রাষ্ট্রীয় নিমন্ত্রণে তুরস্ক ঘুরে এলেন ঢাবি ছাত্রী নওশীন


ঢাবি টাইমস | Published: 2018-03-31 22:09:20 BdST | Updated: 2024-05-21 02:01:33 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সম্মানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন নওশীন জাহান ইতি। ফলে রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে গিয়েছেন তুরস্কে। সে দেশে নানা কিছু দেখেছেন, শিখেছেন...

অপরূপ ইস্তাম্বুল এক বিকেলে প্রথম আমার মন কেড়ে নিল। সেদিন আমরা অটোম্যান সুলতানদের প্রধান রাজপ্রাসাদ টপক্যাপি প্যালেস দেখতে যাচ্ছিলাম। বাসের কাচের জানালা দিয়ে দেখি, নৌকায় চড়ে বড়শি দিয়ে সি অব মারমারা’তে মাছ ধরছেন জেলেরা। কোথাও ট্রলার চলছে। সেই ভালো লাগার আমেজ নিয়েই পৌঁছে গেলাম ১৪ থেকে ২০ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত তুরস্ক শাসন করা সুলতানদের বাসভবনে। প্রথমেই রাজবংশের নারীদের হেরেমগুলো দেখলাম। সেগুলো যেন অন্ধকার, সভ্যতার আলো পৌঁছায়নি।

এরপর মূল প্রাসাদ ঘুরে বেড়ালাম। দেয়ালে, বিভিন্ন স্থানে সুলতানদের তলোয়ার, তীর-ধনুক, বর্ম, পাগড়িসহ নানা কিছু সংরক্ষিত আছে। প্রাসাদের কিনারে এসে দাঁড়ালাম। ইউরোপের সীমানায় দাঁড়িয়ে চোখে পড়ছে সাগরের অন্য পারের এশিয়া, সাগরের মাঝে মাথা উঁচু করে আছে আজারবাইজানের ‘মেইডেন টাওয়ার’। ইউরোপ ও এশিয়াকে জোড়া দেওয়া ‘বসফরাস ব্রিজ’ও চোখে পড়ল। এরপর সান্ধ্যভোজের নিমন্ত্রণে গেলাম। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করলেন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক করপোরেশনের (ওআইসি) নারী উপদেষ্টা কাউন্সিলের প্রধান ড. এসরা আলবায়রাক। তুরস্কের পারিবারিক ও সামাজিক নীতিমন্ত্রী ড. ফাতেমা বেতুন সায়ান কায়াও ছিলেন। তাঁদের ভাষণের পর পরিচিতি পর্ব, ডিনার পার্টি।

তখন তুরস্কের সুপ্রাচীন সুর বাঁশিতে বেজে পুরো হলরুমে মধ্যযুগের আমেজ ছড়াচ্ছিল। ফেরার পরে প্রত্যেককে তুরস্কের বিখ্যাত ‘তার্কিশ ডিলাইট’ উপহার দেওয়া হলো। এটি তুরস্কের বিখ্যাত পারিবারিক খাবার। কেক, পেস্ট্রিসহ অনেক কিছু থাকে। ভীষণ ঠাণ্ডায় প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলাম। তবে তুরস্ক দেখা শেষ হলো না। পরদিন এই ‘মসজিদের শহর’ ঘুরে বেড়ালাম। পথের একটু দূরে দূরে একেকটি মসজিদের স্থাপত্যশৈলী এত অনন্য, যে দেখে মনে হয় প্রতিটিই ছোট ছোট রাজপ্রাসাদ। এভাবেই ঘুরে, কর্মশালা করে দিন কাটছিল। এবার একটু নিজের গল্প বলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিএসএস সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছি। ফলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মনোনীত হয়ে তুরস্কের পারিবারিক ও সামাজিক নীতি মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এ দেশে এসেছি। ওআইসির আরো ৪৪টি দেশের তরুণ মেধাবী মেয়েরাও এসেছেন। এই দেশগুলোর বিখ্যাত লেখক, রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা, মানবাধিকারকর্মীরা তাঁদের জীবন ও সংগ্রাম আলোচনা করে আমাদের নতুন এক জীবনের গল্প বলেছেন। এই কর্মশালায় বৈশ্বিক নানা সমস্যা ও সেগুলো থেকে বেরিয়ে এসে শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আমাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হলো। আমরা তুরস্কের স্পিকার ইসমাইল কাহরামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। সে দেশের বিখ্যাত ‘দ্য ফাউন্ডেশন ফর পলিটিকস, ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ’ নামের প্রতিষ্ঠানেও গেছি।

রাষ্ট্রপতির বাসভবনে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান আমাদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন এবং সবাইকে সার্টিফিকেট প্রদান করেন। ফলে ভ্রমণের পাশাপাশি নানা বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও আলোচনা হয়েছে। সপ্তম দিনে ‘হাজিয়া সোফিয়া’ ও ‘ব্লু মস্ক’ (নীল মসজিদ) দেখে চমকে গেলাম। হাজিয়া সোফিয়া প্রথমে ছিল খ্রিস্টানদের গির্জা, পরে রাজকীয় মসজিদ। এখন এটি জাদুঘর। ৫৩৭ সালে তৈরি এই প্রাচীন স্থাপনাটিকে বাইজেনটাইন স্থাপনার প্রতীক বলা হয় এবং একে স্থাপত্যের ইতিহাস বদলে দেওয়া স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি থাকা বিখ্যাত নীল মসজিদটিও তুরস্কের রাজধানীতেই আছে। ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে মসজিদটি বানিয়েছিলেন তুরস্কের বিখ্যাত শাসক ‘সুলতান আহমেদ ১’।

বিদেশী শিক্ষার্থীদের সাথে নওশীন

নীল প্রিয় মসজিদেই চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে আছেন তিনি। এখানে মাদরাসাও আছে। সারা দুনিয়ার পর্যটকরা এসে ব্যাকুল হয়ে নামাজ পড়েন। ভেতরের মেঝে নীল টাইলস করা, গম্বুজগুলোও নীল। তাই এই নাম। এরপর গেলাম প্রাচীন গ্র্যান্ড বাজারে। আতর, নানা গন্ধের মসলায় মৌ মৌ করছে পুরো বাজার। গলিতে, গলিতে পেঁচানো এই বাজারে সামান্য অসতর্ক হলেই হারিয়ে যাব। ফলে গাইড বললেন, ‘সোজা যাবেন।’ ‘স্যুভেনির’, ‘তার্কিশ ডিলাইট’ ও বিখ্যাত তার্কিশ ‘ব্ল্যাক টি’ ও ‘ব্যাগ’ কিনলাম। দামাদামিতে ভুল হলো না। পরের গন্তব্য ‘ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি’। ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮৮ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়েন। সুপ্রাচীন সব ভবনে তাঁদের ক্লাস হয়।

ফেরার পথে ক্যালিওগ্রাফির দোকানে থেমে স্যুভেনিরের মধ্যে নিজেদের নাম লিখিয়ে নিলাম। তবে এই যাত্রায় অন্যতম সেরা অর্জন বসফরাস সাগর ভ্রমণ। আয়োজক, মন্ত্রীদের সঙ্গে বিরাট জাহাজে জীবনের প্রথম সমুদ্র দর্শন করলাম। ডিনারে বেজেছে অটোম্যান আমলের গান। বসফরাস ব্রিজের নিচটিও জাহাজে দেখে এলাম।

কালেরকন্ঠ

বিদিবিএস