এই যে আমায় আগুন দ্যাখো


Dhaka | Published: 2020-01-15 02:49:01 BdST | Updated: 2024-05-19 00:25:31 BdST

এই যে আমায় আগুন দ্যাখো, গরল দ্যাখো জিভে;
কে দেখেছ যাচ্ছি কখন মোমের মতো নিভে?
জলের ভেতর জ্বলছি কেন, পোড়াই কেন, পুড়ি?
উড়ছি কেন নিরুদ্দেশে— নাটাইবিহীন ঘুড়ি?
দেখছ কেবল অগ্নিগিরি জ্বলতে আমার 'পরে,
কে দেখেছ কখন আমার অশ্রু অঝোর ঝরে?
কখন কেন হচ্ছি নীরব তীব্র ভাষণ শেষে,
কেমন করে সাগর আমার ডোবায় গিয়ে মেশে?
ঝঞ্ঝামুখর ঝড়ের শেষে থমকে কেমন থাকি?
কেমন করে রাখছি হিশেব— শুভঙ্করের ফাঁকি?

এই যে আমি পাথরপুরুষ, ইচ্ছেজীবী ইতর;
কে দেখেছ পাথরকুঁচি আমার বুকের ভিতর?
হাসতে দ্যাখো, গাইতে দ্যাখো গাইয়ে পাখির মতো;
কে দেখেছ আমার বুকের কোথায়-কোথায় ক্ষত?
কোন ক্ষতটায় রক্ত ঝরে, কোন ক্ষতটায় পচন;
শুনছ কেবল আমার মুখে ব্যঙ্গবিষের বচন।
কোথায় ক্ষত, কিসের মতো— কলজে আমার জানে;
কে শুনেছ কান্না আমার বন্ধ বধির কানে?
তোমরা কেবল পড়ছ আমার ক্ষুব্ধ খুরের হরফ;
দেখতে যদি অতল তলে আগুনরূপী বরফ!

এই যে আমায় দেখছ পেতে লক্ষ লোকের তালি;
রাতদুপুরে শূন্য শ্মশান, বক্ষ আমার খালি।
জানতে যদি যাবজ্জীবন জ্বলতে কেমন লাগে,
জনতার মাঝে নির্জনতা— লেখাই আমার ভাগে।
আমার ভাগে শূন্য থালা, শবজি কেবল পাতে;
সাঁতরে বেড়াই মরুর বুকে রুদ্ধদুয়ার রাতে।
হারার আভাস জেনেও কেন যাচ্ছি কেবল হেরে?
কে জেনেছ জ্যান্ত আমায় কে গিয়েছে মেরে?
মরার পরও রইছি কেন মড়ার মতোন বেঁচে?
চামচ দিয়ে যাচ্ছি কেন বঙ্গসাগর সেঁচে?

এই যে দ্যাখো যখন-তখন উঠতে আমায় ক্ষেপে,
দেখতে যদি কোথায় আমি কী রেখেছি চেপে!
কোথায় আমার কষ্টপাথর, কোথায় জলের নহর;
ছুটছি কেন নিছক একা— দেড়শো লাখের শহর?
হাজার মুরিদ, লক্ষ সুহৃদ করছে কেমন ভজন;
দিনের শেষে শূন্য মাজার, আমিই আমার স্বজন।
এই যে আমার মোহন মুখোশ— রুক্ষ রাগের থোকা;
দেখতে কেমন বৃষ্টি ঝরে, পেলেই কেবল টোকা।
বৃষ্টি নামুক, শক্ত শামুক যাক না এবার ভিজে;
ওপর-ওপর পাথর-ভারী, ভেতরজুড়ে কী যে!

জানতে যদি— ঊর্ধ্বপাহাড় ভীষণ রকম নত,
কেমন লাগে বাঁচতে একা রাষ্ট্রপতির মতো!

কবি: আখতারুজ্জামান আজাদ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমান সময়ের একজন আলোচিত তরুণ কবি