রাবি অধ্যাপকের ‘পরিবেশ বান্ধব’ টেক্সটাইল প্রযুক্তি উদ্ভাবন


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-03-30 19:12:50 BdST | Updated: 2024-05-18 23:47:02 BdST

বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের জন্য টেকসই ও ‘পরিবেশ বান্ধব’ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তৌফিক আলম। যা প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে পানি ও জ্বালানী সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব এবং ‘টেক্সটাইল প্রি-ট্রিটমেন্ট’ এর ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পানি, জ্বালানী ও সময় সাশ্রয়ী এই পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির সফল প্রয়োগের ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি পুরো দেশের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে অনেক শিক্ষক-গবেষক আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে ব্যবহৃত একাধিক রাসায়নিক পদার্থ এবং রং-এর বিষাক্ত প্রতিক্রিয়াসহ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ পানি পরিবেশ থেকে নেয়া হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণ।

ড. তৌফিক আলম বলেন, ‘এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের মানুষ যত পানি ব্যবহার করেন তার দ্বিগুণ পানি ব্যবহার করে এই টেক্সটাইল শিল্পগুলো। যা মূলত ‘টেক্সটাইল প্রি-ট্রিটমেন্ট’ এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তাই আমরা যে প্রযুক্তির উন্নয়ন করেছি তা ‘প্রি-ট্রিটমেন্ট’ এর ক্ষেত্রে শতকরা ৪৫ ভাগ পানির সাশ্রয় করবে এবং পরিবেশ দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাবে।’

হেকেপের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত এ গবেষণায় সহযোগিতা করছেন একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসান এবং ৫ জন এমএসসি ও ২ জন পিএইচডি গবেষকসহ ৭ জন শিক্ষার্থী। সাফল্যের জন্য গত তিন-চার বছর তারা এ গবেষণা করে আসছেন বলে জানা গেছে।

অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম আরো বলেন, ‘গ্রেইজ ফেব্রিকগুলো প্রথমেই ডাইং এর উপযোগী থাকে না। এসব কাপড়ে তেল, চর্বি, মোম, গ্রিজ, প্রোটিন, প্রাকৃতিক রং, হেয়ারি ফাইবার ও অন্যান্য অপদ্রব্য লেগে থাকে। ডাইং করার আগে এসব অপদ্রব্য দূর করে নেয়াই ’প্রি-ট্রিটমেন্ট’ এর প্রধান কাজ। এই ‘প্রি-ট্রিটমেন্টের’ জন্য মূলত দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রথমটি প্রচলিত কস্টিক সোডা-পারঅক্সাইড পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ব্যবহৃত হলেও ফেব্রিক ডাইং এ ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। ফলে এই প্রক্রিয়াটি অধিক ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয়টি উৎসেচক (এনজাইমেটিক) পদ্ধতি, যা পরিবেশবান্ধব ও পানি সাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ার কারণে এর ব্যবহার সীমিত। এক্ষেত্রে আমরা একটি সক্রিয়ক (একটিভেটর) ব্যবহার করে উৎসেচক পদ্ধতরি গতানুগতিক ফলাফলকে অতিক্রম করে প্রচলিত পদ্ধতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রি-ট্রিটমেন্ট চার থেকে পাঁচ ধাপে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু উদ্ভাবিত পদ্ধতি এক ধাপে সংঘটিত হবে। ফলে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পানির পাশাপাশি সময় ও জ্বালানী সাশ্রয়ও হবে।’

উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ আর্ন্তজাতিক টেক্সটাইল ও মেশিনারিজ প্রদর্শনীর (ডিটিজি-২০১৮) মাধ্যমে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি টেক্সটাইল শিল্প কারখানায় এ সাফল্যের কথা জানানো হয়। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এ উদ্ভাবন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিদিবিএস