টিএসসির ছোট্ট শিশু জিনিয়া কোথায়?


Dhaka | Published: 2020-09-05 17:57:55 BdST | Updated: 2024-05-20 00:31:34 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় ফুল বিক্রি করত ফুটফুটে শিশু জিনিয়া (৮)। চার দিন হলো তার কোনো সন্ধান নেই। মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময়ে টিএসসি এলাকা থেকে সে নিখোঁজ হয়। কে বা কারা তাকে নিয়ে গেছে তা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে টিএসসি এলাকায় নিয়মিত আড্ডা দিতে আসা দুই নারী জিনিয়াকে নিয়ে গেছেন বলে মনে করে তার পরিবার। যদিও তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

মা শিমু, ছোট বোন সিনথিয়া (৭) আর ভাই পলাশের (১৭) সঙ্গে জিনিয়া থাকত টিএসসি এলাকাতেই। টিএসসির বারান্দা তাদের রাতে শোয়ার জায়গা। আর দিন কাটতো লাল প্লাস্টিকের বালতিতে করে গোলাপ আর বেলি ফুল বিক্রি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে শিক্ষার্থী, টিএসসি এলাকার চায়ের দোকানদার, ফুচকার দোকানদার আর ভ্রাম্যমাণ সিগারেট বিক্রেতাদের সবারই পরিচিত জিনিয়া।

জিনিয়ার মা শিমু শাহবাগ থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি এখনো।

জিনিয়ার মা শিমু এবং টিএসসি এলাকার চায়ের দোকানদার সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগের সময়টাতে জিনিয়া দুজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছিল বলে জানা গেছে। তাদের চেহারার বর্ণনা এবং ওই দিন রাতে পরনে থাকা পোশাকের বর্ণনাও দিয়েছেন তারা। নিখোঁজ হওয়ার আগে এই দুই নারীর সঙ্গে টিএসসির নিজামের ফুচকার দোকানে সে ফুচকা খেয়েছে। এরপর শামসুন্নাহার হলের কাছে থাকা ‘সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতিস্থাপনা’র পাশে বসে গল্পও করেছে।

জিনিয়ার মা শিমু বলেন, ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে ছোট মেয়ে সিনথিয়াকে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যের পাশে রেখে জিনিয়াকে ডাকতে যান। দুই নারীর সঙ্গে জিনিয়া তখন ফুচকা খাচ্ছিল। তিনি জিনিয়াকে বৃষ্টি আশার আগে ফুল বিক্রি শেষ করার তাগাদা দেন। তখন ওই দুই নারী বলেন, তারা জিনিয়াকে ফুচকা খাওয়া শেষে ডাসের পেছনে দিয়ে আসবেন। এ সময় কেউ একজন ডাক দেওয়ায় শিমু সেখান থেকে চলে আসেন।

ফুচকা দোকানদার নিজাম উদ্দিন দুই নারীর চেহারা ও পোশাকের বর্ণনা দিয়ে বলেন, একজনের চেহারা গোলগাল। তিনি জিনসের প্যান্ট আর ছাই রঙের শার্ট পরেছিলেন। আরেকজনের চেহারা একটু ফরসা, বেশ লম্বা, পাঁচ ফুট ৫ ইঞ্চির মতো। তার পরনে ছিল জিনসের প্যান্ট আর সাদা টিশার্ট। তার গলায় বাউলদের মতো মালা আর হাতে একই রকম বালা ছিল।

নিজাম জানান, ফুচকা খাওয়া শেষে জিনিয়া তার দোকান থেকে চলে আসে। মিনিট দু-এক পর ওই দুই নারীও তার পিছু নেন। শিল্পী নামে আরেক চা-সিগারেটের দোকানদারকে উদ্ধৃত করে নিজাম বলছিলেন, এরপর ওই দুই নারী শামসুন্নাহার হলের পাশে জিনিয়ার সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেছেন। শিল্পী একবার জিনিয়াকে ধমক দিয়ে ফুল বিক্রি করতে যেতে বলেছিলেন। তখন জিনিয়া বলেছিল ওই দুই নারী তাকে দু শ টাকা দেবেন বলে কথা দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এই দুই নারীর সঙ্গে যোগ দেয়। শিল্পী ততক্ষণে অন্য বিক্রেতাদের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

নিজাম বলেন, ওই দুই নারীকে তিনি আগেও টিএসসি এলাকায় দেখেছেন। তারা প্রচুর ধূমপান করেন। শিল্পীও তাকে জানিয়েছেন যে তারা শাসুন্নাহার হলের পাশে নিয়মিত আড্ডা দেন। তবে এই দুজনের কোনো নাম-ধাম তারা জানেন না।

জিনিয়ার মা শিমু বলেন, তার ট্রাকচালক স্বামী দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে টিএসসি এলাকায় আসেন। প্রথম দিকে জিনিয়া আর পলাশ চকলেট বিক্রি করত। সিনথিয়া তখন একেবারেই ছোট হওয়ায় তাকে তিনি দেখাশোনা করতেন। জিনিয়া-পলাশের চকলেট বিক্রির শ দেড়েক টাকা দিয়েই তাদের চলতো। এরপর একটু বড় হলে জিনিয়া ফুল বিক্রি করা শুরু করে, ছোট সিনথিয়াও বোনের সঙ্গে থেকে থেকে এই কাজ করে। আর পলাশ এখন একটা চায়ের দোকানে কাজ করে। জিনিয়াকে চার দিন ধরে না পাওয়ায় তিনি দিশেহারা।

জিনিয়াকে নিয়ে দুই নারী যেখানে ফুচকা খেয়েছেন তার আশাপাশে অন্তত ছয়টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু জিনিয়ার সন্ধানে এই ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ পুলিশ ঘেঁটে দেখেনি বলে জানালেন টিএসসির দোকানদার ও জিনিয়ার পরিবারের সদস্যরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে লিখেছেন, জিনিয়া। আমাদের টিএসসির সবার প্রিয় মিষ্টি, প্রাণবন্ত, মিশুক একটা মেয়ে। ৫ দিন ধরে নিঁখোজ, টিএসসি থেকেই কেউ নিয়ে গেছে। প্রশাসনসহ অনেকেই চেষ্টা করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি। জিনিয়ার কোন ধরনের খোঁজ, সংবাদ বা তথ্য জানা থাকলে শাহবাগ থানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ বা আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ করছি।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ গতকাল বলেন, তিনি সদ্য শাহবাগ থানায় যোগ দিয়েছেন৷ তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারছেন না৷ পরে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'নিখোঁজ শিশুটির খোঁজ চলছে, তবে এখনো হদিস মেলেনি৷'