা হই। কক্সবাজার থেকে ঢাকা। তুবা লাইনের এসি বাসে আমরা। ঘুমের ঘোরে কখন যে ঢাকায় পৌঁছালাম বুঝতে পারিনি।

২০ নভেম্বর ২০১৭। সকাল সাড়ে ৭ টা। বাস থেকে নেমেই ঢাকায় বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ‘তিস্তা এক্সপ্রেস’ হয়ে সরাসরি ময়মনসিংহ। ট্রেনের কেবিনেও যেন গানের আসর বসেছে। ট্রেন থেকে নেমে ফিরে এলাম চিরচেনা সেই ক্যাম্পাসের কাছে।

মন..এখনো পরে আছে সমুদ্রের কাছেই। অল্প কয়েকদিনেই সমুদ্রের প্রেমে পড়েছি আমি। তার সাথে কাটানো দিনগুলি আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। সমুদ্রের সেই বিশালতা, উদারতায় মুগ্ধ আমি। বারবার ফিরে যেতে চাই সমুদ্র পানে। বারবার..........।

লেখক: সাংবাদিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (বাকৃবিসাস)

আইএইচ/ ২১ নভেম্বর ২০১৭