ক্যাম্পাসের কেউ যদি যায় হারিয়ে


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-04-26 06:38:37 BdST | Updated: 2024-05-21 01:34:37 BdST

জীবন খুব রহস্যময়! তারুণ্যে অনেক বেশি গতিশীল ও রঙিন হয়ে ধরা দেয়। হয়ে ওঠে অনেক বেশি স্বপ্নময়। কিন্তু এমন মুহূর্তও আসে, আসতে পারে- যেটির জন্য ভুলেও অপেক্ষা করে না কেউ; নেয় না কোনো প্রস্তুতি! তবু আসে, আসতে পারে তেমন কাল-ক্ষণ! হারিয়ে যেতে পারে খুব কাছের কেউ। হয়তো বন্ধু, হয়তো আত্মীয়। আর এ হারিয়ে যাওয়া মানে হারিয়ে যাওয়াই, একেবারে চিরতরে; তাকে ফিরে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত, তবু এমন কঠিন মুহূর্ত যদি এসে দাঁড়ায় সামনে, তখন কী করে তোমরা সামলে নেবে নিজেকে? তার কিছু বুদ্ধি জেনে নিই চলুন-

ভাবতে হবে বড়দের মতো

খুব কাছের কেউ মারা গেলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পক্ষেও তা মেনে নেওয়া কষ্টকর হয়। আর তরুণদের কাছে তো এ বেদনা হিমালয়ের চেয়ে বড় হয়ে ধরা দেয়। আর তা এতটাই কাবু করে ফেলতে পারে যে, জীবনের মানেটাই একেবারে নতুন হয়ে উঠতে পারে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা দুর্ঘটনা থেকে তোমাদের ভেতরে জন্ম নেওয়া বিষাদের অনুভূতি আপনার সাবলীল চিন্তা-চেতনাকে একেবারে ডুবিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনি হয়ে যেতে পারেন আত্মহারা। কিন্তু তবুও তো জীবন বয়ে চলে জীবনের নিয়মে। ফলে, এ রকম অপূরণীয় ক্ষতির ভেতরও বেঁচে থাকার মন্ত্রণা শিখে নিতে হবে। হতে হবে শক্ত। ভাবতে হবে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতো।

সৎ থাকুন সবার সঙ্গে

যখন আপনার কেউ মারা যাবে, তখন আপনার উচিত হবে যতটা সম্ভব নিজের এবং অন্যদের সঙ্গে সৎ থাকা। আপনি এমন সাহসী একটা ভাব করবেন, মর্মাহত হলেও ভেঙে পড়েননি; এ ক্ষতি সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আপনি রাখেন। খেয়াল রাখবেন, আপনার অনুভূতি যতটাই বেদনার হোক না কেন, সেটি যেন আপনাকে পুরোপুরি পর্যুদস্ত করতে না পারে।

দেখে নেওয়া যাক, কেমন হতে পারে আপনার অনুভূতি-

-বিষণ্ণতা।

-মর্মপীড়া।

-একাকিত্ব।

-অপরাধবোধ।

-রাগ

-ক্ষোভ।

-অনিশ্চয়তাবোধ।

-উপশম।

-হতাশা।

-মানসিক চাপ।

-অসাড়তা।

এবং এমন এক পক্ষাঘাতগ্রস্ততা- যেন কোনো সিদ্ধান্তেই পৌঁছুতে পারছেন না আপনি।

ব্যক্ত করুন অনুভূতি

আপনি যখন আপনার অনুভূতিগুলো শনাক্ত করতে পারবেন, তখন সেটি চেপে না রেখে প্রকাশ করুন অন্যদের সঙ্গে। এমন বিষাদের অনুভূতিগুলোকে নিজের মধ্যে আটকে রাখলে সেটা আপনার হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আর তার বিস্ম্ফোরণ হতে পারে ভয়াবহ।

কথা বলুন বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের সঙ্গে

জানি, একদমই ইচ্ছে করবে না, তবু এ ক্ষেত্রে আপনি প্রাপ্তবয়স্ক কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারেন। হতে পারেন তিনি আপনার শিক্ষক, কিংবা আত্মীয় কিংবা এমন কেউ- যে কি-না আপনাকে বুঝতে পারবেন। তাও যদি না হয়, তাহলে যা যা করতে পারেন আপনি-

-লিখতে পারেন জার্নাল।

-লিখে ফেলতে পারেন গান কিংবা কবিতা।

-ব্লগে করতে পারেন লেখালেখি।

-সাহায্য চাইতে পারেন অনলাইনে।

-যোগ দিতে পারেন স্থানীয় কোনো সাপোর্টিং গ্রুপে।

বাইরে যাওয়া-আসা

নিজের এমন মর্মযাতনাদায়ক অনুভূতিগুলোকে একটু রেহাই দেওয়ার জন্য বাইরে বের হতে পারেন। দৃশ্যের বদল আপনাকে ভালো অনুভূতি দিতে পারে। কখনও কখনও একটা নতুন সেটআপ পারে লাঘব করতে আপনার দুঃখ।

কিন্তু যাবেন কোথায়? বলি-

-আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে আসুন।

-ব্যায়াম করে নিজেকে ক্লান্ত করার চেষ্টা করুন।

-কোনো বই বা সিনেমাতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।

-যেতে পারেন কাছের কোনো মাঠে খেলা দেখতে।

কাছের কারও মৃত্যুশোক নিয়ে বেঁচে থাকতে অনেকটা সময় লাগবে সহজ হওয়ার জন্য, এটাই স্বাভাবিক। কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের মৃত্যুশোক নিয়ে বেঁচে থাকাটা কোনো প্রতিযোগিতা নয়; আবার এমন কিছুও নয়, যেটা আপনি ভেবে রাখবেন আগে থেকে। প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব ধারণা থাকে মৃত্যুশোক সামলে বেঁচে থাকার। ফলে, যে জিনিসটি আপনাকে সাহসী করে তোলে, যে জিনিসটি আপনার শোককে দমিয়ে দিতে আপনার ভেতরে জীবনের জয়গানকে জাগ্রত করে, সেটিকে অবলম্বন করেই চেষ্টাই করুন আপনি। জেনে রাখবেন, আপনার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যরা সম্ভবত আপনার ইশারার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই যদি তাদের একটুও দ্বিধান্বিত মনে হয়, তাহলে হতাশ হবেন না; ভেবে নিন, তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না- কী করে আপনাকে সাহায্য করবে।

বলি, একটু ধৈর্য ধরুন। হতাশ হবেন না। দেখবেন, আপনার জীবন নতুন আঙ্গিকে শুরু হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, আপনি তাদের ভুলে যাবেন। বরং, পরে দেখা যাবে, আপনি আপনার জীবনে সুখী হয়েছেন। তারা কিন্তু ঠিক এ জিনিসটিই চেয়েছিল।

আপনার মঙ্গল হোক। যত্ন নিন নিজের।

ছবিঃ জহিরুল আজিজ জয়

লেখাঃ সমকাল/বিদিবিএস