প্রেম আর অবিশ্বাসের গল্প


Prothomalo.com | Published: 2020-02-04 07:23:01 BdST | Updated: 2024-05-19 09:15:25 BdST

আমি নূপুর। একদিন বিছানায় পা দোলাতে দোলাতে বান্ধবীকে বললাম, ‘সুমন আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমার মা-বাবা মেনে নেবেন না। কী করা উচিত জানি না! সে কী, কেমন, আমি জানি না। কারণ, তার সঙ্গে আমার শুধু মাঝেমধ্যে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ। শুধু জানি ভালো মানুষ। চিঠি দৈনন্দিন জীবন নিয়েই লেখা হয়। এদিকে আমি জানি, অনেকেই চান্স নেওয়ার চেষ্টায় আছে। কিন্তু আপাতত আমার কারও প্রতি আগ্রহ নেই। আমি সবার কাছ থেকেই দূরে থাকতে চাই।

বান্ধবী বলল, ‘হুম্‌, আমিও একজনকে খুবই ভালোবাসি। কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না। তার প্রেম ছিল যার সঙ্গে, তাকে সে অন্য একজনের সঙ্গে বিছানায় পেয়েছে! এরপর থেকে কাউকে বিশ্বাস করে না। আমার সঙ্গে অনেক ক্লোজ। সবকিছু শেয়ার করে। কিন্তু আমাকে ভালোবাসে না। তার যখন কষ্ট হয়, নিজের হাত কাটে, আমি শুধু তাকে থামাতে পারি।


আমি মাঝেমধ্যে হ্যান্ডিক্যাপড কারও পড়া পড়ে দিই। বান্ধবীর সঙ্গে কথোপকথনের এক মাস পর সেটা করতে নিচে নামব, এমন সময় দারোয়ান আমাকে ডাক দিল। ভাবলাম, আমার রিডিং পার্টনার হয়তো আমাকে নিতে এসেছে। আমি নিচে নেমে যাকে দেখলাম, তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তাকে আমি চিনি না। কিন্তু দুয়ে দুই মিলালে চিনতে পারি। আমার বন্ধু নয়। কিন্তু প্রচণ্ড আপন কেউ হতে পারে।


এই সেই ব্যক্তি, যাকে আমি মাঝেমধ্যে লিখি। আমি জানি, আমাকে সে ভালোবাসে। কিন্তু সে চিঠি তো আমি অদৃশ্যমানবকে লিখি। রক্ত-মাংসের জলজ্যান্ত মানুষটিকে সামনে দেখতে পাওয়ার মতো বিড়ম্বনায় পড়ব, কখনো ভাবিনি। প্রস্তুতিও নেই। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যাই। আজ আবার এমন এক দিন, বাবারও আসার সম্ভাবনা।

আমি নিজের মাঝেই শতভাবে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি। কী করণীয় তা বুঝতে পারছি না। জানি এ রক্ত-মাংসের লোকটিকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পরিবার আমাকে ত্যাজ্য করবে। আবার সে যদি ব্ল্যাকমেল করে এই বলে যে তোমার চিঠি আছে আমার কাছে, কী করবে? কথা সত্য। যদি বলে তোমাকে ভালোবাসি। যেতে হবে আমার সঙ্গে। আমার সাহস বা শক্তি কোনোটাই নেই সেটা না মানার।

কিন্তু আমার পরিবার? আমি মা-বাবাকে এত কষ্ট দিতে পারব? সে কোথা থেকে হঠাৎ উদয় হলো। কেন আমার সবকিছু ওলট-পালট করতে এল। চিঠি লেখাটাই তো ছিল ভয়ে। নয়তো বলেছিল চলে আসবে? চিঠি লেখাটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে দেখার অভ্যাস তো আমার নেই। সাধারণ প্রেমিক-প্রেমিকারা কী করে, আমার জানা নেই। আর আমি বুঝতে পারলাম, আমি আসলেই তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমার পক্ষে আর এক কদমও এগোনো সম্ভব নয়।

