স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরগুলো


Edutubebd | Published: 2017-08-13 00:35:11 BdST | Updated: 2024-05-10 17:43:50 BdST

মফস্বল শহরেই আমার বেড়ে ওঠা। নবম দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগেই পড়াশোনা করলেও এস এস সি-এর পর ভালো ইন্সটিটিউশন আর পরিবারের ইচ্ছাতেই বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হই। প্রথম প্রথম খুবই হতাশায় ভুগতাম বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বাণিজ্য বিভাগে ট্রান্সফার হওয়ার কারনে। কিন্তু আমি অনেক ভাগ্যবান ছিলাম কারন আমার সহপাঠী আর টিচাররা আমাকে অনেক অনেক সহযোগিতা করেছে।অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমি বাণিজ্য বিভাগের সব সাবজেক্টের সাথে ম্যাচ করতে পেরেছিলাম যদিও হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের দূর্বলতা কাটাতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।কিন্তু যেহেতু আমি বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো পড়ে অভ্যস্ত ছিলাম ফলে আমি সহজেই সব বিষয়ে ফলাফল করতে লাগলাম।

অবশেষে আমি আমার সেই মফস্বল এলাকা থেকে সর্ব প্রথম সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট গোল্ডেন 5 নিয়ে পাশ করলাম আর সেই সাথে বিজ্ঞান বিভাগে পরতে না পারার সব হতাশা ও ভুলে গেলাম। শুধু তাই নয় নিজের সেই ছোট্ট মফস্বল এলাকা থেকে কোচিং করেই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বারেই চান্স পেয়ে যাই আমি।সিরিয়াল আগে থাকা স্বত্বেও কেবল নিজের পছন্দের সাবজেক্টে-ই ভর্তি হই আর সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয় আমার।

যেকোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এখানে সারা দেশের প্রায় সব জেলার ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে, এমনকি বিদেশী অনেক শিক্ষার্থীরও দেখা মিলে। অসংখ্য শিক্ষার্থী, এত বড় ক্যাম্পাস, সন্ধ্যায় টি এস সি,হাকিম চত্বর, মিলন চত্বর,কার্জন হলে ছেলেমেয়েদের গলা ছেড়ে গান গাওয়া,বাঁশি- গিটারের টুঙ-টাং ,বন্ধুত্ব, হৈ চৈ, আড্ডা,প্রাক্তন বর্তমান ছাত্র-শিক্ষকের আনাগোনা সব মিলিয়ে এক মন ভালো করে দেওয়া পরিবেশ।র‍্যাগ ডে, পহেলা বৈশাখ,সরস্বতী পূজা, ২১ শে ফেব্রুয়ারি সহ যেকোন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাজে নতুন রুপে।সকাল থেকে রাত এই ক্যাম্পাস কখন ঘুমায় না, কখনো ক্লান্ত হয় না।

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল জীবনে যা হতে চাও সবই সম্ভব শুধু একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাও আগে। এখানে ভর্তি হওয়ার পর তার সত্যতা মিলল। নায়ক,গায়ক, ক্রিকেটার, অভিনেতা,ব্যবসায়ী,দেশের শীর্ষপদে আসীন হওয়া, রাজনীতিবিদদের সূতিকাগার এই বিশ্ববিদ্যালয়। আমি আরও ভাগ্যবান ছিলাম কারন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি।ছোটবেলা থেকেই হলে থাকার স্বপ্ন ছিল।বিশাল খোলা মাঠ,বিশুদ্ধ বাতাস, খোলা আকাশ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এই ইট কাঠ পাথরের ঢাকা নগরীতে কেবল এখানেই মেলে।অসংখ্য শিক্ষার্থী, তাদের প্রতীভা, মানসিকতার সাথে চলতে চলতে পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি ও নেওয়া হয়ে যায় এখান থেকে। যেকোন বিশেষ প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের গোপন প্রতিভার বিকাশ ঘটে এখানে। সব মিলিয়ে এই যে ৫ বছরের হল লাইফের অভিজ্ঞতা এটা কখনই ভোলার নয়।

তাই বলে ভার্সিটি লাইফ মানেই নির্ঝঞ্ঝাট লাইফ নয় শুধু, যেহেতু আমি বিবিএ-র শিক্ষার্থী ছিলাম তাই ক্লাস, পরীক্ষা, আস্যাইনমেন্ট, কুইজ, প্রেজেন্টেশন, মিড, সেমিস্টার ফাইনাল সব মিলিয়ে মোটামুটি ভালোই প্রেসারে থাকতে হয়েছিল।আর সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল ভাইভা,শিক্ষকদের ঝাড়ি আর বকা খাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত ছিল সবসময় সব শিক্ষার্থীদের জন্যই। যদিও ক্লাসে সব শিক্ষকই পড়াতেন চমৎকার।আমার ডিপার্টমেন্টে প্রবীণ শিক্ষকেরা ছিলেন বেশি,তাঁদের অভিজ্ঞতার ঝুলিও ছিল ভারী,ক্লাসে আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত কথা শুনতাম।যদিও পরীক্ষায় ও শিক্ষকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতার প্রমাণ রাখতেন ফলে ভালো ফলাফল অর্জনে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল আমাদেরকে।

আমি বরাবরই extra curricular activity –তে যুক্ত ছিলাম আর ভার্সিটিতে তার সুযোগ আরও বেশি হওয়ায় বিতর্ক,আবৃত্তি,রেঞ্জার,টিআইবি,ডিপার্টমেন্ট ক্লাব, ভার্সিটি ক্লাব সব কিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অসংখ্য প্রোগ্রাম আয়োজন করেছি,নানা কর্মশালায় নিয়মিত অংশ নিয়েছি। ছাত্র অবস্থায়-ই টিউশনি, কোচিং,পার্ট টাইম জব করেছি যা পরবর্তীতে অনেক কাজে দিয়েছে। সর্বোপরি এই যে পাঁচ ছয় বছরের ভার্সিটি লাইফের অভিজ্ঞতা তা তুলনাহীন।

এমএসএল