আজ শুক্রবার সকাল থেকেই দ্বার খুলবে বইমেলার


Dhaka | Published: 2020-02-07 18:59:02 BdST | Updated: 2024-05-19 07:08:59 BdST

এবার মেলায় কোন ধরনের বই বেশি প্রকাশ হচ্ছে, কিংবা পাঠকের আগ্রহ বেশি কোন বিষয়ে, তা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে গত পাঁচ দিনে প্রকাশিত বইগুলোর তালিকায় চোখ রাখলে দেখা যায়- কবিতা এগিয়ে। তবে কবিতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, প্রবন্ধের ভিড়ে আলাদা করে নজরে আসছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বই। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ বলে কথা। লেখকের আগ্রহ বোধহয় সে কারণেই অনেকখানি বেশি।

বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক বই প্রকাশ হচ্ছে। তবে সবক'টির তথ্য নেই বাংলা একাডেমির ভান্ডারে। তাদের হিসাবে, গত পাঁচ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৩২টি। সংখ্যাটি যে ক্রমেই বাড়ছে তা ধারাবাহিকতায় চোখ রাখলেই বোঝা যায়- ১, ৩৭, ৮১, ৯৫ এবং ১১৮। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮১টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উপন্যাস ৬৯টি। ৩৩টি গল্পের বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে ১৬টি প্রবন্ধের বই। মুক্তিযুদ্ধ এবং শিশুতোষ বই রয়েছে ১৪টি করে। ১০টি করে বই গোয়েন্দা এবং ইতিহাস বিষয়ে।

 

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৫টি বই প্রকাশের তথ্য থাকলেও প্রকৃত চিত্রটা একেবারেই উল্টো। বেশিরভাগ প্রকাশনীতেই বঙ্গবন্ধুর কমবেশি বই দেখা গেছে। পুরোনোর চেয়ে নতুন বইয়ের সংখ্যাই বেশি। গতকালও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সর্বোচ্চ বিক্রীত বই বঙ্গবন্ধুর লেখা তৃতীয় গ্রন্থ 'আমার দেখা নয়াচীন'। সোহরাওয়ার্দী অংশে বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নের এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, বঙ্গবন্ধুর বইটির ধারেকাছে আর কিছুই নেই। অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে বইটি।

গতকাল মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় কিছুটা কম ছিল। তবে বইয়ের আশপাশেই ছিলেন সবাই। সন্ধ্যার পর প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে সারাক্ষণ দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল। বই বিক্রি হোক বা না হোক, পাঠকের নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়া আর তাদের সম্ভাষণে ব্যস্ত সময় কেটেছে বিক্রয়কর্মীদের। শিশু চত্বরেও ছিল দেখার মতো উপস্থিতি। সিসিমপুর, ইকরি মিকরিসহ বিভিন্ন স্টলে শিশুরা পছন্দের বই কিনতে ভিড় করে মা-বাবার হাত ধরে। এবার মেলা শুরুর প্রথম পাঁচ দিনে কোনো ছুটির দিন ছিল না। বৃহত্তর পরিসরে মেলা হওয়ায় শুরুর দু'দিন সবকিছু যেন খাঁ খাঁ করছিল। তৃতীয় দিন থেকে মেলায় পাঠকের আনাগোনা বাড়তে থাকে। চতুর্থ দিনে রীতিমতো উপচেপড়া ভিড় ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনের অর্ধেক অংশে। গতকাল লিটলম্যাগ চত্বরে পাঠকের আনাগোনা ভালোই ছিল। প্রিয় পাঠকের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে অনেক লেখককে।

শিশুদের জন্যে সিসিমপুর :চলছে গাড়ি, সিসিমপুরে- স্লোগানটির সঙ্গে পরিচিত নয় এমন শিশু-কিশোর পাওয়াই যাবে না। আজ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শিশুপ্রহর। ছুটির দিনে শিশুদের জন্যে মেলাপ্রাঙ্গণে হাজির হচ্ছে সিসিমপুরের সেই প্রিয় চরিত্রগুলো। তারা শিশুদের সঙ্গে মিশবে, খেলা করবে। দিনে মোট তিন বার সিসিমপুরের চরিত্রগুলোর সন্ধান পাওয়া যাবে।

শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় অমর একুশে উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। মেলা চলবে বিরতিহীনভাবে রাত ৯টা পর্যন্ত। শিশুপ্রহর ঘিরে মেলা জমে ওঠার প্রত্যাশা করছেন আয়োজকেরা।

 