অভাগার দিনও ওই দিন শুরু। বাপও সেদিনই এলেন। আমি তাকে চলে যেতে বললাম।

দুই দিন পর সে আবার এল। আমার এক বন্ধু আর বান্ধবী, যাদের খুব বিশ্বাস করতাম, ঘটনাটা বললাম তাদের। জানতে চাইলাম আমার কী করা উচিত।

হয়তো আমার ভয়, কাঁপুনি আর কান্না দেখে তাদের মন গলল। আমরা দুজন তাদের সঙ্গে কাছের ছোট একটা রেস্তোরাঁয় গেলাম। দুজনেই কাঁদছি তাদের সামনে। মনে হলো হয়তো আমারই ভুল। সাহসী হতেও ইচ্ছা হলো। কিন্তু পারলাম না। সে চলে গেল আমার বন্ধুর সঙ্গে। ফিরে এসে আবারও কাঁদছি। মনে হলো ভুল করেছি। আমার ফ্যামিলি মানবে না। আর ওর সাহস নেই আমার ফ্যামিলি ফেস করার। আমি ওর ফোন নম্বরও জানতাম না। পরিচিত একজনকে ফোন করে বলে দিলাম, আবার যদি আসে, আমি সত্যি সুইসাইড করব!

সে জানত আমি ব্লাফ দিচ্ছি না। আমার প্লেটোনিক প্রেমের ওখানেই সমাধি হলো।

কিন্তু স্ট্রেস কি গেল? পরদিন আমার আরেক বান্ধবী এসে বলল, আমার মা কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। ভেবেছি চাবি নেই তাই রুমে যেতে পারেননি। চাবি দিতে এসে যা শুনলাম, তাতে আমার পায়ের নিচের মাটি আরও সরে গেল। মা বললেন, ‘তিনি বসতে আসেননি।’ দাঁড়িয়ে আরও বলে গেলেন, ‘সুমন যদি আমার জীবনে একটু ছায়াও রাখে, এটাই আমার তার সঙ্গে শেষ দেখা।’

আমি এত স্ট্রেস নিতে পারছিলাম না। একদিকে একজন যে আমাকে ভালোবাসে, আমি তাকে বলেছি আমি কোনো সম্পর্ক রাখতে পারব না, অন্যদিকে আমার মা-বাবা। তার ওপর আজ এই মুহূর্তে আমার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। মা চলে গেলেন। আর আমি পরীক্ষার হলে কান্নারত।

আমার ক্লাসমেট মজনু। সব মেয়ের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক। জানি সেও আমাকে পটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ওই মুহূর্তে সে আমার ভালো বন্ধু মাত্র। কাঁদতে দেখে অথবা শুনে মজনু এসে বলল, এটা কোনো ব্যাপার না। সে আমাকে হেল্প করবে। আমি চাইনি সে আমার প্রতি দুর্বল হোক। মজনুকে সেই মুহূর্তে যে সবচেয়ে ভালোবাসে, তাকে বললাম, আমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। জানতাম, কথাটা মজনুর কানে যাবে। গিয়েছিলও। তার চোখেও আশাভঙ্গের কষ্ট দেখতে পেলাম।

ওদিকে আরেক দিন। নিচে নামতেই একজন হোস্টেলের এক আপুকে ডেকে দিতে বলায় তাকে ডেকে দিলাম। এরপর থেকে প্রতিদিন সেই লোক নিচে বসে থাকে। ইচ্ছা আমার সঙ্গে কথা বলবে। কী কুক্ষণে তাকে নিজের নামটা বলে দিয়েছিলাম। ফুল, কার্ড আসতে থাকে। আমি রাগে গজরাই। আর ভয়ে আমার কোনো ভিজিটর এলে আর নিচে নামি না। বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যেতেও ভয় পাই। কোনো অঘটন ঘটার ভয়ে।

বন্ধুরা সাহস দেয়। আমিও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করি। বাইরে যাওয়া শুরু করি তাদের সঙ্গে। মাঝেমধ্যে রুমে ফিরে দেখি কার্ড বা ফুলগুলো ডেস্কে সাজানো। যেটা আমি হোস্টেলের গেটের লোকদের ফেলে দিতে বলেছি। জিজ্ঞেস করলে বান্ধবী বলে, সে-ই সাজিয়ে রেখেছে, তার কাছে ভালো লেগেছে বলে। আমি আর কথা না বলে অন্যদের সঙ্গে বাইরে যাই।

