বই পড়া যদি হয় শখ কিংবা অভ্যাস, কেমন হয়?


Dhaka | Published: 2019-12-08 14:21:33 BdST | Updated: 2024-05-05 22:36:11 BdST

‘বই’ শব্দটা আমাদের অনেকের কাছেই ভীতিকর একটা শব্দ। তার উপর ‘বই পড়া’ যদি হয় শখ কিংবা অভ্যাস, ব্যাপারটা কেমন হয়? সাধারণত যারা অনেক বই পড়ে কিংবা পড়তে ভালোবাসে তাদের এক শব্দে আমরা আঁতেল বলে সম্বোধন করে ফেলি। সেজন্য বই থেকে ১০০ হাত দূরে থাকাটাই আমরা নিজেদের জন্য নিরাপদ ভেবে বসি, নাহলে পাছে লোকে আঁতেল বলে ফেলে! বই পড়া সবসময় শুধু ‘টেক্সট বুক’ নির্ভর হলে চলবে না, টেক্সট বইয়ের বাইরেও বই পড়তে হবে।

Vera Nazirian নামক নামকরা একজন লেখক বলেছিলেন,

“Whenever you are reading a good book, somewhere in the world a door opens to allow in more light.”

এর থেকে বুঝা যায়, বই পড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এত কিছু জানার পরেও আমরা বইকে শুধু কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখতেই পছন্দ করি। সে জ্ঞানকে বইয়ের ভাঁজ থেকে মুক্ত করে আমাদের ধ্যান ও জ্ঞানে বিস্তার লাভের সুযোগ দেই না। তাই আজকে লিখবো, কিভাবে ‘বই পড়া’ একটি অভ্যাস হিসেবে গড়ে তোলা যায়। আর অবসর সময় কাটানোর একটা মূখ্য উপাদান হিসেবে গণ্য হতে পারে ‘বই’।

১। যে বিষয়ে আগ্রহ:
প্রথমত তুমি যদি অতীতে, বইয়ের উপর তীব্র বিদ্বেষ পোষণকারী হয়ে থাকো এবং বর্তমানে বিদ্বেষ ভুলে সৌহার্দ্য স্থাপন করতে চাও, তবে প্রথমেই তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে কোন বিষয়ে তোমার আগ্রহ আছে। যেমন, অনেকের কাছে বাংলা পড়তে ভালো লাগে, অনেকের কাছে ভূগোল। কারো কাছে কেমিস্ট্রি ভালো লাগে, আবার কারো কাছে ফিজিক্স। তাই টেক্সট বইয়ের বাইরে বই পড়াকে যখন তুমি অভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে চাও, তখন অবশ্যই তোমাকে আগ্রহের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আবার এমন অনেকেই আছে, যাদের কোনো বিষয় পড়ার ক্ষেত্রেই আগে আগ্রহ ছিল না। তাদেরও ভয় নেই, শুরু করো রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কোনো বই কিংবা সুনীল বন্দোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ বই দিয়ে। লিও টলস্টয় এর লেখা ‘Anna Karenina’ অথবা Shakespeare রচিত ‘হ্যামলেট’ দিয়েও শুরু করতে পারো তোমার বই পড়ার দারুণ অভ্যাসটি !

২। সাথে রাখো রঙিন কলম:
বই পড়ার সময় তোমার সাথে একটি রঙিন কলম রাখো। পড়ার সময় যে লাইনগুলো তোমার কাছে ভালো লাগে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তা লাল, নীল কিংবা সবুজ কালির কলম দিয়ে আন্ডারলাইন করে রাখো। এতে বই পড়া শেষ হয়ে গেলেও রঙিন কালি দাগানো লাইনগুলো তোমার অনেক দিন মনে থাকবে। আর বই যদি নিজের না হয়ে অন্যের হয়, তবে পছন্দের লাইনগুলো কোথাও লিখে রাখো।

ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা!

