বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘স্বেচ্ছাচার’


Jagonews24.com | Published: 2017-08-09 21:10:14 BdST | Updated: 2024-05-15 10:02:00 BdST

সুনির্দিষ্ট নিয়োগবিধি না থাকায় স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইচ্ছামতো নিয়োগ প্রদান, চাকরিচ্যুতসহ নানা অনিয়ম বেড়ে চলছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে যথাযথ শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না তারা।

বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকার এককভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নিয়োগবিধি তৈরির উদ্যোগ নিলেও এর অগ্রগতি নেই। তবে জনবল সঙ্কটের করণে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি একক নিয়োগবিধি না থাকায় যখন-তখন চাকরিচ্যুতসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চাকরির অনিশ্চয়তা দূরীকরণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি নিয়মনীতির মধ্যে আনতে আমরা একটি খসড়া নিয়োগবিধি তৈরির কাজ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, খসড়া তৈরির পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে ছাড়পত্র পেলে তা বাস্তবায়নে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেয়া হবে।

সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদকে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করা হয়। শারীরিকভাবেও ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়। শিক্ষক ফারহান উদ্দিন জাগো নিউজের কাছে এমন অভিযোগও করেন।

শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণের প্রতিবাদ ও ফারহান উদ্দিন আহমেদকে পুনরায় নিয়োগ প্রদানে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। টানা সাতদিন আন্দোলনের পর ওই শিক্ষককে পুনরায় নিয়োগসহ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। এর মধ্যে আশা ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, অতীশ দিপঙ্কর ইউনিভার্সিটির নাম রয়েছে। বেতন-ভাতা ছাড়াই অনেককে খালি হাতে বিদায় নিতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাঈদ সরফরাজ হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, একটি একক বিধিমালা না থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামতো নিয়োগপ্রক্রিয়া পরিচালনা করছে। এখানে স্থায়ী-অস্থায়ীসহ নানা শর্তে শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়। ইচ্ছা হলে তুচ্ছ করাণ দেখিয়ে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়।

‘নিয়োগবিধি না থাকায় এ ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না’- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ভিন্ন ভিন্ন বেতন-ভাতা প্রদানের মাধ্যমে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অবসর সুবিধাও নেই। ফলে চাকরি শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অনেককে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিতে ইউজিসিকে দ্রুত একক নিয়োগবিধি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।

নিয়োগবিধি না থাকায় প্রতি মুহূর্তে শিক্ষকদের চাকরি হারানোর ভয়ে থাকতে হয়- এমন অভিযোগ তুলে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি এমন সঙ্কট থাকে তবে মেধাবি শিক্ষকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।’

তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত সরকারি আইন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। দীর্ঘদিন চাকরি করলেও যাওয়ার সময় তাকে খালি হাতে বিদায় নিতে হচ্ছে।

এ শিক্ষক আরও বলেন, নিয়োগ বিধিমালা কার্যকর হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় দেড়শ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জনবল সঙ্কটের কারণে মঞ্জুরি কমিশনের অনেক কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।

এমএসএল