চটপটি বানিয়েছিলাম হুট করে, তো তার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। ১০০ ফিটে একটা গাছের নিচে বসেছি, সুন্দর পরিবেশ, গল্প করা, খাওয়া দাওয়া করা যায়,পার্কের মতো। যেই না বক্সটা খুলে খাওয়া শুরু করেছি, সে খেয়াল করলো যে আমরা বসেছি পিঁপড়ার আড্ডাখানায়, লাল পিঁপড়া । একটু সরে বসলাম, কিন্তু ওদের আনাগোনা রয়েই গেছে।
ও হুট করে বলে উঠলো,ওদেরকে একটু চটপটি খেতে দিই। আমি ভড়কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, পিঁপড়াদের চটপটি দিবা তুমি? পাগল হইছো?
ওর সাবলিল হাসিমাখা উত্তর, তাতে কী? পিঁপড়া বলে কী ওদের ক্ষুধা লাগে না? ওদের কি খেতে ইচ্ছা করে না? তুমি ওদের সামনে বসে চটপটি খাচ্ছো,ওদের খারাপ লাগবে না? ওদের এলাকায় এসে ওদেরকে না দিয়ে খাচ্ছো, কেমন দেখায়। এটা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম, পিঁপড়ার ক্ষুধা নিয়েও কেউ ভাবতে পারে। ওর কথা শুনে আমি অল্প একটু চটপটি দিলাম মাটিতে, পিঁপড়া গুলো হামলে পড়লো, কিন্তু তার মন ভরে নাই, সে আবার নিজে থেকে বেশি করে তুলে মাটিতে ফেলে দিলো। বাসায় এসে মজা করে বললাম, তোমার পিঁপড়া বন্ধু। ও উত্তর দিলো, হ্যাঁ আমি সবাইকে দিয়ে খাই। আমি ভেবে পাই না,আমরা পিঁপড়া দেখলেই মেরে ফেলি, আর সে যত্ন করে পোষাপ্রাণীর মতো ওদের খাওয়ায়।
এই ছেলেটার সাথে একদিন ঢাবি তে গিয়েছিলাম, সে আস্ত ডিমের তরকারি দিয়ে ভাত খাচ্ছিলো,একটা কুকুর চলে আসায় নিজের ডিমটা সে কুকুরটাকে দিয়ে দিলো।এটা নতুন না, বাইরে খাওয়ার সময় বেছে বেছে মাংস নিয়ে সে বিড়াল কুকুরদের খাওয়ায়,নিজে একটা পাউরুটি খেলে আশেপাশের সব কুকুরদের সে খাওয়াবে।
আমি এই মানুষটাকে যত দেখি,ততো অবাক হই।একটা পিঁপড়ার প্রতিও এত মায়া তার। কে বলে পুরুষ মানুষের মায়া নাই? যে বলে সে মায়াবী কোনো পুরুষ দেখেনি। এই যে মায়ায় আমি পড়েছি,এই মায়া কোনোদিন কাটানোর সামর্থ আমার নেই, আর যেন না হয়। আমি আমার জীবনের সব থেকে সেরা সিদ্ধান্ত টাই নিয়েছি।
লেখক: আদিবা পৃথিবী
ফুড ও নিউট্রিশন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।