৩। ধরে রাখো ধারাবাহিকতা:
বই পড়ার অভ্যাসটা মানুষের এক দুই দিনে হয় না। কেউ আছে ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস লালন করে; কেউ আছে বড় হবার পর এক দুইটা ভালো বই পড়ার পর বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর ফলে একে অভ্যাস হিসেবে লালন করে। তবে অভ্যাসটা যখন থেকেই গড়ে উঠুক না কেন, তোমাকে সবসময় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। অন্ততঃ প্রতি মাসে একটা ভালো বই পড়ার চেষ্টা করো। একজন মানুষের সুন্দর ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে ভালো বই পড়ার মাধ্যমে। আমেরিকার বিখ্যাত প্রবন্ধকার Waldo Emerson বলেছেন,
“If we encounter a man of rare intellect, we should ask him what books he reads”

৪। এত বই কিনবো কিভাবে!:
সদ্য কেনা নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়া আর নতুন বইয়ের ঘ্রাণের আবেদন কখনোই ফুরাবে না।তবে ই-বুক বা পিডিএফ ফরম্যাটের বইয়ের চাহিদাও দিন দিন বাড়েছে। বই রাখা নিয়ে ঝামেলা যেমন নেই তেমন মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ বা পিসিতে বসে পড়ে ফেলা যায় সহজেই। একটা মেমোরি কার্ডে রাখা যায় হাজার হাজার বই। যারা ই-বুক, পিডিএফ ফরমেটে বই পড়তে ভালোবাসো, সেইসব বইয়ের পোকাদের জন্যই ফ্রি বইয়ের ঠিকানা নিচে কয়েকটি লিংক দিয়ে দিলাম
https://www.amarboi.com/

https://www.sovietbooksinbengali.com/

https://www.allbdbooks.com/viewbook/B/1182/

https://www.thebanglabook.com/

ঘুরে আসো অনলাইন বইয়ের জগৎ থেকে। ডাউনলোড করে নাও প্রিয় বই, প্রয়োজনীয় বই। কিন্তু তারপরেও যাদের নিজ হাতে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে বই পড়ার অভ্যাস তাদের জন্য নীলক্ষেত তো আছেই! সেখান থেকে পছন্দ মত বই কিনে পড়ে ফেলো। আর ভুলে যাবে না বিখ্যাত সেই উক্তি, “বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয় নি।”

৫। নিজেকে জানার অন্যতম মাধ্যম:
“Reading a book is like re-writing it for yourself.” এর মানে হলো ভালো বই পড়ার মাধ্যমে তুমি নিজেকে আরও ভালোভাবে জানতে পারবে। যখন তুমি বই পড়বে, পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে তা বুঝে পড়ার চেষ্টা কর। কারণ সেটা না করলে, লেখক যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা হয়তো তুমি বুঝতেই পারবে না। প্রতিটা বই থেকেই নতুন কিছু না কিছু জানবে। আর এই নতুন সব জ্ঞানের সমষ্টিই হল তোমার ব্যক্তিত্ব। ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা!

পৃথিবীর সব মানুষ তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও বই সব সময়ই তোমার পরম বন্ধু হয়েই থাকবে। ফরাসী লেখক দেকার্তে বলেছেন, “এক জীবনে ভালো কিছু বই পড়তে না পারলে, সে জীবনই বৃথা।” আমরা প্রতিদিনের ব্যস্ত সময়ের মাঝে খুব কম সময়ই অবসর পাই। আর এই অবসর সময়টা নাহয় কাটুক টেক্সট বইয়ের বাইরে ভালো কিছু বই পড়ে। হতে পারে সে বই ইতিহাস, দর্শন, সাইকোলজি, সায়েন্স ফিকশন, থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অথবা নজরুলের উপন্যাসের বই। বই পড়ে তুমি যে জ্ঞান অর্জন করবে, সে জ্ঞান কখনোই তোমার জীবনে বৃথা যাবে না। প্রতিটা বই তোমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে। সেজন্যই হয়ত ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ফ্যান্টাসি এওয়ার্ড পাওয়া Neil Gaiman বলেছেন,

“A book is a dream that you hold in your hand.”