একদিন বাইরে যাওয়ার আগে কিছু জিনিস খুঁজতে গিয়ে দেখি আমার মেকআপ, লিপস্টিকসহ বেশ কিছু জিনিস কাবার্ড থেকে মিসিং। খোঁজাখুঁজির সময় বান্ধবী তার পার্স থেকে আমার জিনিস বের করে দেয়। বলে, সে নিয়ে ব্যবহার করেছে। কাবার্ডে রাখতে ভুলে গেছে। আমার একটু খটকা লেগেছিল। আমি তাকে আমার কাবার্ড ধরার অনুমতি কখনো দিইনি। চাইলে নিজেই দিতাম। তার মানে সে আমার পার্সোনাল জিনিসে না বলে হাত দেয়। মনে মনে ভাবি, কী ভাবছি! ভালো বন্ধু আমরা। ধরেছে অসুবিধা কোথায়। মনকে বুঝিয়ে বাইরে চলে যাই। পড়া শেষ করতে হবে। এত ছোট জিনিস নিয়ে ধরলে চলে!

আমি মজনুর সঙ্গে পড়তে যাই। তত দিন আমি খানিকটা মানসিক যন্ত্রণা সামলে উঠেছি। মজনু আর আমার সম্পর্কের পার্থক্য এসেছে। ওর সামনেই একদিন এল শেষ চিঠি। আমি টেনশনটা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু অস্বীকার করি কীভাবে? মজনু জানে, কেউ তো আমাকে চিঠি লিখত। ভালোবাসত। আমি পারিনি, সেটা আমার অক্ষমতা। আমাকে ভালোবাসার জন্য মজনুকে কম অপমান সহ্য করতে হয়নি। আবার এই চিঠির জন্য মজনুও আমাকে কম অপমান করেনি। কিন্তু মজনুর কথা ছিল, সে অন্য মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে না। তত দিনে মজনুকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। অপমান হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। মাথা ঠোকার চেয়ে আর পরিত্রাণ নেই। কেউ আমাকে সাপোর্ট দেবে না। ছেলেরা মজনুকে পছন্দ করে না। চায় না আমি তার সঙ্গে মিশি। মেয়েরা তার সঙ্গের জন্য উন্মুখ। আমি এক সমুদ্র থেকে অন্য সমুদ্রে হাবুডুবু খাই। নাকের জল, চোখের জলে নিজেই ডুবে যাই। আবারও সেই অসহায়!

চলে এল ছুটির দিন। বান্ধবী বলে, নূপুর আমার বয়ফ্রেন্ড বিয়ে করতে রাজি ফাইনালি। মেয়ের বাপের ঢাকায় বাড়ি হতে হবে। আমার পরিচিত লোকাল মেয়ে আছে। আমি বললাম সাহায্য করতে আপত্তি নেই! সেই এক মাস ছুটির যন্ত্রণায় যাব না। তারপর প্রতিদিন শুনি মজনু আমার তার প্রেমিকাদের সঙ্গে সবার অগোচরে মিলিত হয়। সে আমায় কিছু বলে না। আমার বান্ধবী তার বয়ফ্রেন্ডের নম্বর দেয়। কথায় কথায় বলে সে নাকি আমাকে তার ক্যান্ডিডেট ভেবেছে। তাকে জানাই, ক্যান্ডিডেট আমি নই, আমার পরিচিত। বান্ধবীর গোঁজামিল উত্তর আমাকে সন্তুষ্ট করে না। কারণ, সে জানে আমাদের মাঝে কথা হয়েছে পরিষ্কার। অন্য মেয়ের জন্য ঘটকালি আমি করতে রাজি হয়েছি সে আমার বন্ধু বলে! কিন্তু ক্লিয়ারলি সে মেয়ে আমি নূপুর নই।

