ঐতিহাসিক মুজিবনগরে ঘুরে আসুন মাত্র ৮০০ টাকায়


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2017-12-16 07:44:44 BdST | Updated: 2024-05-19 03:28:04 BdST

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রতিরোধের প্রথম প্রহর মুজিবনগর। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সরকার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আম্রকাননে যাত্রা শুরু হয় স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র কাঠামোর। গৌরবের স্মৃতিময় এই আম্রকাননে পরবর্র্তীকালে স্থাপন করা হয়েছে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিন সপ্তাহ পর বৈদ্যনাথতলা নামে পরিচিত বিশাল আমবাগান এলাকাকে ‘মুজিবনগর’নাম দিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে পাক হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত করতে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুজিবনগর সরকারের দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বিজয়ের এই মাসে আপনি চাইলে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন।

ইতিহাস

বাংলাদেশকে পাক হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত করতে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুজিবনগর সরকারের দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতিতে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। তাজউদ্দিন আহমেদকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। আর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।

যা দেখবেন

মূল গেট দিয়ে ঢুকে প্রথমে দেখতে পাবেন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। ৬৬ একরের বিশাল আয়তনের নান্দনিক এই কমপ্লেক্সটিতে একটি জাদুঘর, মিলনায়তন, সংলগ্ন প্লাজা, স্বাধীনতা ক্লাব, পাঠাগার, রেস্ট হাউস, হেলিপ্যাড, পিকনিক স্পটসহ নানা সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। মূল কমপ্লেক্সটি চারতলা উঁচু একটি বৃত্তাকার ভবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, যার প্রতিটি তলায় দর্শনার্থীদের জন্য প্রশস্ত করিডর রাখা হয়েছে। করিডরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে বাংলাদেশের একটি বিশাল মানচিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

কমপ্লেক্স ভবনের বাইরে কমপ্লেক্স-সংলগ্ন খোলা চত্বরে বৃত্তাকারভাবে ঐতিহাসিক ছয় দফার রূপক হিসেবে ছয়টি গোলাপ বাগান, সাতই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ, মন্ত্রিসভা, পতাকা উত্তোলন, পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য দেখা যায়। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধকালীন নানা ঘটনার ছোট্ট ভাস্কর্যগুলো যেন চোখের সামনে মেলে ধরেছে ১৯৭১-এর বাংলাদেশকে। মানচিত্র স্থাপনার ঠিক বাইরে রয়েছে ১৯৭১-এর নানা ঘটনাপঞ্জির স্মারক ম্যুরাল, আছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণরত অবস্থার ম্যুরাল, মুজিবনগর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভাস্কর্য, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানের দৃশ্য, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় গঠিত মুক্তিবাহিনীর ম্যুরাল, নিয়াজির আত্মসমর্পণের চিত্র, পাকিস্তানিদের নির্যাতনের নানা দৃশ্য। বিরাটাকার দুটি পাকা দেয়ালে লিখে রাখা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণপত্র। মুজিবনগর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হলো মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ।

মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যেখানে গঠিত হয়, সেখানে এই স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে। এর স্থপতি তানভীর করিম। ১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের ওপর মূল বেদিকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চি পুরু ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে স্মৃতিসৌধটি গঠিত। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে গোলাকার বৃত্তের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীর খুলি বোঝানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ওঠার জন্য মোট ১১টি সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধারা যে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে যুদ্ধ করেছেন ১১টি সিঁড়ি সেই ১১টি সেক্টরের প্রতীক। মিউজিয়াম এর দিকে গেলে দেখা পাবেন স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাকে গুরুত্বপূর্ণ আলোকচিত্র মাধ্যমে প্রদর্শনের জন্য মূল কমপ্লেক্স ভবনের ভেতরে মিউজিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে। মিউজিয়ামের ভেতরে ১০ জন জাতীয় নেতার তৈলচিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ২৪টি বড় আকারের তৈলচিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

কীভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকা থেকে মেহেরপুর সদরের দূরত্ব ৩১২ কিলোমিটার। সড়কপথে বিভিন্ন পরিবহনে মেহেরপুর পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। যাতায়াতের দুটি পথ রয়েছে। গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে মেহেরপুর অথবা গাবতলী থেকে যমুনা সেতু হয়ে মেহেরপুর। এরপর মেহেরপুর থেকে লোকাল বাসে চড়ে মুজিবনগর যেতে হবে। দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে জে আর পরিবহন, মেহেরপুর ডিলাক্স, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স এবং শ্যামলী পরিবহনের বাস সরাসরি যায় মেহেরপুর ও মুজিবনগর। ভাড়া ৩৫০-৫০০ টাকা। নিজস্ব বাহন নিয়ে গেলে পাটুরিয়ার ফেরি পারাপারের ঝক্কি এড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা অতিক্রম করে লালনশাহ সেতু (পাকশী সেতু) পেরিয়ে মেহেরপুর যাওয়া যায়।

টিআই/ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