ইসি সচিব ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা: অধ্যাপক মিজান


Dhaka | Published: 2020-09-06 19:28:54 BdST | Updated: 2024-05-20 01:11:47 BdST

ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেন ওরফে সাবরিনা আরিফের দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার ঘটনায় তাকে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিব ও এনআইডি উইংয়ের একজন টেকনিক্যাল এক্সপার্টকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

ক্ষমা না চাইলে ‘মানহানির জন্য’ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের এই অধ্যাপক।

এছাড়া এ বিষয়ে সম্প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নিতে সময় টিভির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এক বিবৃতিতে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, “আমি এখনও আশা করি সময় টিভি কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন কমিশন আমার কাছে অপেশাদার ও অপরাধমূলক আচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবে।

“নির্বাচন কমিশন সচিবকে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ সচিব যে শব্দ ব্যবহার করেছে, শব্দ চয়ন করেছে- আসামি করা হবে। এত বড় শব্দ- উনি আসামি শব্দের অর্থ বুঝেন কি না আমি জানি না। যদি ক্ষমা না চায় কে আসামি হবে- আমি দেখব।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বরখাস্ত চিকিৎসক ডা. সাবরিনা। দুদকের অনুসন্ধানে তার দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে, এ নিয়ে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন।

তিনি দ্বিতীয়বার ভোটার জন্য আবেদন করেছিলেন ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি। তার ওই আবেদনে তৎকালীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের একটি ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, “যদি কেউ অন্যায় চাপ প্রয়োগ করে তদবির করেন, বা যেটা করা যাবে না ওটার বিষয়ে চাপ দিয়ে বলেন এটা দিতে হবে, তবে সেটা অন্যায়। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র আইন অনুযায়ী উনিও একজন আসামি হবেন।”

অধ্যাপক মিজানুর রহমান দুই মেয়াদে ২০১০ সালের ২৩ জুন থেকে ২০১৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি সে সময় তদবির করেছিলেন, না কি তার কার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ইসি সচিব।

তিনি বলেন, “অনেক সময় ভিআইপিদের কাছে অনেকে কার্ড চান। কিন্তু কার্ডটা যে উনি নিয়ে কোথায় লাগাবেন সেটা তো ওই ভিআইপি জানেন না। এজন্য যারা সচেতন, তারা কার্ড দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকেন। যে কেউ কার্ড চাইলে দেন না।

“তিনি (ভিআইপি) যদি প্রভাব খাটিয়ে অন্যায় করেন। আর যদি দেখা যায় উনি প্রভাব খাটাননি, উনার রেফারেন্সে হয়ে এসেছেন। এক্ষেত্রে তদন্তে বের হবে উনি প্রভাব খাটিয়েছেন কি না। আইন সবার ক্ষেত্রে সমান।”

‘সারা জীবনের অর্জন ধুলিস্যাৎ’

অধ্যাপক মিজানুর রহমানের ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে সাবরিনার দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়া নিয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভিতে একটি প্রতিবেদনে এনআইডি উইংয়ের একজন টেকিনিক্যাল এক্সপার্টের বক্তব্য প্রচারিত হয়। সেই সঙ্গে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

এ প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “আমি আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে পা দিইনি। মিথ্যা মনগড়া কথা, আমি তাকে (সাবরিনা) দেখিনি, চিনি না… একটা মিথ্যাকে তো আমি জনসমক্ষে রাখতে পারি না। আমার সারা জীবনের অর্জনটাকে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া এটা। সে রকম করতে দিতে পারি না। আমি তো ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব, অবশ্যই।”

তিনি বলেন, “ইসি সচিব ও এনআইডি উইংয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট- দুজনকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর এভাবে রিপোর্টিং করা যায় কি না জানি না। জার্নালিজমের মিনিমাম নীতিমালায় এটা করা যায় না। হয়ত সব কিছু বদলে গেছে…।

“সময় টিভিকে নিউজটি প্রত্যাহার করে নিতে হবে। ইউটিউবেও ভিডিও রয়েছে। যেন সব প্রত্যাহার করে নেয়। আমি মনে করি, ভুল শুধরে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে আমাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার মর্যাদা রক্ষার্থে, সত্য প্রতিষ্ঠা করতে যা প্রয়োজন সেটা আমাকে করতে হবে।”

খুব সফলভাবে মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব পালন শেষে ‘মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করার জন্যই’ একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি জিডিও করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। এটা যদি না করে প্রয়োজন হলে আইনী কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে। তখন সবার সঙ্গে শলা পরামর্শ করে, আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে, সহকর্মীদের সঙ্গে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে সে অনুযায়ী কাজ করব।”

তার মানহানির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে মন্তব্য করে মিজানুর রহমান বলেন, “আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে নিশ্চয়ই সচিব ও টেকনিক্যাল এক্সপার্টের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারকেও বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করব। তারা যদি বলে যে, ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা প্রার্থনা করে হয়ত দফারফা করতে পারি। দেখা যাক।”

‘তদন্তের আগে জনসম্মুখে কেন’

টিভির প্রতিবেদনে যে ভিজিটিং কার্ড দেখানো হয়েছে তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যানের নয় বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “কার্ডে নাম দুইবার ব্যবহার করা হয়েছে, লোগো ভুল ও সাদা কালো।”

এছাড়া এটা কীভাবে টেলিভিশনের খবর হল সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “তদন্তাধীন বিষয় যদি হয়ে থাকে তাহলে ফরমটি কীভাবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করা হল? সেটা আসে কীভাবে মেলাফাইড ইনটেনশন যদি না থাকে? এটা তো প্রটেক্টেড ডকুমেন্ট তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত। সাংবাদিকদের সেটা দেখানো হয় কীভাবে? সব কিছুর মধ্যে আইনের একটা লংঘন হয়ে গেছে।”