আমার বাসা থেকে বের হওয়ার পারমিশন নেই। তারপরও অনেক বলেকয়ে এক বান্ধবীর সঙ্গে বের হয়েছি একদিন। মজনুর মুখোমুখি হতে। শুধু জানতে আমাদের মধ্যে আসলে কী ঘটছে। ভালো না বাসলে মেনে নিতে পারি, অপমান আর অসম্মান নয়। সেদিনই নাকি সে আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছে। কিন্তু আমি ওর গেস্ট তালিকায় নেই! আমি তাও কিছু মনে করিনি। খুব চেয়েছিলাম মজনু কিছুক্ষণ থাকুক আমার সঙ্গে। যে পার্টিতে আমি আমন্ত্রিত নই, সে পার্টির বাহানাতেই আমার সঙ্গ দিতে সে পারেনি। ইচ্ছে ছিল আমার বান্ধবীর প্রেমিকের সঙ্গেও পরিচয় করায়ে দেব আমার মজনু হিসেবে। নিজেও পরিচিত হব। সেটা আর হয়নি। বান্ধবীর সো কল্ড প্রেমিককেও আমার কখনো দেখা হয়নি।

ছুটি শেষ হওয়ার মাঝে আমার বান্ধবীর প্রেমিককে অন্য মেয়েদের কথা বলেছি। জানিয়েছি যদি তাদের বিয়ে করার ইচ্ছা থাকে জানাতে। সে বলল, তাহলে তো ছুটি শেষে আপনার সঙ্গে আর কথা হবে না। ভদ্রতা করেই জানালাম, জানাব আপনাকে। জানিয়েছিলাম।

আর সেটা ছিল আরও একটা ভুল। মজনু আসলে মেয়েঘেঁষা। সেদিন দুপুরে পাঁচ মিনিটের জন্য তার সাক্ষাৎ আমি পেয়েছিলামও। বান্ধবীর সামনেই সে যা বলছিল, কৃপ্টিক মনে হচ্ছিল। যতটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম, তাতে বুঝেছিলাম, কথাগুলোর উৎস আমার সেই প্রিয় বান্ধবী, আমার অবাক হওয়ার আরও অনেক বাকি। আমার বোকামির খেসারত দেওয়া বাকি।

আমার ক্ষতির ছকটা তখনো চলছে। বান্ধবীকে ফাইনালি সামনে পেয়ে জানালাম, আমার সঙ্গে ওর সোকল্ড বয়ফ্রেন্ড যেভাবে কথা বলেছে, আমি তার অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারছি না। এটা ক্রসিং লাইন। আমার মাও তাকে সেদিন বকেছিলেন। শোধ নিতেই কি না জানি না, বললেন সেই ছেলের সঙ্গে কথা বলে আজ ক্লিয়ার করতে হবে সব। আমিও রাজি হলাম। ক্লিয়ারই তো ভালো। ল্যান্ড লাইনের দিনে আরেক বান্ধবীর বাসায় ক্লিয়ার করলাম, আমি তার বন্ধুর প্রেমিকা নই, হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ফেরার পথে আমার বান্ধবী শুরু করল ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিং। হিস্টেরিক কান্নার সঙ্গে অনুযোগ অভিযোগ...সেই বান্দা এখন গিয়ে সেলফ মিউটিলেট করবে। কেন আমি তাকে না বললাম! আমি বুঝতে পারলাম না কেন? সেটাই তো জাগানোর জন্য ফোনটা ছিল। মাঝরাত পর্যন্ত কান্নাকাটি আর অনুরোধ, প্লিজ তুমি ‘হ্যাঁ’ বলো, ওরে বাঁচাও, আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।

আমার অবস্থা তখন আরও সঙিন। যেন দোষটা আমারই! আমারই জন্য আমার প্রিয় বান্ধবী পাগলের মতো কাঁদছে। ওদিকে এক সাইকো হাত-পা কেটে রক্তাক্ত। কিন্তু এ থামানোর উপায়?

