গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তদবিরে ব্যস্ত পদপ্রত্যাশীরা

ছাত্রলীগের সম্মেলন: পদপ্রত্যাশীদের তথ্য খোঁজা হচ্ছে জেলায় জেলায়


স্টাফ করেসপনডেন্ট | Published: 2022-11-10 20:04:57 BdST | Updated: 2024-05-19 00:07:38 BdST

আগামী ৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের ঘোষণা আসার পর থেকেই নিজেদের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে দলের হাইকমান্ড ও আওয়ামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তদবির করছেন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের তোড়জোড়। নিয়মিত পদচারণা করছেন মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি ও পার্টি অফিসে। এদিকে পদপ্রত্যাশীদের দেয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতের জন্য ইতিমধ্যে তাদের সিভি সংশ্লিষ্ট জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে।

সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সংগঠনের সর্বোচ্চ অভিভাবক মনে করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সম্মেলন হলেও তিনিই মূলত শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করে থাকেন। শোনাও যাচ্ছে এমনটিই। কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে সম্মেলনের রাতেই। এতে প্রধানমন্ত্রীর পরেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল ছাত্রলীগ নেতাদের। এখন পদপ্রত্যাশীদের চলাফেরা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে বেশি দেখা যাচ্ছে।

এবার পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ভালো, রয়েছে ক্লিন ইমেজ এবং যাদের পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই, শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় তারাই আগামীর নেতৃত্বে আসবে। কারা নেতৃত্বে আসবে এটি নিশ্চিত করে বলা কারো পক্ষেই সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিগত কয়েক দশকের সম্মেলনের ইতিহাস বিশ্লেষণ দেখা যায় একেক সম্মেলনে একেক রকম মানদন্ডে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে । কখনো রাজপথের ত্যাগ , কখনো পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড , কখনো অঞ্চল ভিত্তিক বিবেচনা , আবার কখনো ক্লিন ইমেজ , মেধাবী ছাত্রনেতা বাছাই করা হয়েছে ইত্যাদি। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনার প্রশ্নে যারা আপোষহীন- তারা জায়গা পেতে পারেন ছাত্রলীগে। মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে দক্ষ নেতৃত্বও সংগঠনে আসবেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নীতি-নির্ধারকরা।

তবে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে আগামী জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলা করতে পারবে এমন নেতা চাচ্ছে হাইকমান্ড এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা।

এদিকে করোনার কারনে বয়সসীমা এক বছর বাড়তে পারে বলে বিভিন্ন নেতাদের সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে বয়সসীমা না বাড়ানো হলে মুহূর্তেই কমে যাবে প্রার্থীর সংখ্যা। 

ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কি? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বয়সসীমা কত হবে— এই বিষয়টি আমাদের নেত্রীর চিন্তার মধ্যে আছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মৌলবাদবিরোধী অবস্থান যাদের আছে, যারা জনপ্রিয় তারা কমিটিতে গুরুত্ব পাবে। এ সময় সম্মেলনের মাঠেই নেতাকর্মীদের বয়সসীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ছাত্রলীগের দেখভাল করার দায়িত্ব থাকা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন। তাই এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। যাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ভালো, কোনও বিতর্ক নেই, ভালো কাজ করে নিজেদের ইমেজ ক্লিন রেখেছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়, তাদের মধ্যে থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা।