শীতের শুরুতেই অপরূপ সাজে সেজেছে প্রকৃতির রাণী রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি। শীতের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তার সাথে কুয়াশা। পাহাড়ে চূড়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। সাদা মেঘের আড়ালে সাজেকের পাহাড়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত যেন এক স্বর্গীয় রূপ।
মেঘের ভেলা দেখতে আসা পর্যটকের গান বলে দিচ্ছে প্রকৃতির রাণী সাজেক মানুষকে কতটা আবেগ-আপ্লুত করতে পারে। তা গুনগুন করে হোক কিংবা প্রাণ খুলে গলা ছেড়ে হোক। সাজেক এখন এতটা অপরূপ রূপ নিয়েছে। খুব ভোরে যখন পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে, তখন মেঘের ভেলা একেবারেই নিচে নেমে আসে। আর পাহাড়ের চূড়ায় ভেসে বেড়ানো মেঘকে যে কেউ সাগর ভেবে ভুল করতে বাধ্য। দুপুরের আগে সূর্য মধ্য আকাশে না যাওয়া পর্যন্ত সাজেকের যে কোনো স্থান থেকে উপভোগ করা যাবে নয়নাভিরাম দৃশ্য।
শুধু সকালের সূর্যোদয় কেন, বিকেলে যখন পশ্চিম আকাশে অস্তগামী সূর্য লাল গোলাকৃতি রূপ নয়, তার দৃশ্যও কম কিসের। সাগরের তীরে গেলেই সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত দেখা যায়, তা কিন্তু নয়। সাজেকের যে কোনো পাহাড় থেকেও একই দৃশ্য দেখা সম্ভব। আর এ দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করছে সাজেক ভ্যালিতে। সেই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে সাজেক ভ্যালির এ পাহাড় থেকে ওই পাহাড়ে।
সাজেক ভ্যালীর অবস্থান রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা হলেও যাতায়াত সুবিধার্থে পর্যটকদের খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সড়ককেই ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে খাগড়াছড়ি সদর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয় খোলা জীপ কিংবা চাঁদের গাড়িতে চড়ে।
যেভাবে যাবেন
প্রকৃতির এই সৌন্দ্যর্য উপভোগ করতে যারা মনস্থির করেছেন, তারা ঘুরে আসতে পারেন সাজেক। ভাবছেন সাজেক যাবো কীভাবে। চিন্তা নেই খাগড়াছড়ি জেলার শাপলা চত্বরে গেলেই দেখা যাবে সারি সারি জিপ, চান্দের গাড়ি, সিএনজি। দরদাম করে গ্রুপ করে ঘুরে আসা যায় সাজেক। শাপলা চত্বর থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব ৬৭ কিলোমিটার।
খাগড়াছড়ি জেলা জিপ মালিক সমিতির চার্ট অনুযায়ী পিকআপ ভ্যান দিনে গিয়ে দিনে ফিরলে ৫ হাজার ১০০ টাকা। আর যদি সাজেকে রাত্রি যাপন করেন তাহলে ভাড়া গুনতে হবে ৭ হাজার ১০০ টাকা। এক পিকআপে যাওয়া যায় ১০ জন।
আর যারা জিপে চড়ে যেতে চান তাদের ভাড়া হিসেবে গুণতে হবে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। কেউ যদি রাত্রি যাপন করেন তাহলে ভাড়া হবে ৬ হাজার ৬০০ টাকা।
এছাড়া সিএনজি দিনে গিয়ে দিনে আসলে খরচ পড়বে ৩ হাজার টাকা। আর রাত্রি যাপন করলে পড়বে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
সাজেকে থাকতে চাইলে সাজেক রিসোর্ট, আলো রিসোর্ট, খেয়াল বুক , নিরিবিলি রিসোর্টসহ বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্ট আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। আবার সাজেক গিয়েও রিসোর্ট ভাড়া পাওয়া যায়।
সাজেক যাওয়ার পথে কবাখালী বাজারে চাইলে কেউ হালকা নাস্তাও করে নিতে পারেন। কবাখালীতে কয়েকটি ছোট ও মাঝারি আকৃতির রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
সাজেক ভ্যালির পথেই দেখা যাবে হাজাছড়ি ঝর্ণা, কাচালং ব্রিজ।
খাগড়াছড়ি জিপ মালিক সমিতির লাইনম্যান সুমন বড়ুয়া বলেন, 'কেউ চাইলে ফোনেও বুকিং দিতে পারে। আমরা এখান থেকে সাড়ে ৭টায় সবগুলো গাড়ি ছেড়ে যায়। কেউ আগে থেকে বুকিং দিলে গাড়ি পেতে সহজ হয়। আর যদি কেউ এখানে এসে গাড়ি নেয় সেটাও করতে পারবেন।
এসব গাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাঘাইহাট নামক স্থানে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতে হয় সেনাবাহিনী অনুমতির জন্য। বাঘাইহাটে সেনাবাহিনীর চেক পোস্টে গিয়ে গাড়ির চালক এবং পর্যটকদের গ্রুপের একজনের নাম লিপিবদ্ধ করতে হয়। সেখান থেকে গাড়ির সিরিয়াল নম্বর দেওয়ার পর সকাল সাড়ে ১০টায় সেনাবাহিনীর অনুমতিতে ছুটে চলে পর্যটকদের গাড়ি। আবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ফিরতি ট্রিপেও সেনাবাহিনীর অনুমতির দরকার হয়।
এক যুগ আগেও নিরাপত্তার অভাবে সাজেকে সেভাবে যেতেন না পর্যটকরা। এখন সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পর্যটকদের সেখানে যাওয়া অনেকটাই সহজ হয়েছে।
সাজেক ঘুরে এসে লিখেছেন এম এ লতিফ