ইউটিউবার থেকে উদ্যোক্তা


Dhaka | Published: 2020-02-11 19:25:14 BdST | Updated: 2024-05-04 09:13:11 BdST

মুনিয়া ফারজানা মুনা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারে অধ্যায়নরত। জন্মস্থান খুলনার বাগেরহাটে কিন্তু পড়ালেখার সূত্র ধরেই আসেন ঢাকাতে।

  • কীভাবে ইউটিউবার থেকে উদ্যোক্তা হলেন জেনে নেয়া যাক মুনিয়া ফারজানা মুনার ভাষাতেই...

এর আগে কয়েকবার ঢাকাতে ঘুরতে আসা হয়েছে আত্মীয়-স্বজন থাকার কারণে কিন্তু নিজের কাছে আসলে চান্স পাওয়ার পর ই ঢাকাতে এসেছি।এমন কি ভর্তি কোচিং করার জন্যে ও আমার ঢাকাতে আসা হয়নি,মজার বিষয় হলো কোন রকম ভর্তি কোচিং ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পড়ার সুযোগ হয়ে গিয়েছে।মূলত আমি ব্যবসা শিক্ষা শাখার স্টুডেন্ট ছিলাম কিন্তু এরপর বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট এ ৭১ তম হওয়ার মাধ্যমে আমার সমাজবিজ্ঞানের যাত্র শুরু।

শপ

প্রথম প্রথম যখন হিজাব ক্লাসে যেতাম বেশিরভাগ সবাই খুব প্রশংসা করত এমন কি হিন্দু ক্লাসমেট অনেকে আমাকে বলতো তোমার হিজাব পরা দেখলে আমাদের ই পরতে ইচ্ছা করে।ব্যাপারটা আমার এত্ত ভালো লাগতো।তাছাড়া প্রথম দিন হলে ওঠার পর থেকেই প্রশংসা তো পেয়েছি।অনেকেই হিজাব পরতে আসতো আমার কাছে এই ব্যাপার গুলো আমাকে খুব ইন্সপিরেশন দিতো।হলে যারা থাকতো ওদের আমার হিজাব কিভাবে পরছি এটা দেখার সুযোগ থাকলে যারা বাইরের অর্থাৎ আমার ক্যাম্পাসের বা ক্লাসের তারা সব সময় চাইতো কিভাবে পরেছি এটা যেন দেখাই।তখন থেকে আমি ভাবতাম যদি ভিডিও করে দেখানো যায় তাহলে তো ভালই হয়।এটা নিয়ে ইউটিউবে ঘাটাঘাটি করি তখন দেখলাম বাইরের দেখে প্রচুর হিজাব টিউটোরিয়াল চ্যানেল আছে আর ২/৩ টা বাংলাদেশেও ও আছে। এটা দেখেই আমার স্বপ্নের শুরু।তবে এটা কখনোই জানতাম না ইউটিউব থেকে আয় করার সুযোগ আছে,পুরোটাই আমার শখের বিষয় ছিলো আমার কাছে।

তারপর ভাবতে লাগলাম হলে বসে কিভাবে সম্ভব।এত্ত প্রতিকূল পরিবেশে আসলেই কি সম্ভব কিনা।তারপর আমার শখের বিষয় টা শেয়ার করলাম আমার একজন বন্ধুর সাথে।ওর নাম 'ইশতিয়াক আহমেদ ' ও আমাদের ক্যাম্পাসের আর আমার নিজ এলাকার।ও তখন আমাকে বললো যেহেতু হলের পরিবেশ ভাল না আমি আমাদের ক্যাম্পাসে অর্থাৎ বাইরেই ভিডিও করতে পারি।তারপর একদিন প্লান করে ফেললাম টেস্ট করার জন্যে একটা ভিডিও বানানোর।আমাদের একটা ফোন ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা।

ও হ্যাঁ একটা চ্যানেল ও খুলে ফেললাম ইউটিউবে।মোটামুটি রেডি হয়ে কার্জনে চলে আসলাম ফোন দিয়েই ৩ টা টিউটোরিয়াল বানিয়ে ফেললাম।ওইদিন আমার বন্ধু অনেক কষ্ট করেছে যেহেতু কোন ট্রাইপড ছিলোনা একদম একহাতে ধরে ৩ টা ভিডিও শ্যুট করতে সাহায্য করেছে। আর প্রথম দিন সবাই এমন অবাক ভাবে তাকিয়ে ছিলো আমি প্রচন্ড আনকম্ফোর্টেবল হয়ে গিয়েছিলাম তারপর ও কোন মতে শেষ করি।এটা হলো ২০১৭ সালের মার্চের কথা।আপলোড দেই আমার প্রথম ভিডিও।খুব অল্প সল্প সাড়া পেয়েছিলাম।

একেবারে প্রথম আনাড়ি ভিডিও হিসাবে এটার ভিউ আমাকে বেশ আনন্দিত করেছিলো।আরো ভিডিও বানানোর সাহস যুগিয়েছিলো।তারপর থেকে শুরু হলো নিয়মিত আপলোড করার যাত্রা আর সেই সাথে আসতে আসতে কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় হয় তা জানতে পারলাম।প্রথম দিকে ফোন দিয়ে ভিডিও করলাম তারপর ক্যামেরা কিনে ফেললাম।ক্যামেরা দিয়েই বাইরে ভিডিও করতাম।বর্তমানে আমার নিজের একটা স্টুডিও আছে যেখানে আমি শ্যুট গুলো করি।এইভাবেই চলতে থাকে আমার ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা,প্রথম মাসে আমার সাবস্ক্রাইবার ১০০০ হয়েছিলো আর বর্তমানে ৩ বছরে এখন ৫ লক্ষ ৩০ হাজার।

মুনা

হিজাব টিউটোরিয়াল এর সূত্র ধরে অনেক গুলো হিজাব কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার সেই সাথে প্রচুর স্পনসরশীপ ও পেয়েছি।যেহেতু অনেক গুলো কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তাই হিজাব এর ম্যাটেরিয়াল সম্পর্কে আমার খুব ভালো একটা ধারণা হয়ে যায় যে কোনটা ভাল হবে আর কোনটা খারাপ,কেমন কাপড় মাথায় পরলে চুলে বা স্কিনে প্রবলেম হতে পারে তাই আমি চিন্তা করে দেখলাম আমার এখন বিজনেস শুরু করা উচিৎ তাতে হিজাবিদের যে প্রবলেম গুলো ফেইস করতে হয় তা যেন আমার কোম্পানির মাধ্যমে কমিয়ে আনতে পারি।

গত বছরে অর্থাৎ ২০১৯ এর মে থেকে আজিমপুরে একটা অফিস নিয়ে আমার হিজাবের বিজনেস এর অনলাইন যাত্রা শুরু আর অনলাইনে আপনাদের ভালো সাড়া পেয়ে এই বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে ধানমন্ডি তে একটা শো-রুম ওপেন করেছি।আমার কোম্পানির নাম Modest Mart আর আমার চ্যানেলের নাম Modest Lifestyle by MUNA.