প্রকাশকরা আশা করছেন, আজ শুক্রবার থেকে মেলা জমে উঠবে। বইমেলা ঘিরে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে তোলা নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ইতোমধ্যে নানা মহলে নন্দিত হয়েছে। খোলামেলা ছিমছাম পরিবেশে পাঠকের বাড়তি উপস্থিতিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। শিশুপ্রহরের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বয়সী পাঠকের আনাগোনা আজ থেকে বাড়তে শুরু করবে। এ ছাড়া সামনে পহেলা ফাল্কগ্দুন এবং ভালোবাসা দিবস রয়েছে। দিন যত ঘনিয়ে আসবে, মেলা ততই জমজমাট হবে।

গত বছর থেকে শিশু চত্বর স্থানান্তর হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে একটু এগোলে হাতের ডানেই পড়বে শিশু চত্বর। অন্যান্য স্টলেও শিশুদের বই পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখানে শুধুই শিশুতোষ নানা বইয়ের পসরা। শিশুদের জন্য এবার রয়েছে বিভিন্ন আয়োজন। যেমন খুশি খেলাধুলা করতে পারবে তারা।

সিসিমপুরের বিক্রয়কর্মী মঞ্জুরুল আলম বুলবুল জানান, ছুটির দিন উপলক্ষে আজ তাদের ব্যতিক্রমী আয়োজন থাকছে। সকাল সাড়ে ১১টা, বিকেল সাড়ে ৩টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা- তিন দফায় থাকছে অনুষ্ঠানমালা। খোদ সিসিমপুরের চরিত্রগুলো হাজির হবে আজ। শিশুদের সঙ্গে তারা মিশবে, নানারকম খেলা দেখাবে। প্রতিটি অনুষ্ঠান ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে গতকাল ১১৮টি নতুন বইয়ের নাম জমা পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- হাসান আজিজুল হকের 'রাজনীতির অলিগলি' (কথাপ্রকাশ); নূহ-উল-আলম লেনিনের 'রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব' (বাংলা একাডেমি); মোশতাক আহমেদের 'জোছনা রাতের জোনাকি' (অনিন্দ্য প্রকাশ), সিরাজুল ইসলাম মুনিরের 'বঙ্গবন্ধু হৃদয়ের গহীনে' (আগামী); আহমাদ মোস্তফা কামালের 'বড়োদের গল্প যেমন হয়' (নাগরী); সৈয়দ শামসুল হকের 'শ্রেষ্ঠ কিশোর কবিতা' (শোভা প্রকাশ); ড. এম আবদুল আলীমের 'ভাষাসংগ্রামী এম এ ওয়াদুদ' (কথাপ্রকাশ), ফারজানা মিতুর 'মুখোশ' (নালন্দা); মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'মিতু তিতুর সাবমেরিন' (বিদ্যাপ্রকাশ); আনিসুল হকের 'গোয়েন্দাসমগ্র' (অনন্যা), মহাদেব সাহার 'তোমার পায়ের শব্দ' (অনন্যা); রিজিয়া রহমানের 'রাজনৈতিক ও সামাজিক উপন্যাস' (ইত্যাদি); জহুরুল হকের 'নিষিদ্ধ নিশ্বাস' (জাগৃতি); মোহাম্মদ শাহ আলমের 'উটপাখি উড়ছে' (ইকরি মিকরি); স্বকৃত নোমানের 'টুকে রাখা কথামালা' (বিদ্যাপ্রকাশ); সিসিমপুর থেকে 'আগুন ও হালুমের পায়েস' এবং 'ইকরিদের নতুন খেলা'।

মেলামঞ্চে যা হলো : বিকেলে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নূহ-উল-আলম লেনিন রচিত 'রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহীত উল আলম। আলোচনায় অংশ নেন আসাদ মান্নান এবং সাহেদ মন্তাজ। লেখকের বক্তব্য দেন নূহ-উল-আলম লেনিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ হাসান ইমাম।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি ইকবাল আজিজ, কবি ঝর্ণা রহমান, কবি ফারুক মাহমুদ ও কবি মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, মীর বরকত এবং নাজমুল আহসান। সংগীত পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার, কোহিনুর আক্তার গোলাপী, লতিফ শাহ, রুশিয়া খানম ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দীপক কুমার দাস (তবলা), রতন কুমার রায় (দোতারা), আবদুস সোবহান (বাংলা ঢোল) এবং সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড)।

গতকাল লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জসিম মল্লিক, অনন্ত উজ্জ্বল, হানযালা হান এবং মন্দিরা এষ।

আজকের আয়োজন : বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সৈয়দ শামসুল হক রচিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা এবং এর অনুবাদ 'বালান্ড অব আওয়ার হিরো : বঙ্গবন্ধু' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। আলোচনায় অংশ নেবেন খায়রুল আলম সবুজ এবং আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।