ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে করোনাভাইরাস আতঙ্ক


ঢাবি টাইমস | Published: 2020-03-14 11:00:01 BdST | Updated: 2024-05-18 20:18:48 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা প্রচলিত হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলি বহাল রেখেছে। সাংগাঠনিক নির্দেশনার পরও বন্ধ হচ্ছে না। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করোনাভাইরাস ছড়ানোর অনুকূলে। হ্যান্ডশেক, কোলাকালি, মাস্কের ব্যবহারহীনতা চলছে হরদম। এতে ঝুঁকিতে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে একই রুমে একাধিক শিক্ষার্থী থাকছে। এসব হলে করোনা ছড়ালে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রান্ত হবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

তাছাড়া সচেতনতা তৈরিতেও কোন ধরণের টাস্কফোর্স কিংবা কমিটি গঠন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে একটি সচেতনতামূলক লিফলেট দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে।

এদিকে প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়া কিংবা আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য কোন প্রকার ব্যবস্থাও নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে। এখানে শুধু চিকিৎসা নয়- কোয়ারেন্টাইন, থার্মাল স্ক্যানার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের কোন ব্যবস্থাও নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী বলেন, মেডিকেল সেন্টারে করোনা বিষয়ক কোন ধরনের সরঞ্জাম নেই। তবে আমরা বিভিন্ন হল ও বিভাগে সচেতনতামূলক নির্দেশনা পাঠিয়েছি।

এর বাইরে কোন ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নেয়ার সে সক্ষমতা নেই।

গণরুমের শিক্ষার্থীরা করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু এক রুমে অনেক শিক্ষার্থী থাকে, তাই তারা একটু ঝুঁকিতে থাকবে। যদি একজন আক্রান্ত হয় তাহলে অনেকেই আক্রান্ত হতে পারে।

শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। এটা যদি একবার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এতো জনবহুল এলাকায় এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। দেশে ইতিমধ্যেই করোনার রোগী শনাক্ত হওয়ায় তা মহামারী আকার ধারণ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

তারা বলছেন, হলগুলো একপ্রকার ঘনবসতি। এক রুমে ৮-১০ জন করে থাকে। গণরুমগুলোতে ৪ জনের স্থলে থাকে ৪০ জন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কোন ধরনের উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে না। যদি হলগুলোতে একবার করোনা ছড়ায় তাহলে অবস্থা খুবই শোচনীয় হবে। অনেক দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে ইতোমধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসুকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’ করোনা ভাইরাসের জন্য কি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা উচিত- এ সংক্রান্ত এক জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী তাদের মতামত জানিয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এক হাজার ১০০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর বাকি ৪০০ জন বন্ধ না করে সচেতনতার পক্ষে মত দিয়েছেন।

বিশ্ববিবিদ্যালয় বন্ধের দাবি জানিয়ে স্যার এ এফ রহমান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, করোনার জন্য বিশেষজ্ঞরা এখন জমায়েত বা যে কোন ধরনের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, টিএসসি এবং হলগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ রূপ নেবে। বিশেষ করে গণরুমগুলোতে যদি এ ভাইরাস ছড়ায়, তবে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

তিনি বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা বা চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার চাইতে আগে থেকে এ বিষয়ে প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ কিছুদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা।

বিজয় একাত্তর হলের গণরুম

নাইম সরদার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বসবাসের অযোগ্য শহরে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সচেতনতার কথা মূলত সুশীল মার্কা একটা বক্তব্য মাত্র। চীন, ইতালি, সৌদি আরবে বসবাসরত লোকজন আমাদের চেয়ে অবশ্যই বেশি সচেতন। কিন্তু ভাইরাস যেহেতু চোখে দেখা যায় না, তাই জনবহুল পরিবেশে সচেতন থেকে কোন লাভ হবে বলে মনে করি না। আর যদি সত্যই বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সম্ভবনা থাকে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াই সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত হবে।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, করোনা একটা ছোঁয়াছে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সহজেই অন্য আরেকজনের দেহে প্রবেশ করতে পারে। কোন অবস্থায় যদি ঢাবির কোন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়, তাহলে এটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পরবে। তাই আমি মনে করি- কখন একজন আক্রান্ত হবে এই অপেক্ষায় না থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখা খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, দেশে ৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সুতরাং আরো কিছু লোক যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে, এই সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কখন ছড়িয়ে পরবে এই অপেক্ষায় না থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কিছুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতির বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমাদের সকল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের বিষয়ে আমরা দায়িত্বশীল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও হলগুলোতে প্রস্তুতির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকেও সতর্ক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়েও করোনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুরক্ষা করতে আমরা সবসময় প্রস্তুত। শিক্ষার্থীদের যখন যেটা প্রয়োজন, আমরা তা সরবারাহ করবো।

ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, করোনাভাইরাস আসার পর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা দিয়ে কোলাকুলি, হ্যান্ডশেক এবং গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছি। যতদূর সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি যাতে এ ধরনের ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিন্তু আমরা আইন করতে পারি না। এরপরও আমাদের সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের সবচাইতে বড় উপায় হলো সবাইকে সাবধানে ও সতর্কতামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। আর বিভিন্ন আচরণে শিষ্টাচার অনুসরণ করতে হবে। এসব নিয়ে শঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমরা যদি সবক্ষেত্রে দায়িত্বশীল, সচেতন ও সতর্ক থাকি, তাহলে সমাজের অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখাকে সমাধান হিসেবে দেখছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। হলগুলোতে আমাদের শিক্ষকরা খোঁজ-খবর নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা সমাধান নয়।”