সেই রায়হানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি পুলিশ


Dhaka//thedailystar | Published: 2020-08-20 01:31:05 BdST | Updated: 2024-05-19 03:01:50 BdST

মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি মালয়েশিয়ার পুলিশ। তাই শিগগির তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আজ বুধবার দুপুর পৌনে ৩টায় রায়হানের আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা ও সেলভারাজ চিন্নিয়াহ এ কথা বলেছেন।

করোনা মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গত ২৪ জুলাই রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৪ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর ৬ আগস্ট পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১৩ দিন মঞ্জুর করেন। আজ রায়হানের রিমান্ড শেষ হয়েছে।

সুমিতা শান্তিনি কিষনা বলেন, ‘রায়হানের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন তার করোনা পরীক্ষা করা হবে। এরপর উড়োজাহাজের টিকিট প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আমরা আশা করছি, দ্রুতই সে দেশে যেতে পারবে। হয়তো চলতি সপ্তাতেই।’

এর আগে ৫ আগস্ট মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দিজাইমি দাউদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের পরবর্তী ফ্লাইট যাবে ৩১ আগস্ট। সেই ফ্লাইটে তাকে পাঠানো হবে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, রায়হান আর মালয়েশিয়া যেতে পারবেন না। কারণ তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।

গত ৩ জুলাই আল-জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে দেখানো হয়েছে, কর্মহীন ও খাবারের সংকটে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আল-জাজিরার ওই প্রামাণ্য প্রতিবেদনে মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে বক্তব্য দেন রায়হান কবির। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশ তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে। ২৪ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের ২১টি সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে।

.

রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির নিন্দা জানিয়ে মালয়েশিয়ার আইনজীবীদের সংগঠন ল’ ইয়ারস ফর লিবার্টি (এলএফএল) বলেছে, রায়হানের বিপক্ষে যেভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে তা নিপীড়নমূলক। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে রায়হানের বক্তব্যটি তারা দেখেছেন। সেখানে খুব সূক্ষ্মভাবে বিচার করলেও মালয়েশিয়ার আইনের কোনো রকম লঙ্ঘন ঘটেনি। এখানে কেবল অভিবাসীদের ওপর দুর্ব্যবহারের ব্যাপারে তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছিলেন রায়হান।

গ্রেপ্তারের আগে রায়হান দ্য ডেইলি স্টারকে এক বার্তায় বলেন, ‘আমার অপরাধটা কী? আমি তো কোনো মিথ্যা বলিনি। প্রবাসীদের ওপর যে বৈষম্য ও নিপীড়ন চলেছে, আমি শুধু সেই কথাগুলো বলেছি। আমি চাই প্রবাসে থাকা কোটি বাংলাদেশি ভালো থাকুক। আমি চাই পুরো বাংলাদেশ আমার পাশে থাকুক।’

পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান বারবার বলেন, কোভিড-১৯ চলাকালে প্রবাসীদের প্রতি যে আচরণ তিনি দেখেছেন সেটাই তিনি বলেছেন এবং এগুলো তার একান্তই নিজস্ব অনুভূতি। তবে মালয়েশিয়ার কাউকে তিনি আহত করতে চাননি।

রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। বাবা-মা আর দুই ভাই-বোনের পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দরে নিজ এলাকাতেও সবার কাছে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত রায়হান। এলাকার সবার বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। নিজের বই, টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের। এলাকায় মাদক চোরাকারবারের বিরুদ্ধে দারুণ সোচ্চার ছিলেন তিনি।

রায়হানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি শুনে তার বাবা শাহ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি আমার ছেলে সারাজীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু নিজে কখনো অন্যায় করেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি কবে আমাদের রায়হান আমাদের কাছে আসবে। যেদিনই আমাদের ছেলে আমাদের কাছে আসবে সেদিনেই হবে আমাদের ঈদ।’

দ্য ডেইলি স্টার