আপনি হলে কী করতেন? আমার তখন যেটা উচিত মনে হলো সেটা করলাম। আমি ছেলেটাকে ‘হ্যাঁ’ বললাম সেই মুহূর্তে। সেটাই সেই ব্যক্তির সঙ্গে আমার শেষ কথা। আমার বান্ধবীর কান্না ভোজবাজির মতো উধাও হলো। আমার মাত্র শুরু। বাস্তবে ফিরলাম তখনই। ভাবছি এটা আমি কী করলাম! চিনি না, জানি না একজনকে বান্ধবীর পাল্লায় পরে কেন ‘হ্যাঁ’ বললাম। ভালো তো বাসি শুধু মজনুকে। কান্না কাকে বলে, শুরু হলো আমার!

এদিকে মজনু আমাকে যত অপমান করুক, মজনুর জন্য আমি পাগল। শুধু জানি না আমার বান্ধবীর সঙ্গে মিলে সেও আমাকে নিয়ে খেলছে কি না! অথচ মজনু আমার লাপাত্তা হয়ে আছে। আমার ওর সঙ্গে কথা বলতে হবে। জানাতে হবে, কীভাবে আমি স্ক্রুড! আমার বাঁচামরার প্রশ্ন। মনে হচ্ছে আমি বোকা? অপদার্থ? খেলছি সবাইকে নিয়ে? না আমার সঙ্গে এটাই হওয়া উচিত?

আমি মজনুর কাছে ভয় আর লজ্জার মাথা খেয়ে সব জানালাম। মজনু আর আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী আমার সামনে নয়, পেছনে কী কথা বলল, সৃষ্টিকর্তা জানেন। রায় হলো আমার, আমি ছেলেধরা। মজনুকে বাকি সব মেয়ের থেকে দূরে রাখার চাল হিসেবে মজনুকে প্রেমের মিছে ফাঁদে ফেলেছি। আমি হয়ে গেলাম ভিলেন দ্য গ্রেট। বিশাল হারামি, যে ছেলেদের নিয়ে খেলে!

এখন আমার কাঁদারই পালা। কান্না দেখে সবাই জানতে চায়, কী হয়েছে? তখনো বান্ধবীকে এত বিশ্বাস করি। বললাম, আমি নিজেও ঠিক জানি না, বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করো। কী বিশ্বাস আমার আর কী বলছে আমার বান্ধবী। যার আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্যতাই ছিল না। শুনেছি বান্ধবী সবাইকে বলেছে, আমি কত বড় ছিনাল। আমার একসঙ্গে তিন-চারজনের সঙ্গে প্রেম। তারপরও মজনুকে ঘুরাই। তাই মজনুর সঙ্গে ব্রেকআপ!

আমি ট্রাপড নই, ছিনাল। তাই মজনুর করা বদনামও শুনি!

কে আমাকে বিশ্বাস করবে? আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড আর আমার মজনু আমার বিপক্ষে বললে! সবার বিপক্ষে গিয়েই তো প্রেম করেছি ওর সঙ্গে। চামচিকার লাথি গর্তে পড়লে হজম তো করতে হবেই।

এই বান্ধবীর হাঁপানির টান উঠলে আমি নূপুর গরম শর্ষের তেল ডলে দিয়েছি। মজনু তাকে জনসমক্ষে ভুলে কোলে তুলে নিলে আমাকেই রেফারি হতে হয়েছে। নিজের কষ্ট আর অসম্মান মেনে হাসিমুখে।

ওই বান্ধবী আর মজনু একটা শান্ত, ভিতু, ভদ্র মেয়ের বদনাম করার শাস্তি কি পেয়েছিল কখনো? নূপুরের সারা জীবনের অহংকার ছিনিয়ে নেওয়ার অনুশোচনায়, অনুতাপে পুড়েছিল কখনো। আনুগত্য আর ভালোবাসা ছাড়া তো নূপুর তাদের কিছু দেয়নি। নূপুর জানলও না, কেন তাকে তাদের দাবার গুটি হতে হয়েছিল। নিষ্ঠুরতার স্বীকার সে? নাকি সে ছিল নূপুরের সরলতা আর ভালোবাসার শাস্তি?
(চরিত্রগুলো কাল্পনিক)

শারমীন বানু আনাম: আটলান্টা, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।